v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-08-15 17:30:26    
হিজবুল্লাহ সশস্ত্রের নিরস্ত্রীকরণের ভবিষ্যত সম্ভাবনা আশাবাদী নয়

cri

 ১৪ আগস্ট লেবানন এবং ইস্রাইল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যুদ্ধবিরতি কার্যকরী করেছে। একই দিন রাতে লেবাননের হিজবুল্লাহ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাসান নাসরাল্লাহ এক ভাষণে বলেছেন, হিজবুল্লাহ ইস্রাইলকে পরাজিত করেছে। তারা রণনৈতিক ও ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করেছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, এখন হিজবুল্লাহ গেরিলাদের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে আলোচনার উপযুক্ত নয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে, লেবানন ও ইস্রাইলের সংঘর্ষের পর হিজবুল্লাহ গেরিলাদের নিরস্ত্রীকরণ আরো কঠিন হয়েছে।

 ১৭০১ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে লেবানন সরকারী বাহিনী আর জাতিসংঘের অস্থায়ী বাহিনী মোতায়েন করার সঙ্গে সঙ্গে ইস্রাইলী বাহিনী লেবানন থেকে প্রত্যাহার করা কথা। লেবাননের হিজবুল্লাহ গেরিলাদের নিরসন্ত্রীকরণ হচ্ছে লেবানন ও ইস্রাইলের মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির অন্যতম শর্ত।

 বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, লেবাননের হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ সহজ কাজ নয়। এর কারণ হচ্ছে, প্রথমতঃ, ১৯৮২ সালে ইস্রাইল লেবাননে অনুপ্রবেশের সময়ে হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯০ সালে লেবাননের গৃহযুদ্ধ অবসানের পর লেবাননের বিভিন্ন দল সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে নিজ নিজ সশস্ত্র দলকে নিরস্ত্র করেছে। কিন্তু হিজবুল্লাহ ইস্রাইলের প্রতিরোধ করার ওজুহাতে নিরস্ত্র হয় নি। এখন হিজবুল্লাহর প্রায় ১০০০ জন সশস্ত্র স্থায়ী বাহিনী এবং দশ হাজার জন মিলিশিয়া-বাহিনী আছে। তা ছাড়া লেবানের রাজনৈতিক মহলে হিজবুল্লাহও একটি লক্ষণীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছে। সংসদে তাদের সদস্য আছে এবং বর্তমান সরকারেও প্রবেশ করেছে। সুতরাং গত বছরের এপ্রিল মাসে সিরিয়া সৈন্য লেবানন থেকে প্রত্যাহারের পর হিজবুল্লাহ গেরিলাদের নিরস্ত্রীকরণ লেবাননের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এক আলোচ্যবিষয়ে পরিণত হয়েছে । তবে এ সমস্যা এখনো অমীমাংসিক রয়েছে।

 দ্বিতীয়তঃ, সবেমাত্র সমাপ্ত লেবানন ও ইস্রাইলের সংঘর্ষে হিজবুল্লাহ সশস্ত্র গেরিলা হিসেবে এক মাস ধরে সামরিক বড় রাষ্ট্র ইস্রাইলের স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর সম্মুখীন হয়েছে। দু'পক্ষ কেউ জয় লাভ করে নি। কিছু আরবী জনমত মনে করে, হিজবুল্লাহ এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বিগত কয়েক দশকে মধ্য প্রাচ্যের যুদ্ধে বিভিন্ন আরব দেশের স্থায়ী বাহিনী তা করতে পারে নি। ইস্রাইলী বাহিনী আশা করেছে, সার্বিক আঘাত হানার মাধ্যমে হিজবুল্লাহ সশস্ত্র ধ্বংস করবে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। হিজবুল্লাহ অপেক্ষাকৃত দুর্বল সামরিক শক্তি দিয়ে ইস্রাইলী বাহিনীকে বড় আঘাত হেনেছে। ছয় বছর আগে লেবাননে হিজবুল্লাহর আক্রমণে এবং জনমতের চাপে ইস্রাইলী বাহিনী লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে সরে গেছে। গত এক মাসের সংঘর্ষে আরব দেশগুলো দেখেছে যে, হিজবুল্লাহ দ্বিতীয় বার ইস্রাইলকে পরাজিত করেছে। বলা যায়, এবারের সংঘর্ষের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ সংগঠনের পূর্বনির্ধারিত সামরিক লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়েছে।

 তা ছাড়া, যুদ্ধ হচ্ছে রাজনীতির ধারাবাহিকতা । যে কোন যুদ্ধ নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য । নিরাপত্তা পরিষদ ১৭০১ নং সিদ্ধান্তে উল্লেখিত হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার দাবিও যুদ্ধোত্তর রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে অন্যতম। কিন্তু হিজবুল্লাহ তার সামরিক সাফল্যকে রাজনৈতিক সাফল্য রূপান্তর করার ক্ষেত্রে পারদর্শী। লেবানন ও ইস্রাইলের সংঘর্ষে হিজবুল্লাহের অসাধারণ কৃতিত্বের দরুণ লেবাননে তার সমর্থনের হার যুদ্ধের আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। হিজবুল্লাহ লেবাননকে রক্ষা করতে পারে এবং ইস্রাইলের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে তারা একমাত্র সশস্ত্র শক্তি এই ধারনা আরো জোরদার হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণের বাধা অবশ্যই আরো বড়।

 বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইস্রাইল সার্বিক যুদ্ধের মাধ্যমে এক মাসের মধ্যে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে পারে নি। এ থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ আর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য সমস্যা যুদ্ধ আর বলপ্রয়োগ দিয়ে নিষ্পত্তি করা যায় না। কেবল লেবাননের অভ্যন্তরীণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক পদ্ধতিতে তা সমাধান করা যায়।