আজ চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। লোকেরা প্রায়ই এমন কাহিনী শুনতে পান যে, "অমুক লোক রাতারাতি ধনী হয়েছে"।
(মাও খ্যানখ্যান)
এ বছর মাও খ্যানখ্যানের বয়স মাত্র ২২ বছর। অন্যান্য শহুরে যুবকের মতো তাঁর শখ : কে টি ভিতে গিয়ে গান গাওয়ার। তবে তাঁর আসল পরিচয় এই যে, তিনি পেইচিং আইহাং শিল্প কোম্পানির সি ই ও। তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত এই কোম্পানি এখন পেইচিংয়ে ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ মার্কিন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করে এক বিশেষ ডিজিটাল গেমস ঘাঁটি স্থাপন করছে। তিনি বলেছেন, "২০১০ সালের ২৮ মে বিকেল ৩টা ৫৮মিনিটে 'এ' দেশের একটি সামরিক বিমান গুরুত্বপূর্ণ গোয়েণ্দা তথ্য পরিবহনের মাঝপথে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভূপাতিত হওয়ায় গোয়েন্দা তথ্যটিও হারিয়ে গেছে। অতএব 'এ' এবং 'বি' দেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার জন্য এক ভীতিকর যুদ্ধ বেধে উঠে।"
মাও খ্যানখ্যান তাঁর পরিচালিত কোম্পানির দেয়া নতুন ধারণা আনুযায়ী তৈরী একটি পার্কের এক বিশেষ গেম বা সত্যিকারের খেলার কথা বলছিলেন। প্রত্যেক লোক এই পার্কে প্রবেশ করলে যার যার উপযুক্ত বিশেষ পোষাক পরতে হয় এবং খেলায় যার যার জন্য নির্ধারিত বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হয়। হাইটেক দিয়ে আয়োজিত এই খেলায় শত শত লোক অংশ নিতে পারে । এটি গুপ্ত ধন সন্ধানের জন্য প্রতিদ্বন্দিতা চালানোর খেলা।
অনুরূপ পরিকলপনা আগে ইলেক্ট্রনিক গেমসে ব্যবহার করা হতো , এখন সত্যিকারের মানুষ এই খেলায় অংশ নিচ্ছেন। এটা মাও খ্যানখ্যানের স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়িত হবার এক বিরাট প্রকল্প। তিনি বলেছেন "এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে পারলে ৫ বছর পর তা থেকে প্রতি বছর আয় হবে ১২ থেকে ২৩ কোটি মার্কিন ডলার। আমি অনুমান করে বলতে পারি, তা প্রায় ২০ কোটি ডলার হবে।"
২২ বছর বয়সী মাও খ্যানখ্যান এই প্রকল্পে এক পয়সাও পুঁজি বিনিয়োগ করেন নি, শুধু তাঁর উদ্ভাবিত চমত্কার ধারণার জন্য তিনি এই বার্ষিক আয় ২০ কোটি ডলারের এই বিরাট প্রকল্পের ২০ শতাংশ শেয়ার পেয়েছেন।
(লি সিয়াং)
আমরা আর একজন যুবকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। তাঁর নাম লি শিয়াং । তিনি পিসিপি'ওপি ওয়েবসাইটের সি ই ও। তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত আইটি মিডিয়া ওয়েবসাইট বিশেষভাবে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল পণ্যকে ওয়েবসাইটে দেখানোর জন্য এক প্ল্যাটফর্ম যুগিয়েছে। তাঁর ওয়েবসাইট সম্পর্কে লি শিয়াং বলেছেন, " আমরা এক রকম ধারাবাহিক পুরো সেট পরিসেবা সরবরাহ করি, এ-রকম পরিসেবা বর্তমান ইণ্টার্নেটের ওয়েবসাইটগুলোতে অদ্বিতীয়। হয়ত আমরা বর্তমানে সর্বপ্রথমে ওয়েব ১.০ এবং ওয়েব ২.০কে খুব ভালভাবে সমন্বিত করেছি এবং আমাদের ওয়েবসাইটই এইভাবে মুনাফা অর্জনকারী প্রথম ওয়েবসাইট।"
২০০৫ সালে পিসিপি'ওপি ওয়েবসাইটের আয় ছিল ২৫ লক্ষ মার্কিন ডলার, তার মুনাফা ১২.৫ লক্ষেরও বেশি। ২৪ বছর বয়সী লি শিয়াং তাঁর এই ওয়েবসাইটের ৫০ শতাংশেরও বেশি শেয়ারের অধিকারী ।
উপরোক্ত দুই যুবকের সাফল্য খুবই বিস্ময়কর । কিন্তু আর একটি কথা আরও বেশি বিস্ময়কর। কথাটি হলো, দুজনের কেউই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন নি। অর্থাত্ উচ্চ শিক্ষা পান নি। তা'হলে তাঁরা কিভাবে আজকের এই সাফল্য অর্জন করতে পেরেছেন?
মাও খ্যানখ্যান উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময়ে ভূগোল পরীক্ষায় খুব কম মার্ক পেয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন নি। কিন্তু তিনি দাবি করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়ার অর্থ যে তিনি লেখাপড়ার চেষ্টা করেন নি, তা নয়।তিনি বলেছেন, "সেই সময়ে মাইক্রোসফ্ট ওয়্যার কোম্পানির আইডেণ্টিফিকেশন এবং সিস্কো কোম্পানির আইডেণ্টিফিকেশন চীনে খুবই মূল্যবান বলে গণ্য করা হতো। তখন ১৭ বছর বয়সে আমি এই দুটো বিরাট আন্তর্জাতিক কোম্পানির আইডেণ্টিফিকেশন পেয়েছি ।অবশ্য এগুলো এখন খুব বেশি হয়েছে বলে তাত্পর্য কমে গেছে। সেই সময়ে গোটা এশিয়া মহাদেশে ১৮ বছরের কম বয়সে শুধু দু'জন তরুণ সবক'টি বড় বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানির মোট সাত-আটটা আইডেণ্টিফিকেশন পেয়েছে। আমিই দু'জনের একজন ছিলাম।"
পিসিপি'ওপি ওয়েবসাইটের লি শিয়াংয়ের সাফল্যের মূলে রয়েছে কম্পিউটারের প্রতি তাঁর ভালবাসা। নিম্ন-মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি পাগলের মতো কম্পিউটার ভালবেসেছেন। উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময়ে তিনি একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট চালু করেছেন। তাঁর ওয়েবসাইটে বিশেষভাবে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের কথা ব্যাখ্যা করা হয়। তিনি বলেছেন, "সেই সময়পর্ব শুধু কয়েক মাস, আমার ওয়েবসাইটে প্রতিদিন প্রায় দশ হাজার লোক ভিজিট করেন।"
লি শিয়াং নিজেও ভাবতে পারেন নি যে, তার ব্যক্তিগত শখ তাঁর জন্য ব্যবসার সুযোগ এনে দেবে। বিজ্ঞাপণের ব্যবসায়ীরা লি শিয়াংয়ের ওয়েবসাইটে পুঁজি বিনিয়োগ করতে শুরু করলেন। প্রতিমাসে ৭৫০ মার্কিন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ। এইভাবে বিনিয়োগ ৩ বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার আগেই লি শিয়াং এই পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং নিজের ওয়েবসাইটে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করলেন।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ হারানোর জন্য লি শিয়াং এখন কিছুটা দু:খ বোধ করেন । তিনি মনে করেন, তাতে তাঁর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতার অভাব । কিন্তু মাও খ্যানখ্যান এবং লি শিয়াং উভয়েই মনে করেন, তরুণদের সাফল্যের জন্য মূল কথা সার্টিফিকেট অর্জন নয়, বরং সঠিক লক্ষ্য বেছে নেয়া এবং এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কঠোর প্রয়াস একান্ত প্রয়োজন।
লি শিয়াং জানিয়েছেন, আত্ম-কর্মসংস্থানের পথে গত আট বছরে তিনি নানা অসুবিধা ও বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন। তাতে তিনি মূল্যবান অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পেরেছেন।
তাঁদের সামনে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হবে । তাঁদের ভবিষ্যত্ কি-রকম হবে এখনও চূড়ান্তভাবে বলা যায় না। তবে তাঁদের সৃজনী শক্তি চীনের ঐতিহ্যিক বাজারের খেলার নিয়মবিধি পরিবর্তন করছে এবং এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে।
|