ইরানের পরমাণু আলোচনার প্রধান প্রতিনিধি ও সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সচিব আলী লারিজানি ২২ আগস্ট যুক্তরাস্ট্র , রাশিয়া , চীন , বৃটেন , ফ্রান্স ও জার্মানীর পেশকৃত ইরানের পরমাণু সমস্যা সমাধানের প্রস্তাবটির আনুষ্ঠানিক জবাব দিয়েছেন । তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন , ইরান এই নতুন প্রস্তাবটির উত্থাপক দেশগুলোর সংগে নিষ্ঠাবান সংলাপ চালাতে ইচ্ছুক । তবে তিনি তার ভাষণে ৬টি জাতির প্রস্তাবটির অন্তর্ভূক্ত ইরানের কাছে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা স্থগিত রাখার দাবি ইরান গ্রহণ করবে কি না সে সম্পর্কে কিছু বলেন নি । ৬ জাতির প্রস্তাব ও জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৬৯৬ নম্বর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইরান আগে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা স্থগিত রাখবে , না আগে ৬জাতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চালাবে , সেটা ইরানের পরমাণু সমস্যা সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
পরমাণু সমস্যায় ইরান ও পশ্চিমা দেশগুলোর দর কষাকষির ইতিহাসের পর্যালোচনা করলে দেখ যায় , ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা স্থগিত রাখা হবে কি না , এই কেন্দ্রীয় সমস্যায় ইরানের বর্তমান সরকার পশ্চিমা দেশগুলোর সংগে আগেকার সরকারের যোগাযোগ রাখার অভিজ্ঞতার সারসংকলন করেছে । ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা বন্ধ করে দিয়েছিল । তারপর ফ্রান্স , জার্মানী ও বৃটেন তার সংগে আলোচনায় বসেছিল । আলোচনায় এই তিনটি দেশ এই মর্মে অটল ছিলেন যে, ইরানকে পুরোপুরিভাবেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা বন্ধ করতে হবে । তবে ইরান তা প্রত্যাখ্যান করেছিল । ৮ মাসের মধ্যে মোট ৭দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল । তবে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয় নি । অবশেষে ইরানে নতুন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা শুরু করেছে । ফলে আলোচনা বন্ধ হয়ে গেছে । ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ নিজাদ ক্ষমতাসীন হওয়ার অব্যবহিত পর প্রাক্তন সরকারকে দুর্বল বলে নিন্দা করেছেন ।
যদিও ইরান বারবার বলেছে যে , সে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাকে ভয় করে না এবং সবচেয়ে খারাপ অবস্থার জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছে , তবুও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তার অর্থনীতির ওপর বিরাট প্রতিকূল প্রভাব বিস্তার করবে । সুতরাং ইরান এখনো আশা করছে , শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এড়ানো যাবে । ইরানের চোখে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা স্থগিত না রাখার অবস্থায় বিভিন্ন পক্ষের সংগে আগে আলোচনা শুরু করতে পারলে নিরাপত্তা পরিষদ রাতারাতি তার ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জারি করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবে না । প্রয়োজনীয় সময়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা স্থগিত রাখাকে শর্ত হিসেবে আরো বেশি লাভ অর্জন করতে পারে । ২২ আগস্ট ৬জাতির প্রস্তাবটির প্রতি ইরানের আনুষ্ঠানিক জবাব ও ইরানের নিষ্ঠাবান আলোচনা করার ইচ্ছায় বর্তমান অবস্থায় ইরানের এই নীতির প্রতিফলন ঘটেছে ।
অপর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর অধিষ্ঠান হচ্ছে এই যে , ইরান মুখে যাই বলুক না কেন , তাকে ৬জাতির প্রস্তাব ও নিরাপত্তা পরিষদের ১৬৯৬ নম্বর প্রস্তাবের দাবি অনুসারে ৩১ আগস্টের আগে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা বন্ধ রাখতে হবে । ইরান আগে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা বন্ধ করলেই কেবল অন্য সমস্যা ওঠতে পারবে । ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা বন্ধ না করলে তারা তার ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ ত্বরান্বিত করবে । ইরানের আনুষ্ঠানিক জবাব পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো সতর্ক অবস্থান নিয়েছে । তবে তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা স্থগিত রাখার পরই কেবল আলোচনা শুরু করার ব্যাপারে অবিচল রয়েছে ।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ২৩ আগস্ট বলেছেন , রাশিয়া আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পরমাণু সমস্য নিরসনের পক্ষপাতী । চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুকপাত্রের কার্যালয় বলেছেন , কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইরানের পরমাণু সমস্যা সমাধানের উত্তম পথ । এটা বিভিন্ন পক্ষের স্বার্থের সংগে সংগতিপূর্ণ ।
|