২০০৬ সালের ৯ আগস্টচীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উন্নয়ন পরিষদের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের ঢাকা শিল্প ও বাণিজ্য সমিতির প্রতিনিধি দল চীন সফরে এসেছেন । ১০ আগস্ট বিকেলে (CCPIT)'র ভবনে তাঁরা চীনা শিল্পপতিদের সঙ্গে বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে মত বিনিময় করেছেন । চীন ও বাংলাদেশের শিল্পপতিরা আন্তরিকভাবে দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সাফল্য, সহযোগিতার সুউজ্জ্বল ভবিষ্যত এবং পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে বাস্তব আলোচনা করেন ।
মতবিনিময়কালে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিস্টার আশফাকুল রহমান এবং (DCCI)'র প্রতিনিধি দলের নেতা মিস্টার এম.এ. মোমেন আন্তরিকভাবে চীনা শিল্পপতিদের জন্যে বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগের কল্যাণকর দিক এবং পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ সম্পর্কে নানা তথ্য জানান । এতে চীনা শিল্পপতিরা বাংলাদেশের বাজার সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পেরেছেন । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সহযোগিতা অব্যাহতভাবে বাড়ছে,দু'দেশের বাণিজ্য মূল্যও দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশে চীনের রপ্তানী মূল্য প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়েছে , চীনে বাংলাদেশের রপ্তানী মূল্যও ২০০৪ সালের চেয়ে দ্বি'গুণ হয়েছে ।
এবারের প্রতিনিধি দলের নেতা মিস্টার এম.এ. মোমেন ছাপা, প্রকাশনা ও প্যাকেজিংয়ের ব্যবসা করেন । এবার পেইচিংয়ে তাঁর প্রথম সফর । এর আগে তিনি চীনের অন্যান্য শহরে গিয়ে বাণিজ্য ফোরামে অংশগ্রহণ করেছিলেন ।
চীনা শিল্পপতিরা এবারের আলোচনা খুব পছন্দ করেছেন । সম্মেলনের পর তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন । পিকিং পেইপেইনিয়াও পুঁজি বিনিয়োগ পরামর্শ কোম্পানির সহকারী ম্যানেজার জেনারেল ম্যাডাম চু ছুইফেন বলেছেন, আমার অনেক বন্ধুর বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগের ইচ্ছা আছে । কারণ আমাদের চোখে বাংলাদেশ হল নতুন অর্থনৈতিক বিনিয়োগের উর্বর স্থান। কৌতুহল নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আমি ৮ বার বাংলাদেশে গিয়েছিলাম । আমার বন্ধুরা সংযুক্ত আরব আমীরাত আর ভিয়েত্নামে অনেক চীনা শপিং মল নির্মাণ করেছিলেন । আমরা বাংলাদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্য হল সেখানকার ব্যবসার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা । বাঙ্গালীরা খুব মিশুক এবং অতিথেয়তাপরায়ণ । তাঁরা মনে করেন চীনারা হল তাঁদের ভাল বন্ধু । ২০০৫ সালে প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়াপাও বাংলাদেশ সফর করার পর , দু'দেশের যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে । এর আগে হংকং থেকে ঢাকা যাওয়ার বিমান প্রত্যেক সপ্তাহে ছিল তিনবার । পরে প্রত্যেক সপ্তাহে পাঁচ বার বাড়ানো হয়েছে । পেইচিং-খুনমিং-ঢাকা নতুন বিমান লাইন চালু হওয়ার পর দু'দেশের অর্থনৈতিক যোগাযোগ ও উন্নয়ন নতুন মাত্রা পেয়েছে ।
ম্যাডাম চু বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগ করে লাভজনক ব্যবসা সম্বন্ধে বলেছেন, বস্ত্রপণ্য, চীনের উত্পাদিত রেশমী গলাবন্ধ প্রক্রিয়াকরণের জন্যে বাংলাদেশে রপ্তানী করা হয় এবং বাংলাদেশে প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পন্ন করার পর ,তা আবার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানী করা হয় । এভাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লাভবান হওয়া যায় । চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বাজার উন্নত করার প্রধান কারণ হল বাংলাদেশের নীতি বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সহায়ক । বাংলাদেশ হল জাতিসংঘের দারিদ্র মোচনে সাহায্যপ্রাপ্ত দেশ । এখানে শ্রম শক্তি সস্তা । বিশেষ করে চীনের রেশম বাংলাদেশের ধনী লোকদের মধ্যে বেশ সমাদৃত হয়েছে । ধনী নারীরা সবসময় রেশম নিয়ে তাঁদের শাড়ি তৈরী করেন । তাছাড়া, বাংলাদেশে আমার বন্ধুদের বিনকার্ড কারখানা, গাড়ি মেরামত কারখানা এবং রেস্টুরেন্ট সবই ভালভাবে উন্নত হচ্ছে ।"
এবারকার বৈঠকে চীন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ওয়েবসাইটের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, বৈঠকের সংগঠক মিস্টার ওয়াং চিনশেং'র সংগে আমাদের পরিচয় হয়েছে । চীন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ওয়েবসাইট একটি উন্নয়নশীল ওয়েবসাইট । এটা চালু হওয়ার উদ্দেশ্য হল চীন ও বিদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্থ-বাণিজ্য যোগাযোগ করার জন্যে একটি প্ল্যাটফোর্ম স্থাপন করা ,যাতে বিভিন্ন পক্ষকে পুঁজি বিনিয়োগের তথ্য জানানো যায় । এ ওয়েবসাইটের ঠিকানা হল সি.আই.সি.এন. ডট ও.আর.জি. ডট সি.এন । ওয়েবসাইটে চীনা ও ইংরেজি ভাষা রয়েছে । মিস্টার ওয়াং সংবাদদাতাদের সাক্ষাত্ দেয়ার সময়ে বলেছেন, এবারের বৈঠকের পর আমি মনে করি বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় দেশ । (CCPIT)'র কর্মীরা বলেছেন, বাংলাদেশে চীনের তৈরি পোশাকের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের বিরাট সুযোগ আছে । কিন্তু চীনের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাজার সম্পর্কে ধারণা না থাকায় , তারা মনে করে বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ নেই । আজকের বৈঠকের মাধ্যমে আমরা অবশ্যই এ সুখবর চীনা শিল্পপতিদের জানাবে ।
চীন ও বাংলাদেশ হচ্ছে সুপ্রতিবেশী বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু'দেশের আদান-প্রদান অনেক বেড়েছে । আশা করি এবারের বৈঠকের মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশের শিল্পপতিরা আরো ভালো সহযোগিতা করবেন, দু'দেশের বাণিজ্য উন্নয়নে আরো বেশি অবদান রাখবেন ।
|