সু ছি হলেন চীনের বিখ্যাত নৃত্যনাট্য সম্পাদক। তিনি একটি খুব বিখ্যাত বড় আকারের নৃত্যনাট্য "সি লু হুয়া ইয়ু"র সম্পাদক ছিলেন। এবং তিনি চীনের বিখ্যাত তুন হুয়াং বিষয়ক পন্ডিত সি চেন কুয়ানের সঙ্গে সহযোগিতা চালিয়ে তুন হুয়াং নৃত্যনাট্য মঞ্চে উপস্থাপন করেছেন।
চীনের লান চৌ শহরে সু ছি নামক একটি "তুন হুয়াং নাচের স্কুল" অবস্থিত। সু ছি কানসু প্রদেশের তুন হুয়াং শিল্পকলা একাডেমি থেকে অবসর নেয়ার পর এই স্কুলে কাজ করছেন। ৬৩ বছর বয়স্ক সু ছি দেখতে কিন্তু শুধু ৫০ বছরের মতো। তিনি একজন দয়ালু নানীর মতো শিশুদের যত্ন নেন। কিন্তু যখন নাচের ক্লাস শুরু হয়, তার ভঙ্গী থেকে বুঝা যায় তিনি একজন অভিজ্ঞ নৃত্যশিল্পী।
সু ছি তাঁর নাচ শেখার অভিজ্ঞতা আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে তিনি নাচ পছন্দ করেন। সেই সময়ে তাঁর স্বপ্ন ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা। কিন্তু পরিবারের পরিস্থিতি ভালো না বলে তিনি কানসু প্রদেশের লান চৌ শিল্পকলা ইনস্টিটিউটের নাটক দলে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:
"মিডল স্কুলে আমার পড়াশোনা খুব ভাল। সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিচালনাও করতাম। তাছাড়া আমি নিয়মিত শরীরচর্চাও করতাম।তাই নাচের জন্য শরীরের ভিত্তি আমার তৈরী হয়েছে। কিন্তু নাচ তো আমার কাছে একটি পুরোপুরি নতুন জিনিস।"
এভাবে তিনি কানসু প্রদেশের নাচ গান দলে ভর্তি হয়ে একজন পেশাগত নৃত্যশিল্পী হয়েছেন। স্কুলের বিশেষ অভিজ্ঞতার জন্য সুছির উপকার হয়েছে। তিনি সব সময় দলের নতুন নাচ ও অনুষ্ঠানের রচনায় অংশ নেন। আস্তে আস্তে তিনি নাচ রচনার দিকে উন্নতি করেছেন।
বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষ দিকে কাসু নাচ গান দলের "সিল্ক পথের ফুল ও বৃষ্টি" নামক একটি নৃত্যনাট্য" মঞ্চস্থ হয়েছে। তা প্রথম বারের মতো প্রাচীন তুন হুয়াং গুহার দেয়াল-চিত্রকে নাচের রূপে মঞ্চে দর্শকদের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠান শুধু চীনের দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা নয়, উত্তর কোরিয়া, জাপান, ইতালি, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, রাশিয়া ও লাটভিয়া ইত্যাদি দেশেও খুব জনপ্রিয় হয়েছে। দর্শকরা তাকে "জীবন্ত দেয়াল-চিত্র" বলে ডাকে।
এই নাচ রচনার প্রক্রিয়া নিয়ে সু ছি বলেছেন:
" এই প্রক্রিয়া আসলে একটি শিক্ষার প্রক্রিয়া। আমি বইপত্র থেকে শিখি, তুন হুয়াংগুহার দেয়াল -চিত্র দেখে শিখেছি। নতুন নাচ সৃষ্টির সময় শুধু ভাবতে থাকলে চলবে না। দেয়াল চিত্রের কিছু ধারণা আমাদের মাথায় ঢুকে, আমার নিজের চেতনার একটি অংশে পরিণত হয়েছে। তারপর তা নাচের রূপে মঞ্চে দর্শকদের জন্য উপস্থাপন করি।"
এরপরে ১৯৯২ সালে তুন হুয়াংয়ের বিখ্যাত পন্ডিত সি চেন কুয়ান গবেষণা চালিয়ে তুন হুয়াংগুহার প্রাচীন সংগীতের নোটেশনের সুর সৃষ্টির প্রক্রিয়া জানতে পেরেছেন। তিনি তা আবার মঞ্চে দর্শকদের দেখানোর ইচ্ছা সু চি'র কাছে প্রকাশ করেছে।
সু ছি বলেছেন, সি জেন কুয়ান অনেক ঐতিহ্যিক তথ্য গবেষণা করেছেন এবং প্রাচীণকালের কবিতা, নাচ ও সংগীত সমন্বিত করে এই নৃত্যনাট্য সৃষ্টি করে মঞ্চস্থঞ করার কথা ভেবেছেন। পরে সু ছি'র কাছে এসে তারা একসঙ্গে এই নৃত্যনাট্য সম্পাদন করার প্রস্তাব দিয়েছেন। সু ছি রাজি হন। সু ছি বলেছেন:
"সি জেন কুয়ানের একটি চকত্কার ধারণা হলো তিনি কবিতা, নাচ ও সংগীত সমন্বিত করে এক সৃত্যনাট্য মঞ্চে অভিনয় করতে চান। তা আমার ধারণার সঙ্গে মিলে গেছে। তার সঙ্গে সহযোগিতা চালিয়ে আমার খুব ভালো লাগে।"
১৯৯২ সাল থেকে তারা একসাথে বড় আকারের নৃত্যনাট্য "তুন হুয়াংয়ের প্রাচীন সংগীত" তৈরী শুরু করেছেন। সু ছি প্রাচীণকালের তথ্য অনুযায়ী, নৃত্যনাট্যের চারটি প্রধান দৃশ্য নির্ধারণ করেছেন। এরা হলো রাজপ্রাসাদের নাচ, রাস্তাঘাট সাধারণ মানুষের নাচ, সীমান্ত এলাকার সৈন্যদের নাচ এবং ধর্মীয় নাচ। গোটা নৃত্যনাট্য খুবই চমত্কার। তা চীনের নাচ মহলের উচ্চতম পুরস্কার-ওয়েন হুয়া পুরস্কার জয় করেছে। এর পরে সু ছি "তুন হুয়াং নাচের বিশেষ শৈলী" সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেছেন:
" তুন হুয়াং নাচের শৈলী সৃষ্টি করতে শুধু সবাইকে জানাতে চাই, আমাদের দেশের প্রাচীণকালের চমত্কার সংস্কৃতি আছে। আমরা এর থেকে অনেক শিখতে পারি। এবং নৃত্যনাট্য শুধু এক রকম প্রাচীন নাচ নয়, তা বৈচিত্র্যময় রূপে পরিবেশন করা উচিত।"
|