v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-08-16 20:38:54    
এ জীবনে আমি শুধু একজন ভালো চিকিত্সক হতে চাই

cri
    ৫৬ বছর ধরে চিকিত্সা কাজে নিয়োজিত একজন বুড়ো লোক একটি মাত্র অপারেশনের ছুরি দিয়ে হাজার হাজার লোকের জীবন বাঁচিয়ে তুলেছেন । তবে তিনি নিজে বহু বছর ধরে অতি ক্লান্তিতে কাজ করে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে কর্মস্থলেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন । নিজের রোগের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সময়েও তিনি সবসময় তাঁর রোগীদের কথা ভাবছেন যারা এখনো তাঁর দ্বারা অপারেশনের জন্যে অপেক্ষা করছেন । তিনি হলেন চীনের পেইচিং সামরিক এলাকার সাধারণ হাসপাতালের প্রাক্তন শল্য বিভাগের পরিচালক হুয়া ই ওই । আজকের অনুষ্ঠানে তাঁর সহকর্মী ও রোগীদের মুখে মুখে প্রশংসিত এই চিকিত্সক সম্পর্কে কিছু বলছি আমি শি চিং উ ।

    ১৯৩৩ সালে হুয়া ই ওই উত্তর চীনের বন্দর শহর থিয়ান চিনের একটি চিকিত্সকের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা ও মা উভয়ই স্থানীয় প্রখ্যাত চিকিত্সক । পরিবারের প্রভাবে হুয়া ই ওইও একজন চিকিত্সক হন । তিনি বলেছেন ,

    এ জীবনে আমি চিকিত্সক হয়েছি । আমি শুধু একজন ভালো চিকিত্সক হতে চাই । একজন চিকিত্সক হিসেবে আমার ইচ্ছা ছিল আমি রোগীদের দু:খকষ্ট লাঘব করতে এবং তাদের আস্থা অর্জন করতে পারি । আমার জন্যে এটাই সবচেয়ে সুখের ব্যাপার ।

    হুয়া ই ওই ৫৬ বছরের চিকিত্সার অনুশীলনের মাধ্যমে তার নিজের প্রতিশ্রুতি পুরোপুরিই পালন করেছেন । তিনি বহু রোগীর আস্থাবান একজন সুপরিচিত চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেছেন । তিনি সাফল্যের সংগে হাজার হাজার রোগীর জন্যে অস্ত্রোপচার করেছেন । তিনি সর্বদাই বিশেষ মনোযোগের সংগে প্রতিটি অপারেশন সম্পন্ন করেন এবং সবসময় রোগীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেন ।

    অন্ত্র সেলাইয়ের অপেরেশনের সময়ে সেলাই কল দিয়ে করলে কম সময় ও শক্তি লাগে । তবে এর জন্যে রোগীদের১০ থেকে ২০ হাজার ইউয়ান বেশি ব্যয় করতে হয় । যেসব রোগীর অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন স্বচ্ছল নয় , সেসব রোগীদের ব্যয় বাঁচানোর জন্যে হুয়া ই ওই নিজের বার্ধক্যের পরোয়া না করে ঐতিহ্যিক সেলাইয়ের কৌশল ব্যবহার করে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা ধরে অপারেশন টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে অপারেশন সম্পন্ন করেন । তাঁর সহকর্মী , পেইচিং সামরিক এলাকার সাধারণ হাসপাতালের শল্য বিভাগের উপপরিচালক চাং তুং বলেছেন ,

    হুয়া ই ওইয়ের দক্ষতা খুব বেশি । তিনি সুনিপুণভাবে অপারেশন করতে পারেন । তাঁর সেলাইয়ের কৌশল সেলাই কলের চেয়ে বিন্দুমাত্র মন্দ নয় ।

    গত কয়েক দশকের মধ্যে চিকিত্সার ক্ষেত্রে হুয়া ই ওই কোনো ভুল করেন নি । প্রতিটি অপারেশনের আগে তিনি সবসময় মনোনিবেশের সংগে রোগীদের রোগের অবস্থা জেনে নেন , তাদের রোগের ইতিহাসের পর্যালোচনা করেন এবং অপারেশনের সময়ে কোন দিকে নজর দিতে হবে , তিনি ভালোভাবে তা জেনে নেন । তিনি কখনো অন্ধভাবে কাজ করেন না । এই কারণে তিনি অসাধারণ কৃতিত্ব স্থাপন করেছেন ।

    একজন ভালো চিকিত্সক হতে হলে শুধু সুনিপুণ চিকিত্সা কৌশলের অধিকারী হলেই যথেষ্ট হবে না , রোগীদের প্রতি তাদের দয়ামায়াও থাকতে হবে । রোগীদের প্রতি হুয়া ই ওইয়ের ভালোবাসা প্রতিটি সুক্ষ্ম স্থানে প্রতিফলিত হয় । রোগীদের স্পন্দন শোনার সময়ে তিনি প্রথমে স্টিথোফোন গরম করে নেন । রোগীদের অপারেশন করার সময়ে তিনি সবসময়ই আগে অপারেশন রুমে এসে অপারেশনের নানা প্রস্তুতি নেন । প্রতিবার অপারেশনের পর তিনি নার্সদের সংগে রোগীদের ট্রলিতে তুলে রোগী কক্ষে পাঠিয়ে দেন । রোগীরা জেগে উঠলে তিনি সর্বদাই যথাসময়ে তার বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে অপারেশনের পরবর্তী অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং রোগীদের অনুভুতি শুনেন । এসব ছোটখাটো ব্যাপার অন্যদের কাছে তুচ্ছ হলেও তিনি কয়েক দশক ধরে তা পালন করে গেছেন ।

    ২০০৫ সালের ২৫ জুলাই তিনি তার জীবনের সর্বশেষ অপারেশন সম্পন্ন করেন । তিনি রোগিনী ইয়াং হুয়ার অপারেশন করেছেন । তার মনে এখনো চিকিত্সক হুয়া ই ওইয়ের অপারেশন করার দৃশ্য জাগরূক রয়েছে । তিনি বলেছেন , পরিচালক হুয়া দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন । তিনি আমার উদ্দশ্যে মাথা নেড়েছেন । চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি সত্যিই ভদ্র নম্র । আবার তিনি খুবই স্নেহময়। তাকে দেখে রোগীদের মনে এক রকম নিরাপত্তা বোধ সৃষ্টি হয় ।

    অথচ ইয়াং হুয়া কল্পনাও করতে পারবেন না যে , এই সময়ে হুয়া ই ওইয়ের পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে । তিনি এও ভাবতে পারেন নি যে , যেদিন তাঁর জন্যে হুয়া ই ওই অপারেশন করেছেন , সেই দিন তার নিজের পরীক্ষা নেয়ার কথা ছিল । তবে তিনি অপারেশন রুমে গিয়ে প্রথমে ইয়াং হুয়ার জন্যে অপারেশন সম্পন্ন করেন । তারপর তিনি ক্লান্ত শরীর নিয়ে পরীক্ষা নিতে যান । পরের দিন হুয়া ই ওইকে রোগী কক্ষে পাঠানো হয় । ৮ দিন পর ক্যান্সারের কোষ তার পাকস্থলীতে ছড়িয়ে পড়ে । ফলে তার পাকস্থলী কেটে দেয়া হয় ।

    লোকদের স্মৃতিতে হুয়া ই ওইয়ের মুখে সবসময় হাসি থাকে । তবে তিনি এখন রোগীর বিছানায় শুয়ে আছেন । রোগীরা দলে দলে তাঁকে দেখতে আসেন । দেখে তিনি বেদনায় কেঁদে ওঠেন । কারণ তাঁর অসুস্থতার জন্যে তিনি আর তাদের চিকিত্সা করতে পারছেন না । তিনি তার সহকর্মীদের বলেন , যেসব রোগী তার অপারেশনের অর্ডার নিয়েছেন , তাদের কাছ আমার হয়ে থেকে মাপ চাইবেন । কেন না তিনি এবার তার অর্ডার রক্ষা করতে পারবেন না ।

    রোগী বিছানায় থেকেও হুয়া ই ওই তার চিকিত্সার ব্রতকে ভুলতে পারেন না । তিনি তীব্র ব্যাথা সহ্য করে তার রোগের চিকিত্সার প্রক্রিয়ায় দেখা দেয়া নানা ধরণের প্রতিক্রয়া লিখে নেন । তিনি আশা করছেন যে, এসব খাতা তার মত রোগীদের চিকিত্সার ক্ষেত্রে কিছু সহায়তা করা যাবে । তার মৃত্যুর পর তিনি তার লাশ দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যাতে তা চিকিত্সার কাজে লাগানো যায় । এই অন্তিম ইচ্ছা তিনি তার সহকর্মী অধ্যাপক তিং হুয়া ইয়ের কাছে প্রকাশ করেছেন । অধ্যাপক তিং বলেছেন ,

    এই বিছানার পাশে হুয়া ই ওই আমার কাছে তার লাশ দানের কথা বলেছেন । তিনি বলেছেন ,আমার পাকস্থলীর ক্যান্সারের জন্যে পাকস্থলীকে কেটে ফেলা হয়েছে । এই অপারেশনের পর আনুসংগিক অনেক অসুখ দেখা দিয়েছে । আমি আশা করি , আমার মৃত্যুর পর আমার লাশ খন্ডন করা হবে যাতে রোগের আসল কারণ খুঁজে বের করা যায় ।