প্রসূতিদের মৃত্যুহার হচ্ছে একটি দেশ ও অঞ্চলের সামাজিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। চীনের ভূ-সম্পদের আয়তন খুবই বিরাট। বিভিন্ন স্থানের উন্নয়নও পৃথক পৃথকভাবে উন্নত। চীনের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের কিছু কিছু দরিদ্র এলাকায় প্রসূতিদের মৃত্যুহার বরাবরই বেশি । ২০০০ সাল থেকে চীন সরকার এসব এলাকায় প্রসূতিদের মৃত্যুহার কমানোর জন্যে একটি সাহায্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এখন এই প্রকল্পের অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সম্প্রতি আমাদের সংবাদদাতা চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সিছুয়ান প্রদেশের কিছু কিছু দরিদ্র অঞ্চল সফর করেছেন। মুছুয়ান জেলা চীনের সিছুয়ান প্রদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে অবস্থিত। যা একটি পাহাড় বোষ্টিত দরিদ্র জেলা। সংবাদদাতা একটি জীর্ণ সড়কে প্রায় ৪০ মিনিট সময় নিয়ে গ্রামবাসী লি ইয়ুনচেনের বাড়ীতে যায়। তখন হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল।
" ৩০ মিনিটের কাদা-ভরা পাহাড়ী পথে আমরা লি ইয়ুনচেনের বাড়ী এসেছি। তাঁর বয়স ৪০ বছর। ১৯৯০ সাল থেকে তিনি অত্যাধুনিকভাবে চার সন্তান গর্ভধারণ করেছেন। পরিবার দারিদ্রতার জন্যে তিনি প্রত্যেকবার বাড়ীতে সন্তান সম্ভবাহন, এতে চার সন্তানের মধ্যে তিন জনই প্রসব করার সময় মারা গেছে। ২০০০ সালে তিনি তাঁর পঞ্চম সন্তান গর্ভধারণ করেছেন, গ্রামের ডাক্তার তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর, তাঁকে বলেছেন যে, তাঁর সন্তানের অবস্থা বেশি ভাল নয়, প্রসব করার সময় হাসপাতালে যেতে হবে।
" ডাক্তার লিউ ও ওন প্রত্যেকবার আমাকে হাসপাতালে সন্তান প্রসব করার জন্য বলেছেন। কিন্তু আমার বেশী টাকা নেই, তাই বাড়ীতে সন্তান জন্ম দেয়া উচিত। তবে ডাক্তার লিউ ও ওন আমাকে সাহয্য করেছেন । বলেন ' হাসপাতালে সন্তান জন্ম দিতে হবে। টাকা পেলে পরেই দিলেই হবে '। আমি হাসপাতালে সন্তান জন্ম দিয়েছি। ডাক্তারকে অসংখ্য ধন্যবাদ! হাসপাতালে সন্তান জন্ম না দিলে আমার এই ছোট মেয়ে এখন থাকতো না ।"
স্থানীয় সরকারের নীতি অনুযায়ী, লি ইয়ুনচেনের মতো এই গরিব কৃষক হাসপাতালে প্রসব করালে কিছু কিছু সরকারী ভরর্তুকি নিতে পারেন। অন্য খরচও কিছুটা কমাতে পারেন। তাই লি ইয়ুনচেন সাহস পেয়ে প্রথমবার হাসপাতালে গিয়ে প্রসব করেন এবং স্বাভাবিকভাবে এক মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এবারকার হাসপাতালের মোট খরচ ছিলো ২৫০ ইউয়ান, এর মধ্যে সরকারী ভর্তুকি ৮০ ইউয়ান । অন্য খরচ আগামী দু'বছরের মধ্যে শোধ করে দিতে পারবেন।
মুছুয়ান জেলার মহাপরিচালক ইয়ে সাছিয়াং বলেছেন যে, ২০০০ সালের পরে, এই জেলার মোট ১৩০০ জনেরও বেশি প্রসূতি সাহায্য পেয়েছে। ত্রাণের খরচ মোট ১ লাখ ৯০ হাজারেরও বেশি ইউয়ান । এর জন্যে প্রায় ৭০ শতাংশ প্রসূতি হাসপাতালে প্রসব করান। এই অনুপাত কিছুটা কম , কিন্তু আগের চেয়ে অনেক অগ্রগিত হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ২০০৫ সালের প্রসূতিদের মৃত্যুর হার শুধু ১৯৯৯ সালের চার ভাগের এক কমানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা নারীদের স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা লক্ষ্যনীয়ভাবে উন্নত হয়েছে। ২০০২ সাল নাগাদ চীনের গর্ভবতীদের স্বাস্থ্যসেবার অন্তর্ভূক্তির হার ৮৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রসূতিদের হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেয়ার হার ৭৮.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, পাঁচ বছর আগের চেয়ে এটা ১২ শতাংশ বেশী। গর্ভবতী ও প্রসূতিদের মৃত্যু হার ১৯৯৭ সালের ০.০৬৩৬ শতাংশ থেকে ২০০২ সালের ০.০৫০২ শতাংশে নেমেছে। নারীদের গড়পড়তা আয়ু ৭৩.৬ বছর, পুরুষের চেয়ে তা ৩.৮ বছর বেশী।
চীনে প্রাথমিকভাবে গ্রামীণ পরিসেবা নেট গড়ে উঠেছে। ২০০০ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার পশ্চিম চীনের ১২টি প্রদেশ, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও কেন্দ্র শাসিত মহা নগরে " গর্ভবতী ও প্রসূতিদের মৃত্যু হার কমিয়ে দেয়া এবং নবজাত শিশুদের ধনুষ্টংকার নির্মূলীকরণ প্রকল্প" শুরু করেছে, দরিদ্র অঞ্চলের থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের হাসপাতালের ধাত্রীবিদ্যা বিভাগের গঠন জোরদার করেছে এবং নিম্নস্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যার ফলে পশ্চিমাঞ্চলের ১২টি প্রদেশ, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও কেন্দ্রশাসিত মহা নগরের গর্ভবতী ও প্রসূতিদের মৃত্যুর হার দু'বছরের মধ্যে ০.০৩৭২৮ শতাংশ কমেছে।
২০০১ সালের এপ্রিল মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ " গণ প্রজাতন্ত্রী চীনের মা ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষা আইন কার্যকরী করার পদ্ধতি" প্রকাশ করেছে। এতে নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষা সম্পর্কে চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য রক্ষা সংস্থাকে যে পরিসেবা সরবরাহ করতে হবে, সারা দেশে সাধারণ নারী রোগ পরীক্ষা ও চিকিত্সা করার কাজ চালাতে হবে এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের পরিসেবার মান উন্নত করতে হবে তা স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়েছে। ২০০২ সাল নাগাদ গোটা চীনে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষা সংস্থার মোট সংখ্যা ছিল ৩০৬৭ এবং সংস্থাগুলোতে ৮০ হাজার বিছানা আছে।
আরো জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে চীন সরকার প্রসূতিদের মৃত্যুহার কমানোর প্রকল্প চালু করার পর, এখন মোট ১ হাজারটি জেলায় তা সম্প্রসারিত হয়েছে । ছ'য় বছরে চীন সরকার এতে মোট ৪৪ কোটি ইউয়ান পুঁজিবিনিয়োগ করেছে।
" ২০০৫ সালের শেষ দিকে চীনের ২৩টি প্রদেশের প্রসূতিদের মৃত্যুহার প্রায় ০.০৫৬৪ শতাংশ কমানো হয়েছে।"
তিনি আরো বলেছেন যে, প্রসূতিদের মৃত্যুহার কমানোর প্রকল্প চীনে আরো সার্বিকভাবে চালু করা হবে। একই সঙ্গে চীন আরো বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে প্রতিষ্ঠা করবে ও প্রসূতিদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কার্যকরভাবে যত্ন নেয়ার ব্যবস্থা নেবে।
|