স্থানীয় সময় ৩১ আগস্ট ব্রাজিল সফররত চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ব্রাজিলের সংসদে "বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা জোরদার ও মিলিত উন্নয়ন বাস্তবায়ন" নামে বক্তৃতা দিয়েছেন। বক্তৃতায় উ পাং কুও উল্লেখ করেছেন, লাতিন আমেরিকান দেশগুলোসহ ব্যাপক উন্নয়নশীলদেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করা বরাবরই চীনের স্বাধীন ও স্বতন্ত্র শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি। এখুন শুনুন আমাদের সংবাদদাতার ব্রাসিলিয়া থেকে পাঠানো বিস্তারিত প্রতিবেদন।
চেয়াম্যান উ তাঁর ভাষণে কিছু পরিসংখ্যান দিয়ে বাস্তব এবং সার্বিকভাবে চীন ও লাতিন আমেরিকান সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, চীন লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয় অঞ্চলের ২১টি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। সাম্প্রতিক দশ বছরে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের ৭৪ জন রাষ্ট্র প্রধান, স্পীকার এবং সরকার প্রধান পর পর চীন সফর করেছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দ ১৯টি লাতিন আমেরিকান দেশ সফর করেছেন। লাতিন আমেরিকা আর ক্যারিবিয় অঞ্চলে চীনের মোট পুঁজি বিনিয়োগ হয়েছে ৮৯৩ কোটি মার্কিন ডলার। লাতিন আমেরিকার ১৩টি দেশ চীনের সম্পূর্ণ বাজার অর্থনীতির মর্যাদা স্বীকার করেছে। ১৭টি দেশ চীনা নাগরিকদের পর্যটনের গন্তব্য দেশে পরিণত হয়েছে। "
বক্তৃতায় উ পাং কুও বিভিন্ন মহলের বন্ধুদেরকে বর্তমান চীনের উন্নয়ন সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেছেন, গত শতাব্দীর ৭০ দশকের শেষ দিক থেকে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে চীন সরকারী মালিকানাকে প্রাধান্য দিয়ে, নানা মালিকানা ব্যবস্থাসহ মৌলিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কার্যকর শুরু করে। চীন সক্রিয় এবং স্থিতিশীলভাবে রাজনৈতিক কাঠামোর সংস্কার ত্বরান্বিত করে, গণতন্ত্র সম্প্রসারণ করে, আইন প্রণয়ন স্বয়সম্পূর্ণ করে এবং সমাজতান্ত্রিক আইনানুসার দেশ গড়ে উঠে। এই ব্যবস্থা নেয়ায় ব্যাপকভাবে চীনা জনগণের সক্রিয়তা এবং সৃষ্টিক্ষমতা জেগে উঠেছে এবং চীনের উন্নয়ন দ্রুততর করেছে।
তাইওয়ান সমস্যা প্রসঙ্গে উ পাং কুও বলেছেন, চীন গণ প্রজাতন্ত্রিক সরকার চীনা জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল একমাত্র বৈধ সরকার। এটা বহু আগে থেকে জাতিসংঘ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিরঙ্কুশ স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি আশা করেন, লাতিন আমেরিকান দেশগুলো অব্যাহতভাবে চীনা জনগণের পুনরেকেত্রীকরণ সমর্থন দেবে। তিনি বলেছেন, "বর্তমানে তাইওয়ান প্রণালীর পরিস্থিতি "স্বাধীন তাইওয়ান পন্থী" বিচ্ছিন্নদাবাদী শক্তি এবং তাঁদের তত্পরতা দমন করার জন্য ইতিবাচক । দু'পারের সম্পর্ক শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীলতার দিকে বিকশিত হচ্ছে। তবে দু'পারের সম্পর্ক উত্তেজনাকর হওয়ার মূল কারণ এখনো দূর হয় নি। এই সুযোগে আমি দীর্ঘকাল ধরে স্বদেশের পুনরেকেত্রীকরণের ব্যাপারে চীনা জনগণকে মূল্যবান সমর্থন দেয়ার জন্য ব্রাজিল সহ লাতিন আমেরিকার সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে কৃতজ্ঞতা জানাই এবং আশা করি, সংশ্লিষ্ট দেশগুলো স্বাধীন তাইওয়ান পন্থী বিচ্ছিন্নদাবাদী শক্তিদের দেশ বিভক্ত করার তত্পরতার বিরোধিতা এবং এদের দমন করার ব্যাপারে চীনা জনগণকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দেবে।"
ব্রাজিলের প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার আলদো রেবেলো তাঁর ভাষণে চীনের উন্নয়নে অর্জিত সাফল্যের ইতিবাচক মূল্যায়ন করেছেন। তিনি বলেছেন, "একটি সুদীর্ঘ ইতিহাসসম্পন্ন প্রাচীন সভ্যতার দেশ হিসেবে চীন জনগণের জীপনযাপন উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং সারা বিশ্বের দৃষ্টান্তে পরিনত হয়েছে। বিশ্বের কোন দেশ দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে চীনের মতো সাফল্য অর্জন করতে পারে নি। তা ছাড়া, দেশের স্বাধীন আর পুনরেকেত্রীকরণের জন্য চীনা জনগণ নিরলস প্রয়াস এবং সংগ্রাম করে আসছেন। আয়তন, জনসংখ্যা, অর্থনীতি সব দিকে বড় একটি দেশ হিসেবে চীন ভৌগলিক রাজনীতির ভারসাম্য বজায় রাখা এবং দেশের সমতা সুরক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।"
রেবেলো বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বা বহু পক্ষীয় সম্পর্ক কেবল রাজনৈতিক ক্ষেত্রেসীমিত রাখা উচিত না। সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে , বিভিন্ন সংস্থা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পরা উচিত। চীন ও ব্রাজিলের মধ্যে কেবল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের সহযোগিতা ত্বরান্বিত করা ঠিক হবে না, বরং কূটনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রের সহযোগিতা জোরদার করা উচিত। চীন ও ব্রাজিল সহযোগিতার মাধ্যমে গোটা বিশ্বের জন্য আরো বেশি অবদান রাখতে পারে।
|