আমাদের সংবাদদাতা সম্প্রতি মধ্য চীনের হোনান প্রদেশের সিন সিয়াং জেলা সফর করতে গেছেন । সেখানে তিনি চিং হুয়া নামে এক ধনী গ্রাম দেখলেন । তিনি গ্রামবাসীদের কাছ থেকে শুনেছেন যে, চিং হুয়া গ্রাম আগে খুবই গরীব ছিল । তাদের সেই সুদক্ষ নারী কর্তা লিউ চি হুয়ার কল্যানে তাদের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে । আজকের অনুষ্ঠানে লিউ চি হুয়ার কাহিনী শোনাবো আমি শি চিং উ ।
লিউ চি হুয়ার চেহারা খুবই সাধারণ । একটু চিকন , তবে বেশ লম্বা । তিনি একজন সাধারণ কৃষক ছিলেন । ৩৪ বছর আগে এক আকস্মিক সুযোগে তিনি চিং হুয়া গ্রামের কর্তা হলেন ।
চিং হুয়া হো নান প্রদেশের সিন সিয়াং জেলার একটি গ্রাম । তার লোকসংখ্যা ৩ শ'রও বেশি। বলতে গেলে চীনে এটি একটি ছোট গ্রাম বলা চলে । ৩৪ বছর আগে এই গ্রামের জমিগুলো পতিত ছিল । গ্রামটি চীনের দরিদ্র গ্রামগুলোর অন্যতম ছিল । গ্রামটির পুরুষেরা পালাক্রমে এই গ্রামের কর্তা নিযুক্ত হয়েছিলেন । তবে তাদের কেউই গ্রামবাসীদের পেট ভরে খেতে দিতে পারেন নি । অন্য উপায় না পেয়ে অবশেষে গ্রামবাসীরা একজন মহিলাকে তাদের কর্তা হিসেবে নির্বাচন করলেন । তিনি হলেন লিউ চি হুয়া ।
যখন লিউ চি হুয়া সবেমাত্র কর্তা হিসেবে নিযুক্ত হলেন , তখন তার পরিবারের লোকেরা খুবই চিন্তিত ছিলেন । তবে বেশি দিন হতে না হতে তাঁর কীর্তি গ্রামবাসীদের অবাক করে তুলেছে । কর্তা হওয়ার পর তিনি প্রথম কাজ করেছিলেন , তা হচ্ছে এই যে , তিনি সফলভাবে গ্রামবাসীদের খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা সমধান করেছেন । তাঁর পরিচালনায় সারা গ্রামের কৃষকরা পতিত জমি আবাদ করে তাতে গমের বীজ বপন করলেন । রোজ ভোরে তিনি জমিতে গিয়ে চাষবাস করেন । গ্রামবাসীরা দেখতে পেলেন , একজন নারী গ্রামের জন্যে এত পরিশ্রম করতে পারেন । তারাও স্বেচ্ছায় তাকে অনুসরণ করে ভোরে ওঠে জমির চাষ করতে লাগলেন । পরের বছর গ্রামবাসীরা প্রথমবারের মত পেট ভরে খেতে পারলেন ।
এই মৌলিক সমস্যা নিরসনের পর লিউ চি হুয়া আরো মাথা ঘামাতে লাগলেন । তিনি বলেছেন ,
১৯৭৩ সালে আমাদের খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে । তবে কেমন করে দারিদ্র্য মোচন করা যায ? সে সময়ে আমরা ঘাসের দড়ি ও অ্যাসবেসটসের টালি তৈরির মত কিছু হস্তশিল্প চালু করলাম । ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আমরা এই কাজ করে এসেছিলাম । পরবর্তীকালে সরকারের সুবিধাজনক নীতির কল্যানে আমরা আরো ব্যাপকাকারে শিল্প স্থাপনের চেষ্টা করেছি ।
১৯৭৪ সাল থেকে লিউ চি হুয়া গ্রামবাসীদের নিয়ে ঘাসের দড়ি ও অ্যাসবেসটসের টালি তৈরি করতে শুরু করেন । তখন থেকে তারা কিছু টাকা সংগ্রহ করলেন । তারপর তিনি স্থানীয় সমৃদ্ধ সয়াবীন দিয়ে সয়াবীন জাতীয় খাবার তৈরি শুরু করেন । প্রথম বাক্সের সয়াবীন জাতীয় খাবার তৈরি হওয়র পর তিনি একাই সেগুলো বহন করে চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে গেলেন । তিনি একের পর এক দোকানে গিয়ে সেই সয়াবীন জাতীয় খাবারের পরিচয় দিলেন । এভাবে তিনি পেইচিংয়ের বাজারের দ্বার খুললেন । নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত চিং হুয়া সয়াবীন জাতীয় খাবার পেইচিংয়ের অর্ধেক বাজার দখল করেছে ।
আজ লিউ চি হুয়া চিং হুয়া গ্রামকে একটি শিল্প কোম্পানীতে পরিণত করেছেন । তার স্থিরীকৃত পুঁজি এখন ৫৮ কোটি ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে । বর্তমানে কেমন করে তার গ্রামের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে প্রীতিময় পরিবেশসম্পন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা যায় , তিনি সেই নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন । তিনি বলেছেন ,
বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার তিনটি দাবি আছে । প্রথম দুষণমুক্ত হতে হবে । দ্বিতীয় শক্তির ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে । তৃতীয় কাঁচামালের দাম কমাতে হবে । আমাদের একটি মৌলিক নীতি আছে , দুষণযুক্ত ব্যবসা আমরা করবো না ।
লিউ চি হুয়া ও গ্রামের অন্য কর্মীর একের পর এক পদক্ষেপ নেয়ায় চিং হুয়া গ্রামের চেহারা দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। গ্রামবাসীরা বলেছেন , অতীতে তারা মাটি ও ঘাস দিয়ে তৈরি ঘরে থাকতেন । এখন তারা সবাই সুন্দর সুন্দর দালানকোঠায় বসবাস করছেন । গ্রামে পাকা পাকা রাস্তাও নির্মিত হয়েছে । গ্রামের অন্য একজন কর্মী লি ইয়ু বলেছেন ,
চিং হুয়া অতিথি ভবন ও চিং হুয়া পার্ক দর্শনীয় জায়গা উভয়ই ১৯৯৩ সালে নির্মিত হয়েছে । মিনারাল ওয়াটার উন্নয়নের জন্যে গ্রামে একটি মিনারাল বিশ্রামাগারও নির্মিত হয়েছে । তিন বছরের মধ্যে আমরা তিনটি স্কুলও নির্মাণ করেছি ।
আমাদের সংবাদদাতা গ্রামবাসী তু সুইয়ে ফেনের বাড়িতে দেখতে গেলেন । তিনি দেখতে পেলেন , তার ঘরের আসবাবপত্র একেবারেই আধুনিক ধরণের । তু সুইয়ে ফেন বলেছেন , গ্রামবাসীদের বাড়ি সবই গ্রাম নির্মাণ করেছে । পানি, বিদ্যুত ও প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্যে গ্রামবাসীদের কোনো ফি দিতে হয় না । আজকের এই সম্পন্ন অবস্থার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তু সুইয়ে ফেন লিউ চি হুয়ার প্রশংসা করে বলেছেন ,
লিউ চি হুয়া দারিদ্র্য বিমোচনের জন্যে মনেপ্রাণে জনসাধারণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন । তিনি যেমন আমাদের খাওয়া-পরার সমস্যা সমাধান করেছেন , তেমনি আমাদের সচ্ছল অবস্থায় নিয়ে গেছেন । অতীতে আমরা খাওয়া - পরার সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতাম , এখন শিল্প কারখানা চালু করার ফলে আমাদের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে ।
তু সুইয়ে ফেন বলেছেন , লিউ চি হুয়ার প্রস্তাব অনুসারে ১৯৯৯ সাল থেকে কিন্ডারগার্ডেন , প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পর পর এই গ্রামে নির্মাণ করা হয় । স্কুলগুলো সমাজ থেকে প্রকাশ্যে শিক্ষকদের নিয়োগ করার ব্যবস্থা করা হয় । থাকা ও বেতনের উন্নত সুবিধার জন্যে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিক্ষকরা এখানে কাজ করছেন। ফলে চিং হুয়া গ্রামের শিক্ষিতের হার ও মান অতীতের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে ।
৩৪ বছরের মধ্যে চিং হুয়া গ্রাম একটি গরীব গ্রাম থেকে একটি ধনী গ্রামে পরিণত হয়েছে । তবে ষাট বছর বয়সের লিউ চি হুয়া এখনো ক্ষান্ত হন নি । গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার মান আরো উন্নত করার জন্যে তিনি এখনো চিন্তাভাবনা করছেন । তিনি বলেছেন ,
আমাদের মাথাপিছু আয় এখনো বেশি উচুঁ নয় । আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে প্রতি বছর গ্রামাবাসীদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ইউয়ান বাড়িয়ে দেয়া ।
|