v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-09-01 18:48:14    
চীনের ই জাতির নতুন পাহাড়ী গ্রাম

cri
    চীনে মোট ৫৬টি জাতি বসবাস করেন । সংখ্যাগরিষ্ঠ হান জাতি ছাড়া আরো ৫৫ টি সংখ্যালঘু জাতি চীনের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বাস করেন । তাদের নিজের নিজের অসাধারণ বৈশিষ্ট্য এবং সংস্কৃতি ও রীতিনীতি রয়েছে । দীর্ঘদিন ধরে দেশ বিদেশী পর্যটকরা চীনের এসব সংখ্যালঘু জাতির ওপর বিশেষ নজর রেখে এসেছে । গত কয়েক বছরে সরকারের সুবিধাজনক নীতি ও পূর্ব চীনের শিল্পোন্নত অঞ্চলগুলোর সমর্থনের কল্যানে এবং নতুন সমাজতান্ত্রিক গ্রামাঞ্চল নির্মাণের উত্তাল জোয়ারে চীনের সংখ্যালঘু জাতি-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রভূত উন্নতি হয়েছে এবং সংখ্যালঘু জাতির বহু গ্রামের চেহারার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে । কিছু দিন আগে আমাদের সংবাদদাতা দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুই চৌ প্রদেশের ফান জেলা সফরের সুযোগ পেয়েছেন । তিনি নিজের চোখে সেখানকার সংখ্যালঘু জাতির গ্রামের পরিবর্তন দেখেছেন ।

    যে কেউ কুই চৌ প্রদেশের লিউ ফান সুই শহরের ফান জেলার ইয়ু নি মহকুমার পশ্চম দিকে অবস্থিত ই জাতির মা লাং চি গ্রামে আসলে গ্রামবাসীরা ই জাতির শ্রুতিমধুর গান গেয়ে গেয়ে এবং চাল দিয়ে তৈরি সুস্বাদু মদ দিয়ে অতিথিদের স্বাগত জানায় । এই গ্রাম একটি প্রাচীন ও নতুন গ্রাম । গ্রামবাসীদের পাহাড়ী গান সর্বত্রই সুনাম অর্জন করেছে । এই গ্রামের লোকেরা সবাই ই জাতির লোক । গ্রামটির লোকসংখ্যা ৭৮০জন । ই জাতির ভাষায় মা লাং চির অর্থ চারদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা গ্রাম । তার অর্থ রুদ্ধদ্বার গ্রাম । অথচ যখন আমাদের সংবাদদাতা এই গ্রামে প্রবেশ করলেন , তখন তিনি দেখতে পেলেন , পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সিমেন্টের রাস্তা সামনে এগিয়ে গেছে । পাহাড়ের সবুজ গাছপালার মাঝেমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে একের পর এক আংগিনা সহ বাড়িঘর । একটি নদী গ্রামটির ঠিক মাঝখানে দিয়ে প্রবাহিত হয় । নদীর দুই তীরে কিশোর-কিশোরীরা খেলাধুলা করছে । এটা সত্যিই একটি গ্রামের মনোরম চিত্র । এই গ্রামের পার্টি সম্পাদক তু সাও ছুয়ান আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , ২০০১ সালের আগে মা লা চি গ্রামের চেহারা কিন্তু অন্য রকম ছিল । তখন ঐতিহ্যবাহী ভাবধারা সীমাবদ্ধতায় গ্রামবাসীরা প্রধানত জমিচাষ করতো । মা লাং চি গ্রাম পাহাড়ে অবস্থিত এবং অধিকাংশ জমি হলো ধুলি বলে ফসলের উপযোগী নয় । সেই সময়ে কৃষকদের হাতে বেশি টাকা ছিল না বলে তাদের রাসায়নিক সার কেনার সার্মথ্য ছিল না । তখন জমিতে অনেক বীজ বপন করলেও বেশি ফলন হতো না । খাদ্যশস্য কেবল কৃষকদের খাওয়া-দাওয়ার জন্যে যোগাড় হতো এবং কোনো উদ্বৃত্ত থাকতো না । সেই সময়ে এই গ্রামের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ ইউয়ান । এই রকম অবস্থা বহু বছর ধরে স্থায়ী ছিল । ২০০৩ সালে ফান জেলা সরকার মা লাং চি গ্রামে আবাদী জমিতে বনায়ন প্রকল্প চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় । এই সম্পর্কে এই গ্রামের পার্টি সম্পাদক তু সাও ছুয়ান বলেছেন ,

    আবাদী জমিতে বনায়ন প্রকল্প অনুসারে এই গ্রামের ২৩৩ একর জমিতে বনায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এই ব্যবস্থার কল্যানে প্রাকৃতিক পরিবেশ স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি এই গ্রামের শ্রম শক্তিও মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে । মা লাং চি গ্রামের ৮০ শতাংশ শ্রম শক্তিকে সমাজের অন্যান্য পেশায় স্থানান্তর করা হয় । এতে কৃষকদের আয় বিরাটভাবে বেড়ে গেছে । বনায়ন প্রকল্পের অধীনে সরকার প্রতি একর জমির জন্যে কৃষকদের ৯০০ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য দিয়ে থাকে । এভাবে কৃষকদের খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা সমাধান করা হয়েছে । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে আরো বলেছেন , এই প্রকল্পের সুবাদে শুধু রাসায়নিক সারের ক্ষেত্রে কৃষকদের জন্যে প্রায় ১ লাখ ইউয়ান বাঁচিয়ে তোলা হয়েছে । এখন গ্রামবাসীদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় মোটামুটি ৩ হাজার ইউয়ানের কাছাকাছি হয়েছে । কৃষকদের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে ।

    ই জাতি একটি উত্সাহী ও অতিথিপরায়ণ জাতি । অতীতে তাদের একটি রেওয়াজ ছিল । প্রত্যেক পরিবারে ছোট বড় ঘটনা ঘটলে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের আমন্ত্রণ করে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো । কমপক্ষ এক দিন , বেশিপক্ষে তিন দিন লাগতো । তখন শিশুদের জন্মদিন , নতুন বাড়ি নির্মাণ , বিয়ে এবং বয়স্কদের মৃত্যু উপলক্ষে ফলাও করে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হতো। সেই সময়ে এসব আয়োজনের জন্যে বহু সময় ও শক্তি ব্যয় করতে হতো । একবার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করলে সাধারণত ১০ হাজার ইউয়ান অথবা তার চেয়েও বেশি ব্যয় করতে হতো । গরীব পরিবারগুলোর জন্যে এটা ছিল সত্যিই একটি মস্ত বোঝা । ২০০১ সালে মা লাং চি গ্রাম নিজের ঐতিহ্যবাহী সংসকৃতি সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক অবস্থায় বিদ্যমান সনাতন রীতিনীতি গ্রহণের পাশাপাশি সরকারের সুপারিশ অনুসারে বিয়ে ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সংক্রান্ত পরিষদ গঠন করে এবং পরিষদের বিধিমালা প্রণীত হয় । এই পরিষদ গঠনের পর গ্রামবাসীদের বিয়ে ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠনের বহুল ব্যয় ও অপচয় রোধ সম্ভব হয়েছে । এই প্রসংগে সম্পাদক তু সাও ছুয়ান বলেছেন ,

    আমাদের সুপারিশক্রমে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিয়ে ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সংক্রান্ত পরিষদ গঠিত হয়েছে । এতে গ্রামের বহুল ব্যয় ও অপচয়ের রীতিনীতির বিলুপ্তি ঘটেছে এবং কৃষকদের টাকা বেঁচে গেছে । এই ব্যবস্থায় কৃষকরা মহা খুশী ।

    তু সাও ছুয়ান আমাদের সংবাদাতাকে বলেছেন , কৃষকদের জ্ঞানার্জন ও দৃষ্টি প্রসারিত করার জন্যে মা লা চি গ্রাম ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিন বছরের মধ্যে ৩০০ জন কৃষকের জন্যে প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থা করেছে । ২০০৫ সালে বয়স্কদের মানসিক ও সাংস্কৃতিক জীবন সমৃদ্ধ করে তোলার জন্যে এই গ্রাম ৬০ বছর বয়সের লোকদের ইয়ুন নান প্রদেশের পাথরের বনে ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছে ।

    রাত হওয়ার সংগে সংগে মা লা চি গ্রামের প্রত্যেক বাড়িঘর আলোক উদ্ভাসিত । ই জাতির ঐতিহিক মশাল উত্সব উপলক্ষে অসংখ্য তরুণ-তরুণী দাউ দাউ আগুণের স্তুপের চারপাশে সমবেম হয়ে আনন্দময় পরিবেশে নাচতে শুরু করেন । তাদের গাওয়া সুন্দর ও হাল্কা গানের সুর এবং ই জাতির চালের মদের সুগন্ধ গভীর রাতে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে ।