সম্প্রতি সিরিয়া সরকারের শীর্ষ স্তরের নেতৃবৃন্দ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, তারা লেবানন-সিরিয়া সীমান্ত বরাবর জাতি সংঘ অস্থায়ী বাহিনী মোতায়েনের বিরোধিতা করেন। তারা হুমকী দিয়ে বলেছেন , মোতায়েনের ঘটনা ঘটলে সিরিয়া লেবানন-সিরিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দেবে ।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট জাতি সংঘের বিশেষদূত লারসেনের সংগে সাক্ষাত করার সময় সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষী বাহিনী মোতায়েনের অনুরোধ জানিয়েছেন । তিনি বলেছেন ,সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে আন্তর্জাতিক বাহিনীর মোতায়েন লেবাননের জলসীমা ও আকাশসীমার ওপর ইসরাইলের আরোপিত অবরোধ তুলে নেয়ার পক্ষে সহায়ক হবে । এই প্রসংগে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ ২২ আগস্ট সংযুক্ত আরব আমীরাতের দুবাই টেলিভিশন কেন্দ্রকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন , ইসরাইলের উত্থাপিত সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের আনুরোধে লেবাননের সার্বভৌমত্বের লংঘন এবং তার বৈরি অভিমত প্রতিফলিত হয়েছে । সিরিয়া ইসরাইলের এই অনুরোধকে প্রত্যাখ্যান করেছে ।
বিশ্লেষকদের মতে সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষী বাহিনী মোতায়েনের সমস্যায় সিরিয়া যে এত অনমনীয় মনোভাব নিচ্ছে , তার পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে ।
প্রথমত সিরিয়া পরে আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকবে । এটাই সিরিয়ার একটি প্রধান উদ্বেগ । সিরিয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের চরম শত্রু । যুক্তরাষ্ট্র তাকে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনকারী দেশ বলে আখ্যায়িত করেছে । এর প্রভাবে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের সংগে মাঝেমধ্যে সিরিয়ার বিবাদ হয়ে থাকে এবং পরস্পরের মধ্যে আস্থার অভাব রয়েছে । যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে যে, সে লেবাননে সম্প্রসারিত শান্তি রক্ষী বাহিনীতে যোগ দেবে না । তাই লেবাননে শান্তি রক্ষী বাহিনী প্রধানত ইউরোপীয় দেশগুলোর বাহিনীকে নিয়ে গঠিত হবে । এসব দেশ বিভিন্ন মাত্রায় সিরিয়ার প্রতি শত্রুতামূলক মনোভাব পোষণ করছে । তাদের বাহিনীকে নিয়ে গঠিত বাহিনী নিজের দেশের কাছে মোতায়েন রাখা হলে স্বাভাবিকভাবে সিরিয়ার কাছে অস্বস্তিকর লাগবে । সিরিয়া ভয় করছে যে , এমন একটি শান্তি রক্ষী বাহিনী অপরিহার্যভাবে কাছে থেকে সিরিয়াকে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা এবং সিরিয়ার ওপর বলপ্রয়োগ করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোর একটি হাতিয়ারে পরিণত হবে ।
দ্বিতীয়ত সিরিয়ার চোখে সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে সিরিয়াকে লেবাননের নিরাপত্তা লংঘনকারীর অবস্থানে দাঁড় করানো হবে। এটি কোনোমতেই সিরিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য নয় । সিরিয়া সবসময় মনে করে এসেছে যে, সে হচ্ছে লেবাননের গৃহ যুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং যুদ্ধোত্তর দশ বারো বছরে লেবাননের স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে এক প্রধান শক্তি । অথচ একবার সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন রাখা হলে , লেবাননের প্রতি সিরিয়ার অবস্থানের আমূল পরিবর্তন ঘটবে ।
তৃতীয়ত এই মর্মে সিরিয়া উদ্বিগ্ন যে, আন্তর্জাতিক বাহিনী কাছাকাছি থাকলে , সেটা সিরিয়ার চরমপন্থীদের উত্তেজিত করবে । বহু দিন ধরে সিরিয়ার নিরাপত্তার পরিস্থিতি মোটামুটি ভালোই আছে । তবে গত দু বছরে সিরিয়ায়ও সন্ত্রাসমূলক তত্পরতা সম্প্রসারিত হচ্ছে । ইরাক যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়ার অচলাবস্থার প্রভাবে উগ্রপন্থী সশস্ত্র শক্তি সিরিয়ায় দাংগাহাংগামা সৃষ্টি করছে ।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা অত্যন্ত জটিল । দেশের বাইরে থেকে হিজবুল্লাহর অস্ত্র লাভ রোধের জন্যে লেবানন-সিরিয়া সীমান্তে জাতিসংঘ বাহিনী মোতায়েনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে । তবে এই পদক্ষেপ লেবানন-সিরিয়া সম্পর্ককে তিক্ত করবে এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতির ওপর ব্যাপক প্রতিকূল প্রভাব বিস্তার করবে । লেবানন-সিরিয়া সীমান্ত চিহ্নিতকরণ এবং দু দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে লেবানন সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দাবি । লেবানন-সিরিয়া সীমান্তে আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন রাখা হলে এই সমস্যার নিরসন আরো কঠিন হবে ।
|