গত ২৮ মে দক্ষিণ চীনের সেন চেন শহরে হাজারেরও বেশি ভারতীয় একটি বড় অনুষ্ঠান আয়োজন করে । তারা সেন চেনের প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র্য শিশুদের সাহায্য দেয়ার জন্য ভারতীয় খাবার বিক্রি এবং টাকা দান করেছে । তাদের মধ্যে বিশেষ করে একজন চীনা মানুষও অংশগ্রহণ করেছেন । তারা কেন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং কেন এই অনুষ্ঠানে বিশেষ করে একজন চীনা মানুষকে আমন্ত্রণ করেছে ? এবার শুনুন এই সম্পর্কে আমার অনুষ্ঠান :
এই গল্প এই চীনা মানুষ থেকে বলতে হয় । এই চীনা মানুষের নাম চাং চিয়ান কুও , তিনি সেন চেনের একটি ব্রিটিশ কোম্পানীতে কাজ করেন । গত মে মাসে তিনি তার ভারতীয় সহকর্মী লালিতের কাছে জেনেছেন যে , ভিশাল নামক একজন ভারতীয় মানুষের সেন চেনে সমস্যার সম্মুখীন হয় ।
গত বছরের অক্টোবর মাসে জীবনযাপনের মান উন্নত করার জন্য ভিশাল ও অন্য ৪ জন ভারতের বন্ধ সেনচেনে গিয়েছেন । তারা সেনচেনে একটি ভালো চাকরি খুঁজতে থাকেন , কিন্তু ভাষার সমস্যার কারণে চাকরি খোঁজা খুব কঠিন । দিনে দিনে তাদের টাকাও শেষ হয়ে যায় । ভিশালের সঙ্গে সেনচেনে যাওয়া সেই চার জন বন্ধু অবশেষে চাকরি খোঁজার স্বপ্ন ছেড়ে দিয়ে ভারতে ভিরে গিয়েছে । শুধু ভিশাল একা সেনচেনে থাকেন । তবে পরে ভিশাল নিজের পাসপোর্ট হারিয়েছে । পাসপোর্ট ছাড়া ভিশালের ভারতে ফিরে যাওয়া অসম্ভব ।এই সমস্যা ছাড়া , দেশে চিঠি ও টেলিফোন করতে অসুবিধা বলে তার নিজের দেশ ও বন্ধুদের সঙ্গের যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায় ।
এপ্রিল মাসের শেষে লালিতের ভিশালের সঙ্গে পরিচয় হয়। একদিন , ভিশালের হঠাত্ পেটে ব্যাথা হয় । লালিত ও চাং চিয়ান কুও তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান । ডাক্তার পরীক্ষার পর বলেছে যে , তাঁর যকৃত্ রোগ আছে । ভিশালকে চিকিত্সার জন্য চাং চিয়ান কুও তাঁর জন্য প্রথম কিস্তি চিকিত্সা খরচ ৩ হাজার ইউয়ান দেন । চাং চিয়ান কুও বলেন , ভিশালের গল্প শোনার পর আমি বাকি কিছুই চিন্তা করি নি , আমার শুধু এক চিন্তা আছে , তা হল তাঁকে সাহায্য দেয়া । এবং আমি ইংরেজি জানি , ভিশালের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারি , সুবিধা হবে ।
টাকা দেয়া ছাড়া , চাং চিয়ান কুও লালিতের সঙ্গে তাড়াতড়ি সেনচেনের ভারতীয় নাগরিক , ভারতে ভিশালের আত্মীয়স্বজন এবং চীনস্থ ভারত দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ,যাতে আরো বেশি মানুষের সাহায্য পাওয়া যায় ।
চাং চিয়ান কুও ও অন্য মানুষের প্রয়াসে চীনস্থ ভারত দূতাবাস দু'জন কর্মীকে হাসপাতালে পাঠায় । তারা দূতাবাসের পক্ষ থেকে চাং চিয়ান কুও ও লালিতসহ কয়েক জনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায় ।
ভিশাল দুর্ভাগ , তবে তিনি ভাগ্যবানও , এত বেশি মানুষ তাঁকে সাহায্য দিয়েছে । চাং চিয়ান কুও প্রমুখের আচরণে সেনচেনের ভারতীয় মানুষ মুগ্ধ হয়েছে । তারা বিশাল একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে , এই অনুষ্ঠানে পাওয়া সব টাকা প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র্য শিশুদেরকে দেয়া হবে ।
ভারতী রিপেস কেদিয়া সংবাদদাতাকে বলেন , এই অনুষ্ঠান আমাদের ভালোবাসার কার্নিভাল । বর্তমানে সেনচেনে মোট এক হাজারেরও বেশি ভারতী আছে । তবে সেনচেনে এই প্রথমবার এত বড় একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে । এই অনুষ্ঠানের জন্য তারা টেলিফোন , ই-ম্যাইল বা ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সব ভারতীয়দের জানিয়েছে । সেদিন সেনেচেনে প্রায় সব ভারতী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে । এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা শুধু নিজেরা মিলিত হয়েছে তাই নয় , তারাও চীনকে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করেছে । তাঁরা বলেন , তারা ভারতী , তারা সেনচেনে চাকরি করে এবং এখানে থাকে । তারা এই শহরের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করতে চায় । তাঁরা জানিয়েছে যে , এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মোট ২০ হাজারেরও বেশি ইউয়ানের টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে । আশা করে এই সব টাকা শিশুদেরকে সাহায্য করা হবে ।
চলতি বছর হল চীন-ভারত মৈত্রীর বছর । দু'দেশের জনগণের ভালোবাসা দু'দেশের মধ্যে একটি সুন্দর ভালোবাসার সেঁতু স্থাপন করেছে । ভালোবাসার সীমা নেই । বিদেশিরা চীনে চাকরি করে এবং চীনে থাকে , তাঁরা চীনের উন্নয়নের জন্য অবদান রেখেছে , চীনারাও তাদেরকে সাহায্য দিতে আগ্রহী । সবাই হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করলে আমাদের জীবন নিশ্চয় আরো সুন্দর হতে পারবে ।
|