দু'দিনব্যাপী ২৬তম দক্ষিণ আফ্রিকান উন্নয়ন গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলন ১৭ আগস্ট লেসোথোর রাজধানী মাসেরুতে উদ্বোধন হয়েছে। এমন লক্ষণ দেখা গেছে যে, চীন আর ভারতের উন্নয়নের ধাঁচ হবে এই সংস্থার সদস্যদেশগুলোর এক আলোচ্য বিষয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ম্পাহলওয়া বলেন, চীন আর ভারত উভয়েই বৃহত্ কৃষিরাষ্ট্র, দু'দেশেরই আছে প্রচুর দরিদ্র জনসংখ্যা। তারা যে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে, তা বিশ্বে নিজস্ব সৃজনী তাত্পর্য-সম্পন্ন। দক্ষিণ আফ্রিকান গোষ্ঠীর সদস্যদেশগুলোর অবস্থা চীন ও ভারতের অনুরূপ বলে এই দু'টো দেশের উন্নয়নের ধাঁচ তাদের জন্য খুব ভাল দৃষ্টান্ত।
এই গোষ্ঠীর এক রিপোর্টে বলা হয় যে, চীন ও ভারতের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকান দেশগুলোর বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে। এই গোষ্ঠীর উচিত চীন ও ভারতের সঙ্গে নতুন অংশীদারী সম্পর্ক স্থাপন করা, যাতে দক্ষিণ আফ্রিকান দেশগুলোর উন্নয়ন দ্রুততর করা এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়।
তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেণ্ট কিক্ওয়াইট বলেন, চীন ও ভারতের সাফল্য বিপুলভাবে আফ্রিকার পরিবর্তনের ওপর প্রভাব ফেলবে। এই দু'টো দেশের উন্নয়ন থেকে আফ্রিকানরা উপলব্ধি করেছেন যে, তাঁরাও দারিদ্রমুক্ত হয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার আশা করতে পারেন । তাঁর বিশ্বাস, আফ্রিকান দেশগুলো সঠিক নীতি ও কার্যক্রম গ্রহণ করলে আজকের চীন ও ভারতের মতো উন্নয়ন করতে পারবে।
দক্ষিল আফ্রিকান গোষ্ঠী যে চীন ও ভারতের দ্রুত উন্নয়নের ধাঁচকে একটি দৃষ্ঠান্ত হিসেবে নেয়ার আশা করছে, তার কারণ চীন ও ভারতের সঙ্গে তাদের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে। গত ৫ বছরে চীন ও ভারতের সঙ্গে আফ্রিকার বাণিজ্য চার গুণ বেড়েছে। আফ্রিকায় চীন ও ভারতের পুঁজি বিনিয়োগ আর সাহায্য প্রকল্পও বিরাট মাত্রায় বেড়েছে। গত জুন মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত আফ্রিকান অর্থনৈতিক ফোরামে চীন ও ভারতের অর্জন(সাফল্য) এক প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল। আফ্রিকান দেশগুলোর নেতারা ব্যাপকভাবে মনে করেন, চীন ও ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আফ্রিকার জন্য উন্নয়নের সুযোগ ডেকে এনেছে। দেশদুটোর সঙ্গে বাণিজ্যের মাধ্যমে আফ্রিকার বেশ উপকারও হয়েছে।। চীন ও ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে । দক্ষিন আফ্রিকার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ম্পালওয়া জোর দিয়ে বলেছেন, আফ্রিকাকে এখন অবশ্যই চীন ও ভারতের উন্নয়নের সুযোগ আঁকড়ে ধরে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকান গোষ্ঠীর দেশগুলোর জনগণ চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা উল্লেখ করে, চীন ও ভারতের সঙ্গে আফ্রিকার অর্থনৈতিক সহযোগিতার যে যে বৈশিষ্ট্য আছে , তাতে চীনের উন্নযন আফ্রিকার জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ । ২০০৫ সালে চীন ও আফ্রিকার মধ্য বাণিজ্য ১০ থেকে ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত বেড়েছে। আফ্রিকায় চীন প্রচুর পুঁজি বিনিয়োগ করছে। চীনের ৮০০টিরও বেশি কোম্পানি আফ্রিকায় পুঁজি বিনিয়োগ করে কারখানা স্থাপন করেছে। এতে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। আফ্রিকান দেশগুলো লক্ষ্য করেছে, চীনের দ্রুত উন্নয়ন আফ্রিকার কাঁচা মাল রপ্তানী আর স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে চীনা পণ্য বিশেষ করে নিত্যব্যবহার্য দ্রব্য খুবই সস্তা। গুণগত মানও বেশ ভাল বলে আফ্রিকানদের মধ্যে তা খুব সমাদৃত হয়। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হচ্ছে বলে আফ্রিকার দেশগুলো চীনের সঙ্গে ব্যবসা করার উপকারিতা অনুভব করেছে।
ভারতও আফ্রিকার জন্য এক বিরাট আকর্ষণ। ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারত তার আফ্রিকান বাজার সম্প্রসারণের বিপুল চেষ্টা চালায়। ভারতের গাড়ি ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই আফ্রিকার দক্ষিণাংশের লাভজনক বাজারে প্রবেশ করেছেন।
এক কথা , চীন ও ভারত হলো আফ্রিকার বিরাট বাজার। দেশদু'টি থেকে আফ্রিকাও পাচ্ছে সস্তা দ্রব্য ও প্রযুক্তি। এবং দেশদু'টির উন্নয়নের ধাঁচ তাদের শিখবার মতো দৃষ্টান্ত বলে মনে করে ।
|