v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-08-29 09:42:13    
দাতব্য সেবায় নিয়োজিত উজবেক জাতির গায়ক- সিয়ামিলি সিয়াকির

cri
    উত্তর- পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চীনের একটি বহুজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল । এই সব জাতির লোকেরা সাধাণতঃ নাচ গান পরিবেশেনে পারদর্শী । এদের মধ্যে উজবেক জাতির বেশ কিছু উত্কৃষ্ট গায়ক-গায়িকা রয়েছেন । আজ এই অনুষ্ঠানে উজবেক জাতির গায়ক- সিয়ামিলি সিয়াকির সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি …। একজন কৃতী গায়ক ছাড়া তিনি সক্রিয়ভাবে দাতব্য সেবায়ও নিয়োজিত । লোকজনের হৃদয়ে তিনি যেমন একজন শ্রেষ্ঠ শিল্পী , তেমনি একজন সমাজসেবীও ।

    ১৯৫৮ সালে সিয়ামিলি সিনচিয়াংয়ের ছিথাই জেলার এমন একটি পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন , যে পরিবার পরিজন নিপুণভাবে নাচ গান পরিবেশন করতে পারে । তার বাবা উজবেক আর মা উইগুর জাতির । বাসার ছ'জন ভাই বোনের মধ্যে তার স্থান চতুর্থ । এই স্ফুর্তিবাজ ছেলে ছোট বেলা থেকেই নাচ গান করতে পছন্দ করেন । যখন তার বয়স ৫ বছর , তখন ছিথাই জেলায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । বাবা তাকে কোলে নিয়ে মঞ্চে উঠলেন । সংগীত শুনে তিনি আহলাদের সঙ্গে একটানা ৩টি নাচ ও গান পরিবেশন করলেন ।

    বড় হবার পর তিনি সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে ভর্তি হন । নাচ গান পরিবেশন আর বাদ্যযন্ত্র বাজনায় অভিজ্ঞ বলে তিনি কোম্পানিতে সৈনিকদের সংস্কৃতি ও শিল্পকলার শিক্ষক হন । যখন উত্সব ও ছুটি পালিত হয় , তখন তিনি সৈনিকদের নাচ গান ও বাদ্যযন্ত্র বাজনা শেখান । সেনানিবাসের জীবনে তার হৃদয় সেনা সংগীত রচনায় উত্সাহ ও আবেগ প্রবণ হয়ে উঠেছে । দিনের বেলায় সামরিক প্রশিক্ষণে ব্যস্ত থাকেন , তাই রাতে তিনি সংগীত রচনায় নিমগ্ন হন ।

    এ পর্যন্ত 'আমি কোম্পানির গায়ক' , 'দাপানছেং-এর গল্প'সহ প্রায় দু'শো সংগীত রচনা করেছেন । তার রচিত সংগীত যেমন চীনা শ্রোতাদের তেমনি জাপান, সিংগাপুরসহ বিভিন্ন দেশের শ্রোতাদের সমাদর পেয়েছে । শ্রোতারা এই রসিক গায়ককে 'আবেগপূর্ণ রাজপুত্র' বলে অভিহিত করেন ।

    সিয়ামিলি এখন চীনা গণ মুক্তি বাহিনীর সিনচিয়াং সামরিক এলাকার সংগীত ও নৃত্য নাট্য শিল্পী দলে কাজ করছেন । তিনি একজন রাষ্ট্রীয় প্রথম শ্রেণীর গায়ক । তিনি সবসময় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সৈনিকদের কথা মনে করেন এবং মাঝে মাঝে সেনানিবাসে গিয়ে অভিনয় করেন ।

    গত ৭ বছর ধরে যখন বসন্ত উত্সব পালিত হয় , তখন তিনি সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে নাচ গান পরিবেশনে যান । এ পর্যন্ত তিনি সেনাবাহিনীতে শতাধিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন ।

    এক বছর বসন্ত উত্সবে সিয়ামিলি সীমান্ত রক্ষী সৈনিকদের নাচ গান পরিবেশন করতে গেলেন । গাড়ি পাহাড়ী পথের মাঝখানে অচল হয়ে পড়ল । তিনি পিঠে বাদ্যযন্ত্র বহন করে উপরে আরোহন করতে চেষ্টা করলেন । জুতা ঘামে ভিজে গেল । ফাঁড়িতে পৌঁছলে তিনি শীতে কাঁপতে থাকলেন । এটা দেখে একজন সৈনিক নিজের চামড়ার ওভারকোটে তাকে মুড়িয়ে দিয়ে গরম করতে চেষ্টা করলেন । সিয়ামিলি অশ্রু সজল হয়ে উঠলেন । তিনি শনশনে হাওয়ার মধ্যেও এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে সৈনিকদের জন্য গান গাইলেন ।

    নাচ গান পরিবেশন ছাড়া সিয়ামিলি গণ-কল্যাণ সেবায়ও নিয়োজিত হন । তিনি দরিদ্র পরিবারকে অর্থ সাহায্য করেন । ২০০২ সালে তিনি সিনচিয়াংয়ের উত্কৃষ্ট সমাজসেবী হিসেবে নির্বাচিত হন । ২০০৩ সালে সিনচিয়াংয়ের কাশ্ শহরে ১৮ বছর বয়স্ক উইগুর মেয়ে নামানগুলি লিউকোমিয়া রোগে আক্রান্ত হন । অর্থাভাবের দরুণ তিনি চিকিত্সা গ্রহণ করতে পারছিলেন না । এই খবর জেনে সিয়ামিলি সঙ্গে সঙ্গে ৩ হাজার ইউয়ান পাঠিয়ে দেন । পরে তিনি নগদ আরো ১০ হাজার ইউয়ান মেয়েটির চিকিত্সার জন্য প্রদান করেন । সিয়ামিলি আর অন্যান্য লোকের সাহায্যে নামানগুলির রোগ দ্রুত সেরে উঠেছে ।

    সিয়ামিলির অর্থ সাহায্যে উইগুর জাতির তরুণী রেসিদেন ইউনুসির মূত্রাশয় ট্র্যান্সপ্লান্টের অস্ত্রোপচার সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে । তিনি বলেছেন ,

    আমি আশা করি যে , সিয়ামিলির মতো শ্রেষ্ঠ সমাজসেবী যত বেশী হবে আমাদের জন্য ততই ভাল । তিনি রোগ সারানোর জন্য আমাকে অর্থ সাহায্য করেছেন এবং অবসর সময় কাজে লাগিয়ে আমাকে রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন । ফলে আমি মানসিক দিক থেকে ব্যাপক সমবেদনা ও সমর্থন পেয়েছি । আমি খুব মুগ্ধ হয়েছি ।

    সিনচিয়াংয়ের হো থিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিজিপু রহমানের পরিবার খুব দরিদ্র ছিল । তিনি শিক্ষা ফি জমা দিতে পারছেন না । সংবাদপত্র থেকে এই খবর পেয়ে সিয়ামিলি তার আমানত থেকে ৪ হাজার ৯ শো ইউয়ান নিয়ে তাকে সাহায্য করেছেন ।

    আমি এই ছেলেকে বাঁচিয়েছি । তিনি খুব মুগ্ধ হয়েছেন এবং আমার কাছে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠি লিখে পাঠিয়েছেন । তার বাবা অশ্রুপূর্ণভাবে আমাকে বললেন , আমি তো এই ছেলের বাবা । রিজিপু বিশ্ববিদ্যালয় পাস করার পর গ্রামে ফিরে চাকরি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ । গ্রামাঞ্চলের জন্য রিজিপুর মতো আরো বেশি যোগ্য কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে আমি আশা করি ।

    একদিন লিউকোমিয়া রোগে আক্রান্ত এক ছেলে সিয়ামিলির সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে সিনচিয়াং দাতব্য সমিতির মহাসচিব মালির কাছে ফোন করেছে । সিয়ামিলি তত্ক্ষণাত্ মহাসচিব মালির সঙ্গে হাসপাতালে ছেলেটিকে দেখতে গেলেন । সিয়ামিলির হাতে পুষ্পস্তবক , তিনি ছেলের সঙ্গে করমর্দন করলেন । তার চোখে ফুটে উঠল অশ্রুবিন্দু । ছেলেও কাঁদতে লাগল । তিনি অশ্রুরুদ্ধ কন্ঠে ছেলের জন্য একটির পর একটি গান গাইলেন । সিয়ামিলির মতো এমন মর্মস্পর্শী কাহিনী বেশি দেখা যায় না । সিনচিয়াং দাতব্য সমিতির মহাসচিব মালি বলেছেন ,

    তিনি তার সুন্দর হৃদয় আর কন্ঠস্বর দিয়ে সিনচিয়াং ও তার জনগণের প্রতি তার ভালবাসা ব্যক্ত করেন । তার রক্তে শিল্পকলা আর গণ-কল্যাণের প্রতি তার স্নেহ ও অধ্যবসায় এক অবিস্মরণীয় রূপ পেয়েছে । জনসাধারণ তাকে তাদের জনপ্রিয় শিল্পী ও সমাজসেবী বলে মনে করেন ।

    সিয়ামিলির বাসার আলমারিতে নানা রকম বই রাখা হয় । সংগীত বিষয়ক পুস্তক ছাড়া ইতিহাস , প্রাচীন কবিতা , দেশী-বিদেশী বিখ্যাত সাহিত্য গ্রন্থও আছে । তিনি অবসর সময় লেখাপড়া করেন আর অন্যদের সাহায্য করেন । তিনি মনে করেন , একজন শিল্পী হিসেবে যুগের অগ্রগতির পদক্ষেপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য নিরন্তর লেখাপড়া করতে হবে।