২০০৩ সালের ৯ এপ্রিল মার্কিন বাহিনী ইরাকের রাজধানী বাগদাদ দখল করার পর ইংগো মার্কিন দখলকারী কর্তৃপক্ষ ইরাকে অস্থায়ী প্রশাসন সংস্থার প্রতিষ্ঠা শুরু করেছে ।
২০০৩ সালের ১৩ জুলাই ইরাকের পুনর্গঠনকাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তি মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ব্লেমোর নির্মিত ইরাক অস্থায়ী প্রশাসন কমিটি বাগদাদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এর প্রধান ক্ষমতা হল যৌথ বাহিনী কর্তৃপক্ষের কাছে পরামর্শ ও প্রস্তাব দেয়া, অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী ও বিদেশে কূটনীতিকদের নিযুক্ত ও বদলী করা, রাষ্ট্রীয় নীতির প্রণয়ন ও রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির অনুমান বিবেচনা করা এবং সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করা, ব্লেমো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষমতা পালন করেছিলেন ।
পয়লা সেপ্টেম্বর অস্থায়ী সরকার প্রকাশিত নতুন সরকারের ২৫জন মন্ত্রীদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । একজন নারী মন্ত্রীসহ ১৩ জন শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমান,৫ জন সুন্নী সম্প্রদায়ের মুসলমান, ৫ জন কুর্দী, ১ জন তুর্কমেন এবং একজন খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী । ৩ সেপ্টেম্বর নতুন সরকারের সদস্যগণ বাগদাদে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন ।
১৬ অক্টোবর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত ইরাকের পুনর্গঠনকাজ সম্পর্কে ১৫১১ নম্বর প্রস্তাব গ্রহণ করেছে । প্রস্তাবে জোর দিয়ে বলা হয়েছে ,ইরাককে দখল করা হল অস্থায়ী, দখলকারী কর্তৃপক্ষ বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তর করবে । প্রস্তাবে ইরাকের অস্থায়ী প্রশাসন কমিটিকে ১৫ ডিসেম্বরের আগে নিরাপত্তা পরিষদের কাছে ইরাকের নতুন সংবিধান ও নির্বাচনের সময়সূচী দাখিল করার তাগিদ দেয়া হয়েছে । প্রস্তাবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি বহু দেশীয় বাহিনী প্রতিষ্ঠার কথা ও ঘোষণা করা হয়েছে ।
১৫ নভেম্বর ব্লেমো অস্থায়ী প্রশাসন কমিটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরাকের সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর করার সময়সূচী নির্ধারণ করেছেন । এ সময়সূচী অনুযায়ী ২০০৪ সালের ৩০ জুনের আগে ইরাক একটি রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রশাসনাধীন অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করবে ,তখন অস্থায়ী প্রশাসন কমিটি ও যৌথ বাহিনী কর্তৃপক্ষ ভেঙ্গে ফেলা হবে ।
২০০৪ সালের ৮ মার্চ ইরাকের অস্থায়ী প্রশাসন কমিটি বাগদাদে যুদ্ধবিরতির পর ইরাকের প্রথম অস্থায়ী সংবিধানের দলিল স্বাক্ষর করেছে, অন্তর্বর্তীকালে ইরাকের ক্ষমতার পুননির্মাণ এবং সংশ্লিষ্ট আইনগত তত্পরতার প্রতি গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রেখেছে ।
৪ এপ্রিল ব্লেমো ইরাকী প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছেন । বেসামরিক কর্মকর্তা আলি আলিভি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন ।
২৮ মে অস্থায়ী প্রশাসন কমিটি শিয়া সম্প্রদায়ের ইয়াদ আলাভীকে ইরাকের অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেছে । তা যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের সমর্থন পেয়েছে ।
পয়লা জুন আলাভী ইরাক অস্থায়ী সরকারের নাম তালিকা প্রকাশ করেছেন । একইদিন সুন্নী সম্প্রদায়ের তত্কালীন অস্থায়ী প্রশাসন কমিটির পালাক্রমিক চেয়ারম্যান গাজী ইয়াভার ইরাকের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ।
৮ জুন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইরাকের প্রশ্ন সম্পর্কে ১৫৪৬ নম্বরপ্রস্তাব গ্রহণ করেছে । ইরাকের অস্থায়ী সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এক মত হয়েছে ৩০ জুনের আগে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন ইরাকের দখলত্বের অবসান ঘটতে হবে । এর পাশাপাশি মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহু দেশীয় বাহিনী ইরাকের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার শেষ সময় পর্যন্ত সেখানে মোতায়েন থাকবে ।
১৫ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ইরাক কয়েক হাজার লোকের জাতীয় এক রাজনৈতিক সম্মেলন আয়োজন করেছে । সেবারকার সম্মেলনের মূল দায়িত্ব হল অস্থায়ী সাংসদদের নামের তালিকা নির্ধারণ করা । অংশগ্রহণকারী প্রধান পার্টির সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমে ১০০ জন সংসদীয় সদস্য নিয়ে গঠিত অস্থায়ী সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । অস্থায়ী সংসদের প্রধান উদ্দেশ্য হল ইরাকের অস্থায়ী সরকারকে তত্ত্বাবধান করা এবং ২০০৫ সালের জানুয়ারী মাসে অন্তর্বর্তকালীন সংসদের নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করা ।
|