v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-08-31 10:20:26    
চীনের কার্টুন শিল্প ক্রমেই স্বর্ণযুগে প্রবেশ করছে

cri
    চীন সরকার কার্টুন শিল্পের উন্নয়নে উত্সাহ দেয়ার কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং বলেছে, ৫ থেকে ১০ বছর পর চীনের কার্টুন ফিল্ম শিল্পের উত্পাদন মূল্য দেশের মোট জি ডি পির এক শতাংশ হয়ে দাঁড়াবে। এই হিসাবে তখন চীনের কার্টুন শিল্পের মোট উত্পাদন মূল্য হবে ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এইভাবে চীনের কার্টুন শিল্প ক্রমেই তার স্বর্ণ যুগে প্রবেশ করবে।

    কার্টুন শিল্পের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নানা বিভাগ । যেমন, কার্টুন ফিল্ম(চলচ্চিত্র), কার্টুন টেলিভিশন, কার্টুন ওডিও-ভিডিও পণ্য, কার্টুন নাটক, কার্টুন বইপুস্তক,কার্টুন পত্রপত্রিকা, বাণিজ্যিক কার্টুন ডিজাইন-সম্পন্ন পোষাক, খেলনা, ইলেকট্রনিক গেমস ইত্যাদি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকার কার্টুন শিল্পের উন্নয়নে উত্সাহ দেয়ার জন্য অনেক অনুকূল নীতি প্রবর্তন করেছে এবং এই শিল্প উন্নয়ন দ্রুততর করার সক্রিয় ব্যবস্থা নিয়েছে। গত বছর চীনের কার্টুন ছবির উত্পাদন পরিমাণ এর আগের ১০ বছরের মোট পরিমাণের সমান। চলতি বছরের প্রথম ছ' মাসে কার্টুন ছবির উত্পাদন পরিমাণ গত বছরের অনুরূপ সময়ের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেড়েছে। কার্টুন শিল্পের যাবতীয় পণ্য উত্পাদন এবং ব্যবসার পরিমাণ ক্রমাগতই বাড়ছে। কার্টুন শিল্পজাত দ্রব্য উত্পাদনের মোট মূল্য লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে।

    'নীল বিড়ালের তিন হাজার প্রশ্ন'নামক কার্টুন ছবি চীনের দুই থেকে আট বছর বয়সের প্রায় সকল শিশুর কাছে সমাদৃত হয়েছে। নীল বিড়াল সিরিজের কার্টুন ছবি কোম্পানি--সানছেন গোষ্ঠীর তথ্য বিষয়ক কর্মকর্তা নিয়ে চিনশিং বলেছেন, " এ পর্যন্ত নীল বিড়াল কার্টুন ছবির মোট ৬টি সিরিজের দু' হাজারেরও বেশি ছবি তৈরি হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে জাতীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সারা দেশের সাত শোরও বেশি টেলিভিশন কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছে। এ অনুষ্ঠানের নিয়মিত দর্শকের মোট সংখ্যা আট কোটির বেশি। টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়া ছাড়াও কার্টুনের ওয়েবসাইটেও তা দেখা যায়। প্রতিদিন ৪.৫ লাখ লোক কার্টুন দেখতে এই ওয়েবসাইট ক্লিক করেন। কোটি কোটি ছোট দর্শক 'নীল বিড়ালের' সঙ্গে আন্তরিকভাবে সংলাপ বিনিময় করে এবং নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে ।

    বর্তমানে নীল বিড়াল সিরিজের সংশ্লিষ্ট পণ্যদ্রব্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, বইপুস্তক ,খাতা, কলম, ওডিও-ভিডিও দ্রব্য , খেলনা, শিশু-পোষাক, জুতা ইত্যাদি । এ-সব দ্রব্য আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রবেশ করেছে। এগুলোর কপি-রাইট হংকং, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশ ও অঞ্চলে বিক্রী করা হয়েছে।

    এই সফলতার মূলে রয়েছে সরকারের অনুকূল নীতি। চীনের নতুন পাঁচসালা উন্নয়ন কর্মসূচি অনুযায়ী কার্টুন শিল্পের মতো উচ্চমাত্রার লাভজনক শিল্প উন্নয়ন জোরদার করা হবে। বর্তমানে ২০টিরও বেশি প্রদেশ ও মহানগরে নতুন শিল্প হিসেবে কার্টুন শিল্প উন্নয়নে বিপুল সমর্থন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পেইচিং ,সাংহাই প্রভৃতি বড় বড় শহর এই নতুন শিল্প উন্নয়নের অনুকূল নীতি প্রবর্তন করেছে এবং কার্টুন শিল্প ঘাঁটি স্থাপন করেছে।

    পেইচিংয়ের শিচিংশান এলাকা অর্থাত্ সি আর আই যেখানে অবস্থিত সেই এলাকায় বিশেষভাবে কার্টুন শিল্প উন্নয়নের ঘাঁটি স্থাপন করা হচ্ছে। শিচিংশান এলাকার উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ফেং ছুনহুই বলেছেন, "শিচিংশান এলাকায় ৩০টি কার্টুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে ।তাতে কার্টুন ছবি, তথ্যমাধ্যম এবং বইপুস্তক ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবসা চালানো হচ্ছে। আমাদের ডিজিটাল বিনোদন ঘাঁটিতে কার্টুন কেন্দ্র গড়ে তুলেছি। কার্টুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখন সক্রিয়ভাবে আমাদের ঘাঁটিতে প্রবেশ করছে।"

    এলাকার সরকার এই সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ঘরভাড়া ইত্যাদি খাতে ভর্তুকি প্রদান করে। আগামী কয়েক বছরে শিচিংশান এলাকা সরকার এই শিল্প উন্নয়নে ৫০ কোটি ইউয়ান অর্থ বরাদ্দ করেছে। অদূর ভবিষ্যতে শিচিংশান এলাকা চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্টুন শিল্পঘাঁটিতে পরিণত হবে।

    পেইচিংয়ের সুইফেং কার্টুন ছবির ডিজাইন কোম্পানি শিচিংশান এলাকায় প্রবেশ করেছে। কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা চিয়া লিছিয়াং বলেছেন, " আমার মনে হয়, শিচিংশান এলাকায় স্থানান্তরিত হবার পর আমাদের কোম্পানির সুবিধা হয়েছে। কারণ এই এলাকা হলো কার্টুন শিল্পের একটি ঘাঁটি, সরকার অনুকূল নীতি প্রবর্তন করেছে। এখানে আমার কার্টুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার বেশি সুযোগ পাই।"

    তবে চীনের কার্টুন শিল্পের উন্নয়ন মাত্র শুরু হওয়ার প্রাথমিক পর্বে রয়েছ। উন্নত দেশের তুলনায় অনেক ব্যবধান। তাই পরবর্তী কয়েক বছরে এই শিল্পের উন্নয়নে সাহায্য করার জন্য চীনের কেন্দ্রীয় অর্থ বিভাগ আর্থিক সাহায্য দেবে, যাতে কয়েকটি শক্তিশালী দেশী কার্টুন কোম্পানি সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষমতাও বাড়ানো যায়। এইভাবে চীনের বৈশিষ্ট্য-সম্পন্ন এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী কতগুলো কার্টুন শিল্পের মার্কাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায়।

    পেইচিং চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউটের কার্টুনশিল্প পরিষদের চেয়ারম্যান সুন লিচুন মনে করেন , উপরোক্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য দক্ষ কর্মী প্রশিক্ষণের জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এবং চীনের বৈশিষ্ট্য-সম্পন্ন বা চীনা জাতীয় শৈলীর কার্টুন শিল্পকর্ম সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেছেন, "আমাদের জাতীয় স্বকীয়তা-সম্পন্ন শিল্পকর্ম উন্নয়ন করতে হবে, শুধু শুধু আমেরিকানদের পেছনে ছুটলে অথবা জাপানীদের অনুকরণ করলে চলবে না, কারণ তাতে শুধু দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর শিল্পকর্ম সৃষ্টি করা যাবে। তাই আমাদের জাতির স্বকীয়তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। দ্বিতীয়ত, কার্টুন শিল্পজাত দ্রব্য বিক্রী করার পদ্ধতিও নিছক অনুকরণ নয় , বরং দেশের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে । " সুন লিচুন মনে করেন, যদিও চীনের দুই শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্টুন শিল্প কোর্স চালু হয়েছে ,তবে এটা উচ্চ স্তরের কর্মী প্রশিক্ষণের জন্য। মাঝারি ও নিম্ন পর্যায়ের কর্মী প্রশিক্ষণ দেয়াও খুব প্রয়োজন এবং কার্টুনের সংশ্লিষ্ট দ্রব্য, যেমন খেলনা, পোষাক ও স্টেশনারি শিল্পের উচিত কার্টুন শিল্পে যোগ দেয়া এবং কার্টুনের চেইন শিল্প গড়ে তোলা।