পয়লা জুলাই সমুদ্র-সমতলের তুলনায় বিশ্বের শীর্ষস্থানে অবস্থিত ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ পুরোপুরি চালু হয়েছে । ফলে তিব্বতে কোনো রেলপথ নেই এমন ইতিহাসের অবসান ঘটেছে। তিব্বতের লোকসংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি। এই রেলপথ চালু হওয়ায় তাদের জন্য যেমন আরো সুবিধাজনক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও দ্রব্যমূল্যের নিম্নহার হচ্ছে তেমনি তাদের জীবনধারায় ও চিন্তাভাবনায় অনেক পরিবর্তনও বয়ে আনছে। সুবিশাল ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে নির্মিত এই দীর্ঘ রেলপথের কল্যাণে তিব্বতী জনগণের যাতায়াত আর পরিবহনের অনেক সুবিধা হয়েছে এবং তিব্বতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ছীংহাই-তিব্বত রেল পথ পৃথিবীর ছাদে কিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ? আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো:
চীনের ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে প্রচারিত এই সুন্দর গানের মত : তিব্বতী জনসাধারণের জন্যে এটি এক সোনার পথ। তবে রেলপথ প্রকল্পটি নির্মানের অনেক কঠিন কাজ ছিলো, এর মধ্যে " বহু বছরের হিমায়িত জমি" ও " মালভূমিতে অক্রিজোনর অভাব" এই দুটি বড় সমস্যা হয়েছিলো।
ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ কেরমু থেকে লাসা পর্যন্ত মোট ১১৪২ কিলোমাটার দীর্ঘ। এর মধ্যে অর্ধেক রেলপথই " বহু বছরের হিমায়িত জমি " উপর দিয়ে গিয়েছে। " বহু বছরের হিমায়িত জমি" হচ্ছে তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিম্নে অন্তর্ভুক্ত বরফের বিভিন্ন ধরণের জমি। শীতকালে হিমায়িত জমির আয়তন বেড়ে যায় এবং গ্রীষ্মকালে আবার আয়তন কমে যায়। ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ নির্মান প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । চীনের রেলপথ স্থাপত্য সাধারণ কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ের প্রকৌশলী লিন লাইশেং সংবাদদাতার কাছে বলেছেন যে, হিমায়িত জমিতে ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ নির্মান করতে গিয়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে:
" যেমন আমি একটি সেতুর সংস্থাপন ভিত্তি অথবা একটি ঘরের সংস্থাপন ভিত্তি এই "হিমায়িত জমি"-এর উপর রাখলে , শীতকালে তা ফুলে যার ফলে উপরাংশের স্থাপনাটির ক্ষতি হয়, বরং গ্রীষ্মকালে ( "হিমায়িত জমি" বিলিন হয়) সংস্থাপন ভিত্তি ও সেতু সব নিম্ন হয়ে যায়"
"হিমায়িত জমি" হচ্ছে একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। ১৯৯৪ সালে রাশিয়ার পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০ শতাব্দীর ৭০ দশকে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় সিবেলিয়া রেলপথের মধ্যে মোট ২৭.৫ শতাংশ "হিমায়িত জমি"-এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । সাধারণত, "হিমায়িত জমির" মধ্যে ট্রেন প্রতি ঘন্টায় শুধু ৫০ কিলোমিটার যেতে পারে। কিন্তু, রাশিয়া ও ক্যানাডা ইত্যাদি দেশের উচ্চ অক্ষাংশ "হিমায়িত জমি" বলেই তাদের স্থিতিশীল হয়ে থাকে। কিন্তু ছিংহাই-তিব্বত রেলপথের নিম্ন অক্ষাংশ " হিমায়িত জমি" এবং তার সমুদ্রপৃষ্ঠ উচ্চ বলেই " হিমায়িত জমির " অনেক রেলপথ নির্মান কঠিন ব্যাপার হয়েছে।
তাহলে ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ প্রকল্পটির স্থপতিরা কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করেছেন? চীনের রেলপথ স্থাপত্য সাধারণ কোম্পানির লিন লানশেং বলেছেন যে, বাইরে পরিদর্শনে গিয়ে এই সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে পেয়েছেন। মালভূমির " হিমায়িত জমি " পরিদর্শন করার সময়, বিজ্ঞানীরা টুকরো পাথরের মধ্যে বরফ ও তুষার আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু কাছাকাছির জমির বৃদ্ধিগত তাপমাত্রার জন্যে অনেক গরম হয়েছে। তাই বিজ্ঞানীরা এই পরিদর্শনের আবিষ্কার নিয়ে রেলপথের প্রকল্পটি সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছেন।
" হিমায়িত জমি" সমস্যা ছাড়া, ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ প্রকল্পটি নির্মানে আরো বৈরী প্রকৃতি মোকাবিলা করতে হয় । স্থপতিদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় তা ছিলো একটি কঠিন ব্যাপার। ছিংহাই-তিব্বত রেলপথে সবচেয়ে নিম্নের তাপমাত্রা ছিলো মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। প্রতিবছরে মোট ১০০ থেকে ১৬০ দিন ব্যাপী তীব্র বাতাস হয়। এছাড়াও " মালভূমিতে অক্রিজেনের অভাব" আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ।
" মালভূমিতে অম্লজানের অভাব" এই সমস্যা সমাধানের জন্যে , প্রথম দিকে, নির্মান কর্মীরা প্রত্যেকে একটি অক্রিজেনের বোতল নিয়ে সুরঙ্গের ভেতরে কাজ করেন। ফেং হাউ পাহাড়ের সুরঙ্গে পরিচালনা করার দায়িত্বশীল ব্যক্তি তিং শৌছুয়ান বলেছেন:
" আমরা সুরঙ্গের দুই দিকে আলাদা আলাদাভাবে একটি বড় অক্রিজেন স্টেশন স্থাপন করেছি, যাতে ২৪ ঘন্টায় সুরঙ্গের ভেতরে অক্রিজেনের যোগান দেয়া যায় ।"
তিনি আরো বলেছেন, এই নতুন অক্রিজেন যোগান দেয়ায় মালভূমি মৃত্যুহার প্রায় ৯৪ শতাংশ কমেছে। যাতে ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ স্বাভাবিকভাবে চালু হাওয়ার জন্যে একটি দৃঢ় ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। " মালভূমিতে অক্রিজেনের অভাব" এই সমস্যা সমাধান করেছে।
এই রেলপথ তিব্বতী জনগণের জন্য বেশি উপকার ও আনন্দ বয়ে এনেছে।
|