v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-08-22 14:34:08    
ছিংহাই-তিব্বত রেল পথ চালু হওয়ায় তিব্বতীদের জীবনধারার পরিবর্তন

cri
    পয়লা জুলাই সমুদ্র-সমতল তুলনায় বিশ্বের শীর্ষস্থলে অবস্থিত ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ পুরোপুরি চালু হয়েছে । ফলে তিব্বতে কোনো রেলপথ নেই এমন ইতিহাসের অবসান ঘটেছে । তিব্বতের লোকসংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি । এই রেলপথ চালু হওয়ায় তাদের জন্য যেমন আরো সুবিধাজনক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও দ্রব্যমূল্যের নিম্নহার হচ্ছে তেমনি তাদের জীবনধারায় ও চিন্তাভাবনায় অনেক পরিবর্তনও বয়ে আনছে ।

    তোজেওয়ানজা উত্তর তিব্বতের নাছ্যু অঞ্চলের একজন সাধারণ তিব্বতী পশুপালক । তার বয়স ৭০ বছর । বাড়িতে ৭ জন সদস্য আছেন । আগে তিনি ও তার পরিবার পরিজন তিরিশাধিক তিব্বতী চামরী গাই আর শতাধিক ভেড়া পালন করতেন । এই সব গবাদিপশু তার পরিবারের প্রধান সম্পত্তি আর আয়ের একমাত্র উত্স ছিল । ২০০২ সালে তার বাসার কাছে রেলপথ নির্মাণ করার জন্য বিপুল সংখ্যক শ্রমিক এলেন । রেলপথের নির্মাণকাজ দেখার জন্য বহু স্থানীয় পশুপালক নির্মাণস্থলে হাজির হন । এই সুযোগ দেখে তোজেওয়ানজা ভিন্ন ব্যবসা শুরু করলেন ।

    রেলপথের নির্মাণকাজ শুরু হবার পাশাপাশি তিনি ছিংহাই-তিব্বত রেলপথের নির্মাণ প্রকল্প বিষয়ক কার্যালয়ের নিকটে একটি মুদিখানা স্থাপন করলেন । এই মুদি দোকানে সিগারেট , মদ , তাত্ক্ষনিক পরিবেশনযোগ্য নূডলস্ আর অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করা হতো । গত বছর এই মুদি দোকানের বার্ষিক আয় ৩ হাজার ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে ।

    তা ছাড়া তিনি সপরিবারে স্থানীয় রেল রক্ষনাবেক্ষণের কাজেও যোগ দিলেন এবং এ থেকে কিছুটা আয় করেছেন । গত বছর তোজেওয়ানজার বাড়িতে গবাদি পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় নি , কিন্তু তাদের আয় দ্বিগুণ বেড়ে ১০ হাজার ইউয়ানেরও বেশি হয়েছে ।

    রেলপথ নির্মাতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করার মাধ্যমে তোজেওয়ানজা ছিংহাই প্রদেশের বাজারে পশুজাত দ্রব্যের চাহিদা সম্পর্কে বেশি জানতে পেরেছেন । যখন তিনি জানলেন ছিংহাই প্রদেশের পশুজাত দ্রব্যমূল্য নাছুর চেয়ে বেশি , তখন তিনি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিলেন ।

    তিনি রেলপথের সুবিধা ও বাণিজ্যিক প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করতে চেয়েছেন । তিনি কেরমুতে তিব্বতের চমরী গাইয়ের চামড়া , ভেড়ার চামড়া ও লোম বিক্রি করবেন এবং বিক্রি করার জন্য তিনি ছিংহাই প্রদেশের নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য তিব্বতে নিয়ে আসবেন ।

    তোজেওয়ানজা সক্রিয়ভাবে নিজের ব্যবসা চালাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন । লাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষারত লুয়েশানসিও রেলপথ চালু করার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন । চীনের অভ্যন্তরস্থলের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যে মাঝে মাঝে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা বিনিময় সংক্রান্ত কার্যক্রম আর ছাত্রদের প্রীতি-সম্মিলনীতে যোগদান করে থাকেন , তার প্রতিও তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে । আগে তিব্বতের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত বলে তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কার্যক্রম আয়োজনের সুযোগ খুব কম ছিল । এতে তিনি খুব দুঃখ পেতেন । সাংবাদিকতা বিভাগের একজন ছাত্র হিসেবে তিনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছেন যে , অভ্যন্তরস্থলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আদান প্রদান চালানো নিজের জ্ঞান ও লেখাপড়ার মান বাড়ানো আর ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের অনুকূল হবে ।

    ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ চালু হবার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের একজন দায়িত্বশীল ছাত্র হিসেবে ছাত্রদের মধ্যেকার বন্ধুত্ব বাড়ানো ও লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা বিনিময় করার জন্য লুয়েশানসি অভ্যন্তরস্থলের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগোযোগ শুরু করেছেন । তিনি বলেছেন , অভ্যন্তরস্থলের বহু বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রস্তাবের প্রতি ব্যাপক উত্সাহ প্রকাশ করেছে । তারা সবাই ট্রেনে তিব্বত ঘুরে ঘুরে দেখতে চেয়েছেন ।

    আমরা খুব আনন্দিত হয়েছি । এই রেলপথের মাধ্যমে অভ্যন্তরস্থলের ছাত্রছাত্রীরা তিব্বতে আসতে পারবে । আমরাও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়াতে আর লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারবো ।

    আসলে ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ চালু হওয়ায় তিব্বতী জনসাধারণের জন্য আরো বেশি উপকার বয়ে আনা হয়েছে । তিব্বত সমাজ বিজ্ঞান একাডোমীর অর্থনীতি গবেষণাগারের উপপ্রধান ওয়াং তাই ইউয়ান মনে করেন যে , ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ চালু হওয়ায় তিব্বতের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি উন্মুক্ত হয়েছে । তিব্বতীদের জীবনধারারও ব্যাপক পরিবর্তন হবে ।

    রেলপথ চালু হওয়ায় গত সহস্রাধিক বছর ধরে সংস্কৃতির রুদ্ধ দ্বার ভেঙ্গে গেছে । চীনের অভ্যন্তরস্থলের অন্যান্য জাতির সংস্কৃতির সঙ্গে তিব্বতের সংস্কৃতির আদান প্রদান আরো সুষ্ঠু ও দ্রুত চালানো যাবে এবং বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতির কিছুটা সংমিলনের প্রবণতাও দেখা দেবে । বিশেষ করে তিব্বত থেকে অভ্যন্তরস্থলে যাওয়া আর অভ্যন্তরস্থল থেকে তিব্বতে আসার লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তিব্বতীদের ধ্যানধারণা , চিন্তাভাবনা আর মূল্যবোধের পরিবর্তন হবে । এটা আগেকার ধর্মভিত্তিক সমাজ ও অর্থনীতির উপর কিছুটা প্রভাব ফেলবে ।

    এই বিশেষজ্ঞ আরো বলেছেন , রেলপথ চালু হওয়ার পাশাপাশি তিব্বত ভ্রমণে আসা লোকসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে । বর্তমানে প্রতিদিন চারটি করে রেলগাড়ি তিব্বতে আসে । বিমানে আসা যাত্রীসহ পর্যটকদের সংখ্যা ৪ হাজারে দাঁড়িয়েছে । এর অর্থ তিব্বতে আসা পর্যটকদের সংখ্যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে কেমন করে তিব্বতের পুরাকীর্তি সংরক্ষণ করা হবে , এই বিষয়ের ওপর লোকজন ব্যাপক মনোযোগ দিচ্ছেন ।

    লাসার প্রাচীনতম মন্দির- তাচাও মন্দিরের ৩৯ বছর বয়স্ক লামা নেমাছিরেন বহু শাস্ত্রীয় পুঁথি পড়েছেন । তিনি পেইচিং বৌদ্ধ ইনস্টিটিউটেও লেখাপড়া করেছেন , তিনি বলেন , রেলগাড়িতে এ সম্পর্কিত প্রচার কাজ চালাবার জন্য তিনি রেল বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতা চালাবার কথা বিবেচনা করছেন । তিনি মনে করেন , রেলগাড়িতে ভ্রমণ করা পর্যটকদের কাছে আগে থেকে এই প্রচার কাজ চালানো গেলে পর্যটকরা সার্বিকভাবে তিব্বতের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন । এই রেলপথ তিব্বতী জনগণের জন্য বেশি উপকার ও আনন্দ বয়ে এনেছে ।