সম্প্রতি পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত শক্তিসম্পদ সাশ্রয় এবং পরিবেশ সংরক্ষণ প্রদর্শনীতে শক্তিসাশ্রয় প্রযুক্তি ও দ্রব্য দর্শকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে। শক্তিসম্পদ সাশ্রয়ের কতগুলো ব্যবহারিক , পরিপক্ক এবং খুবই কার্যকর প্রযুক্তি ও পণ্যদ্রব্য ভোক্তাদের মধ্যে সমাদৃত হয়েছে।
শক্তিসম্পদ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ও পণ্যদ্রব্য জনপ্রিয় করার এই প্রদর্শনীতে অনেক কোম্পানি অংশ নিয়েছে। তাতে বিদ্যুত্ ও পানি সাশ্রয় প্রযুক্তি ও পণ্যদ্রব্য দেখানো হয়েছে। এই প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা সংস্থা পেইচিং শক্তি সাশ্রয় ও পরিবেশ সংরক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক ছেন হুয়াইওয়েই বলেছেন, " ১৭০টি কোম্পানি এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে । তাতে শক্তিসম্পদ সাশ্রয়, পরিবেশ সংরক্ষণ ও পানি সাশ্রয়ের অনেক নতুন প্রযুক্তি আর নতুন দ্রব্য দেখানো হয়েছে। বড় বড় কারখানা সক্রীয়ভাবে এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে। বলা যায়, এই প্রদর্শনীর বিষয়বস্তু খুবই সমৃদ্ধ। তা সমাজের বিভিন্ন মহলের ব্যাপক সাড়া ও সমর্থন পেয়েছে।"
চীনের নতুন শক্তিসম্পদ উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পরিষ্কার ধরনের পরিবেশ সংরক্ষণমূলক শক্তিসম্পদ উন্নয়ন, যেমন বায়ুশক্তি, সৌরশক্তি, জৈব পদার্থের শক্তি ইত্যাদি। এবারকার প্রদর্শনীতে পেইচিং শেংছাং সবুজ শক্তিসম্পদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি লিমিটেড কোম্পানির দেখানো জৈব পদার্থজনিত তাপ ও বিদ্যুত্ সরবরাহ কেন্দ্র বহুসংখ্যক দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ফু ইয়ৌহোং ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এই কেন্দ্রে ব্যবহৃত জৈব পদার্থ হলো ভুট্টা ও গম সহ বিভিন্ন শস্যগাছের খড় এবং কাঠের গুঁড়ো। এই প্রযুক্তিতে এসব বর্জ্য জিনিস আবার কাজে লাগানো হয় এবং তাতে পরিবেশ দূষণও কমানো যায়। তিনি বলেছেন, " এবারকার প্রদর্শনীতে সাত-আটটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আমাদের সাহায্য চেয়েছে । তারা তাদের বয়লার সংস্কার করে নতুন শক্তিসম্পদ ব্যবহারের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন। তারপর আমাদের পাঠানো প্রযুক্তিবিদ তাদের কারখানায় গিয়ে অবস্থা দেখেছেন এবং তাদের জন্য নতুন শক্তিসম্পদ ব্যবহারের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন। আমরা পরবর্তী দু-এক মাসের মধ্যেই চার-পাঁচটি কারখানায় এ-ধরনের সবুজ শক্তিসম্পদ ব্যবহারের ব্যবস্থা করে দেবো।"
প্রদর্শনীতে সাংহাই খাংনেং গোষ্ঠীর প্রদর্শিত "বহুমুখী বিদ্যুত্ সাশ্রয় যন্ত্র" দর্শকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে। গোষ্ঠীটির প্রেসিডেণ্ট লি চিহোং বলেছেন, "আমাদের এই যন্ত্র শুধু কার্যকরভাবে বিদ্যুত্ সাশ্রয় করতে পারে তা নয়, উপরন্তু কারখানার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সুরক্ষা করতে পারে। তার বহুমুখী ভূমিকা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। চীনের তেল গোষ্ঠী এবং চিলিন রাসায়নিক শিল্প গোষ্ঠী ইত্যাদি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে এবং ভাল ফল পাওয়া গেছে বলে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।"
লি চিহোং বলেছেন এবারকার প্রদর্শনীতে ২০টিরও বেশি বৃহত্ শিল্পপ্রতিষ্ঠান এই যন্ত্র কেনার জন্যে অর্ডার দিয়েছে। ছোংছিং মহানগরের প্রশাসনিক সংস্থা খাংনেং কোম্পানির যন্ত্রসরঞ্জাম কিনে তাদের এক্সপ্রেস হাইওয়ে ও শহরের রাস্তাঘাটের আলোক ব্যবস্থার বিদ্যুত্ সাশ্রয় করার আশা প্রকাশ করেছে। লি চিহোং বলেছেন, ২০১০ সালে তাদের বহুমুখী বিদ্যুত্ সাশ্রয় যন্ত্রের বিক্রয়জনিত আয় ৩৭৫ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে।
চীনে পানি সম্পদের দারুণ অভাব। পানি সাশ্রয় প্রযুক্তির ওপর খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়।
পেইচিংয়ের একটি কোম্পানির উত্পাদিত একটি যন্ত্র ব্যবহার করলে শুধু এক টন পানিতেই দুশো কেজি শাক-সব্জি ধুয়ে পরিষ্কার করা যায় এবং এক দিনের মধ্যে পানি বদল করার প্রয়োজন নেই । পেইচিং হোটেল এবং সরকারী সংস্থাগুলোর অনেক ডাইনিং হল আর রেস্তোরাঁ এই যন্ত্র ব্যবহার করেছে।
এই কোম্পানি তরকারি পরিষ্কার করার ছোট ছোট যন্ত্রও সরবরাহ করে। ছোট যন্ত্রের ক্রেতা লি ফুলি বলেছেন, "আমি একটি যন্ত্র কিনতে চাই। এইমাত্র আমি দেখেছি এই যন্ত্র ব্যবহার করলে সহজেই তরকারি পরিষ্কার করা এবং জীবানুমুক্ত করা যায়। তাতে পানি এবং বিদ্যুত্ সাশ্রয় করা হয়। এই যন্ত্র ৫ ঘণ্টা চালালেও মাত্র এক কিলোওয়াট -ঘণ্টা বিদ্যুত্ খরচ হয়, তাতে অনেক পানি আর টাকা বাঁচবে।"
শহরের আশেপাশে আবর্জনা ফেলার স্থানকে জলাভূমির পার্কে রূপান্তরিত করার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটা পেইচিংয়ের সবুজ ওলিম্পিক গেমস আয়োজনের অনুকুল। পেইচিংয়ের একটি পরিবেশ সংরক্ষণ প্রযুক্তি কোম্পানির কার্যালয়ের প্রধান মাদাম ছাও ইয়াং বলেছেন, "আমাদের কোম্পানি ফোংথাই এলাকার পরিবেশ সংরক্ষণের একটি প্রকল্পের কাজ পাওয়ার জন্য পেইচিং মহানগর সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে । প্রকল্পটির প্রস্তুতি চলছে। আমাদের আবর্জনার ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াকরণ কর্মের উন্নয়নে চীনের বাস্তব অবস্থা অনুসারে নতুন প্রযুক্তি গবেষণা করবো। এই প্রযুক্তি উন্নয়নের ভবিষ্যত্ সম্ভাবনা খুবই বিরাট।"
উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত প্রকল্প হলো আবর্জনা ও দূষিত পানির প্রক্রিয়াকরণ এবং মাটি পরিষ্কারকরণ প্রযুক্তি দিয়ে ফোংথাই এলাকার আবর্জনা ফেলার এক বিরাট মাঠ সংস্কার করা, যাতে এই স্থানকে এমন এক জলাভূমির পার্কে পরিণত করা যায়, যেখানে থাকবে পরিষ্কারপানি-ভরা নদী, বন, ঘাসের ভূমি এবং নলখাগড়ার বন। স্থানীয় সরকার এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এই কোম্পানির প্রযুক্তি ব্যবহার করে আবর্জনার প্রক্রিয়াকরণ এবং পানির উত্স পরিষ্কার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। পেইচিং মহানগর সরকার এই মত প্রকাশ করেছে যে, পরিবেশ সংরক্ষণের ভাল প্রযুক্তি ও পণ্যদ্রব্য সরকারের ক্রয়ের পণ্যদ্রব্যের তালিকাভুক্ত হবে। পেইচিংয়ে শক্তিসম্পদ সাশ্রয় প্রকল্প এবং সবুজ ওলিম্পিক গেমসের ওপর অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
|