v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-08-17 14:14:09    
উত্তর-পূর্ব বাঘের উদ্যান

cri
    বন্ধুরা, বাঘ হল বিশ্বের বিলুপ্তির মুখে পড়া বন্য প্রাণী। অন্যান্য প্রজাতির বাঘের তুলনায় চীনের উত্তর-পূর্ব ডাশিংএনলিন আর ছাংবাই সেন সংলগ্ন এলাকায় বসবাসরত উত্তর-পূর্ব বাঘের চেহারা বড় এবং মেজাজ হিংস্র। এই বাঘের লোম চকচক করে। সুতরাং উত্তর-পূর্ব বাঘকে ' বাঘের রাজা' বলে মনে করা হয়। আজকের এই আসরে আপনাদের চীনের উত্তর-পূর্ব বাঘের জন্মস্থানে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছি। সেখানে আপনারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় উত্তর-পূর্ব বাঘ লালনপালনের ঘাঁটি---উত্তর-পূর্ব বাঘের উদ্যান দেখতে পাবেন। একদম কাছে থেকে এ সব হিংস্র প্রাণীর বাস্তব জীবন দেখতে পারবেন। এখন শুনুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নিজস্ব সংবাদদাতার লেখা একটি প্রতিবেদন।

    উত্তর-পূর্ব বাঘের উদ্যান হেইলুংচিয়াং প্রদেশের হারবিন শহরের উত্তর অংশে অবস্থিত। এখানে ৪ শতাধিক উত্তর-পূর্ব বাঘ পালন করা হয়। এটা হল বিশ্বের সবচেয়ে কড় আকারের উত্তর-পূবৃ বাঘ লালনপালনের ঘাঁটি। চলতি বছরের বসন্তকালের এক সকালে সংবাদদাতা এই বাঘের উদ্যানে পৌঁছেন। এক পাহাড়ের মাঝখানে উত্তর-পূর্ব বাঘ সংবাদদতাতার নজরে পড়ল। এ সব বাঘ দলে দলে বনে অথবা পুকুরের পাশে হাঁটাহাঁটি করছিল। কয়েকটি বাঘ তুষার আছন্ন মাটিতে শুয়ে আছে। তারা রৌদ্রস্নান করার সঙ্গে সঙ্গে সকালের নাস্তার অপেক্ষা করছে।

    বয়স অনুযায়ী উদ্যানের বাঘগুলো আটটি আলাদা আলদাআলাদা উদ্যানে রাখা করা হয়। বাঘ উদ্যানের কর্মচারী ডু মিন শিয়েন গত দশ বছর ধরে এই উদ্যানের গাইড হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি প্রতি দিন জীপ চালিয়ে উদ্যানের ভিতরে টহল দেন। তাঁর প্রধান কাজ হল বাঘগুলোকে খাবার দেওয়া এবং ছোট বাঘগুলোকে লালনপালন করেন। তিনি এখানকার প্রত্যেকটি বাঘ চিনেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি বাঘের নম্বর আর ডাক নাম বলতে পারেন। তিনি মাঝে মাঝে বাঘ শনাক্ত করার গোপনীয়তা পযটর্কদের বলেন। তিনি বললেন, যদি আপনি বাঘকে শনাক্ত করতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমে বাঘের মুখ দেখতে হবে। সাধারণত বাঘের মুখে লোমের রং ভিন্ন। তারপর বাঘের হাঁটাহাঁটির ভঙ্গী লক্ষ্য করতে হবে। কারণ মানুষের মতো বাঘের হাঁটার ভঙ্গীও এক রকম নয়।

    কথা বলতে বলতে আমাদের গাড়ী বাঘগুলোর এলাকায় পৌছে যায়। সঙ্গে সঙ্গে প্রায় বিশটি বাঘ আমাদের কাছে এগিয়ে আসছিল। বুদ্ধিবান বাঘগুলো অনেক দূর থেকে আমাদের জীপের আওয়াজ শনাক্ত করতে পারে। মিস্টার ডু মিন শিয়েন বলেছেন, মাংসের জন্যে জন্য মাঝে মাঝে বাঘগুলো গাড়ীর ছাদে লাফিয়ে ওঠে।

    মিস্টার ডু বলেছেন, বাঘগুলোকে খাওয়ানোর পদ্ধতি হল মাংস আর জীবন্ত ুমরগীগুলো সরাসরি বাঘগুলোর কাছে ছুড়ে দেওয়া। গরু আর ছাগল প্রভৃতি বিরাটাকারের জীবন্ত প্রাণীগুলো জীপের পিছন দিকে ঠেলে দিতে হবে। এ সব খাবার দেখে বাঘগুলো খাবারের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জীপের জানালা থেকে আমরা দেখতে পেলাম, প্রায় তিন মিটার দূরে একটি বাঘ একটি মুরগী ছিনিয়ে নেয়ার পর সুরগীর পালক টেনে তুলতে শুরু করল। জানা গেছে , বাঘগুলোর হিংস্রতা রক্ষা করার জন্যে বাঘের উদ্যান বাঘগুলোর জন্যে বুনো প্রাণীদের বসবাস করার অনুরুপ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কখনও কখনও খাবার নিয়মিত দেয়া হয় না, মাঝে মাঝে একেবারে খাবার দেয়া হয় না। এখন এখানকার বাঘগুলোর হিংস্রতা মোটামুটি পুনরুদ্ধার হয়েছে। জানা গেছে, ত্রিশ মিনিটের মধ্যে একটি বাঘ একটি গরু ধরতে পারে। মিস্টার ডু মিন শিয়েন বলেছেন, বতর্মানে বাঘ প্রাণীর উপর আক্রমণ করা উদ্যানের একটি দৃশ্য। অনেক পযর্টক বিশেষভাবে এই উদ্যানে গরু, ছাগল আর জীবন্ত মুরগীগুলোর উপর বাঘগুলোর আক্রমন দেখতে আসেন। তিনি বলেছেন, উত্তর-পূর্ব বাঘ এক ধরনের বুদ্ধিমান প্রাণী। একজন গাড়ী চালক বাঘকে তাঁর গাড়ীর চাকার উপর পেসাব করতে দেননি। এই গাড়ী চালক ঝাড়ু দিয়ে এই বাঘকে মারলেন। এর পার যে কোন সময় যখন এই গাড়ী চালক উদ্যানে ঢুকেন তখন এই বাঘ তাঁর গাড়ীর পিছনে থাকে। যখন গাড়ী থামে তখন যেন এই বাঘ গাড়ীর সামনে দাড়িয়ে চালকের গতিরোধ করে। পরে সবাই এই গাড়ী চালককে একটি প্রস্তাব করেছেন যে, প্রত্যেক বার যখন তিনি এই উদ্যানে ঢুকেন তখন এই বাঘের জন্যে কিছু মাংস নেন। এই গাড়ী চালক পরে সরার প্রস্তাব অনুযায়ী তাই করেছেন। দশ বারো দিন পর তাঁর উপর এই বাঘের বৈরীতা আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

    বর্তমানে বাঘগুলোর সাধারণ জীবনের প্রভাব না ফেলার অবস্থায় এই বাঘের উদ্যান প্রত্যেক দিন প্রায় শতাধিক দশর্ককে স্বাগত জানায়। এই বাঘের উদ্যানে পেইচিং থেকে আসা একজন নারীর সঙ্গে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতার দেখা হল। তিনি বিশেষভাবে পেইচিং থেকে এ সব বাঘ দেখতে এসেছেন। তিনি সংবাদদাতাকে বললেন, উত্তর-পূর্ব বাঘ বিলুপ্তির মুখে পড়া এক ধরনের বন্য প্রাণী। এক ধরনের অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য বন্য প্রাণী। একটু আগে আপনারা দেখেছেন যে কিভাবে এ সব বাঘকে খাওয়ানো হয়েছে। মনে হয় আমরা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গেছি। বাঘগুলোকে এভাবে খাওয়ানোর কারণ এই যে, মানুষ একদম কাছে থেকে বাঘগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আমার মনে হয় আপনাদের মধ্যে অনেকেই প্রথম বার এসব দেখেছেন।

    বিজ্ঞানবিদদের মতে বতর্মানে বিশ্বে বন্য উত্তর-পূর্ব বাঘের সংখ্যা ৫ শোরও কম। পযর্টকদের জন্যে খুব কাছে থেকে বাঘদের উপভোগ করার ব্যবস্থানেওয়ার পাশে পাশে এই বাঘের উদ্যানের আরেকটি কতর্ব্য আছে। এ প্রসঙ্গে উদ্যানের ম্যানেজার হওয়াং লি গান বলেছেন, এই বাঘের উদ্যান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য হল, এক দিকে পযর্টন শিল্প চালু করা, অন্য দিকে বাঘের হিংস্রতা পুনরুদ্ধার করা। সুতরাং এখানে আপনারা সার্কাস দলের প্রদর্শনী দেখতে পাবেন না । আপনারা যা দেখেছেন তা হল বছরের চার ঋতুতে বাঘগুলো খোলা মাটিতে জীবনযাপন করছে।