সম্প্রতি চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী ছিয়াং শাতে চীনের তৃতীয় গ্রামীণ কর্মকর্তাদের ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়েছে । দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গ্রামীণ কর্মকর্তা ও চীনের কিছু সংখ্যক প্রখ্যাত গ্রামীণ সমস্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উত্সাহের সংগে চীনে নতুন গ্রামাঞ্চল নির্মাণের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন । আজকের অনুষ্ঠানে এই সম্পর্কে এবং আনুসংগিক বিষয় নিয়ে কিছু বলছি আমি শি চিং উ ।
চীনা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও গ্রাম উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ ওন থিয়ে চুন মনে করেন , চীনের ৮০ কোটি কৃষকের জন্যে ২০০৬ সালের তাত্পর্য অসাধারণ । চীনের বিভিন্ন স্থানে নতুন সমাজতন্ত্রিক গ্রামাঞ্চল নির্মাণের এক উত্তাল জোয়ার অভূতপূর্বভাবে বয়ে যাচ্ছে ।
হংকং বদান্যতা সোসাইটির একজন কর্মকর্তা লি ছিয়াং ফিং চীনের হু পেই প্রদেশের একজন তৃণমূল কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং বহু বছর ধরে চীনের গ্রামীন সমস্যা নিয়ে গবেষণা করে এসেছেন । তিনি বলেছেন , অতীতের তুলনায় এবারের পার্থক্য হচ্ছে, এবার চীন সরকার নিজে নতুন গ্রামাঞ্চল নির্মাণের সূচনা করেছে । এটা চীনের গ্রামাঞ্চল নির্মাণের জন্যে সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে ।
২০০০ সালে পদার্পণের পর চীন সরকার গ্রামীণ সমস্যার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে । গত কয়েক বছরে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার পর পর সার্বিকভাবে স্বচ্ছল সমাজ গঠন করা, বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ, সম্প্রীতিময় সমাজ গঠন করা এবং নতুন সমাজতান্ত্রিক গ্রামাঞ্চল নির্মাণ করার মত ধারাবাহিক শ্লোগান দিয়েছে । এসব শ্লোগানের মধ্যে গ্রামীণ সমস্যা বরাবরই এক গুরুত্বপূণ স্থান দখল করে আছে ।
চীনা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওন থিয়ে চুন বলেছেন , যদিও পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে , চীনের জি ডি পির মধ্যে কৃষির অনুপাত নামতে নামতে এখন ১৫ শতাংশের নীচে দাঁড়িয়েছে , তবুও চীনে এখনো ৮০ কোটি কৃষক রয়েছে এবং বহু বছর ধরে বাজার অর্থনীতি প্রবর্তনের সংগে সংগে চীনের শহর ও গ্রামের ব্যবধান লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে গেছে ।
ওন থিয়ে চুন মনে করেন যে , চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাবো , চীনের একাদশ পাঁচশালা পরিকল্পনার সময়পর্বে সরকার কৃষি, গ্রামাঞ্চল ও কৃষকদের খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে দেবে । এসব বরাদ্দ প্রধানত চীনের সবচেয়ে নিম্ন স্তর- গ্রাম পর্যায়ে ব্যয় হবে । ফলে গ্রামাঞ্চলের নির্মাণকাজ পুরোদ্যমে চলবে ।
চিয়াং সি প্রদেশের কান চৌয়ের ছিয়াং চিং গ্রামের পার্টি সম্পাদক চুং সিন ফিং নতুন গ্রামাঞ্চল নির্মাণের কাজকে চীনের গ্রামের একটি বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেছেন । তিনি বলেছেন , অতীতে গ্রামাঞ্চলে সর্বত্রই ছিল কাঁচা রাস্তা । আবহাওয়া ভালো থাকলে সবখানে ধুলো থাকে এবং বৃষ্টির দিনে কাঁদা রাস্তায় হাটা মুশ্কিল । জলসেচ ব্যবস্থাও অকেজো রয়েছে । ফলে গ্রামবাসীদের অনেক অসন্তোষ রয়েছে । তিনি বলেছেন , ২০০১ সাল থেকে তাদের গ্রামে পর পর স্বচ্ছল কৃষক বাড়ি , কিন্ডারগার্ডেন , বার্ধক্য-সদন ও কৃষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে ।
কেন্দ্রীয় সরকারের আহবান চীনের বিভিন্ন স্তরের সরকারের মধ্যে প্রবল সাড়া পাওয়া গেছে । আমাদের সংবাদদাতা লক্ষ্য করেছেন, বিভিন্ন স্থানের পেশকৃত একাদশ পাঁচশালা আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় নতুন গ্রামাঞ্চল নির্মাণের কাজকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেয়া হয়েছে । হুনান প্রদেশের রাজধানী ছিয়াং শা শহর ২০০৬ সালে গ্রামাঞ্চল নির্মাণ খাতে ১ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করবে ।
ছিয়াং শা পৌর সরকারের গ্রামীণ কাজকর্ম কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন , এতে প্রমাণিত হয়েছে যে , সরকার এখন নতুন গ্রার্মাঞ্চল নির্মাণের কাজকে একটি দীর্ঘকালীন কাজ হিসেবে গ্রহণ করেছে ।
আনহুই প্রদেশের ফোং ইয়াং জেলার সিয়াও কাং গ্রামের কৃষক ইয়ান চুন ছিয়াংয়ের বয়স ৬৫ বছর । গত ৫ মার্চ চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের অধিবেশনে যখন চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও সরকারের কাজকর্ম সম্পর্কে রিপোর্ট দাখিল করছিলেন , তখন ইয়ান চুন ছিয়াং তার হাতের কাজ ছেড়ে নিজের বাড়িতে বসে টেলিভিশনের মাধ্যমে তার সম্প্রচার দেখেছেন ।
তিনি বলেছেন , প্রধানমন্ত্রী তার রিপোর্টে গ্রামাঞ্চল সম্পর্কে যে কথা বলেছেন , তা সবই বাস্তবভিত্তিক । তাঁর কথা চীনের কোটি কোটি কৃষকদের চাষাবাদ করার উদ্দীপনা বাড়িয়ে দিয়েছে । প্রধানমন্ত্রীর রিপোর্ট অনুসারে কয়েক হাজার কোটি ইউয়ান গ্রামাঞ্চলে ব্যয় করা হবে । এটা চীনে নতুন সমাজতান্ত্রিক গ্রামাঞ্চল নির্মাণ কাজের জন্যে উজ্জ্বল সম্ভাবনা এনে দিয়েছে ।
এখন চীনে বেশ কিছু সংখ্যক কৃষক ইয়াং চুন ছিয়াংয়ের মত প্রধানমন্ত্রীর রিপোর্টটির ওপর বিশেষ নজর দিয়েছেন ।
ইয়ান চুন ছিয়াং এখন সিয়াও কাং গ্রামের অধিকাংশ গ্রামবাসীদের সংগে মিলে আরেকটি সংস্কার চালানোর কথা চিন্তাভাবনা করছেন ।
কয়েক দশক ধরে ইয়ান চুন ছিয়াং জমিতে চাষবাস করতে অভ্যস্ত ছিলেন । তবে আজ তিনি নিজের ইচ্ছায় তার পরিবারের জমিকে শাংহাইয়ের একটি কোম্পানির কাছে ধার দিলেন । সেই কোম্পানি মত্স চাষের কাজে নিয়োজিত । তিনি বলেছেন , পরিবারভিত্তিক ঠিকাদারী ব্যবস্থার কল্যাণে আমাদের খাওয়া-পরার সমস্যার মোটামুটি সমাধান হয়েছে । তবে তা আমাদের জন্যে এখনো সম্পন্ন অবস্থা এনে দিতে পারে নি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও গণ সরকার কৃষকদের খুবই যত্ন নেন । আমরা দৃঢ় মনোবল নিয়ে ভালোভাবে কৃষির কাজ করে বেশি উপার্জন করতে বদ্ধপরিকর ।
|