জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১১ আগস্ট সন্ধ্যায় লেবানন-ইসরাইল সমস্যা সম্পর্কে ১৭০১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে । এতে লেবানন-ইসরাইল সংঘর্ষের চূড়ান্ত রাজনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাওয়া চীনের বিশেষ দূত সুন পিকান ১৩ আগস্ট কায়রোয় সংবাদদাতাকে সাক্ষাত্কার দিয়েছেন।
১৭০১ নম্বর প্রস্তাব সম্পর্কে সুন পিকান বলেছেন, কূটনৈতিক মধ্যস্থতার সুফল হিসেবে এই প্রস্তাব চীনের সমর্থন পেয়েছে। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘে চীনের প্রতিনিধিদল এই প্রস্তাবের খসড়া তৈরীতে সক্রিয় অবদান রেখেছে। পরামর্শের সময়ে চীনের প্রতিনিধি বারংবার জোর দিয়ে বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের সকল প্রস্তাব এবং সমাধানের পদ্ধতি অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের ,বিশেষ করে লেবানন ও আরব দেশগুলোর স্বার্থ ও মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। এবার গৃহীত প্রস্তাবটিতে লেবানন সরকারের প্রস্তাবিত ৭টি ধারার মূল বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যেমন : সার্বিকভাবে শত্রুতামূলক তত্পরতা বন্ধ করা, লেবাননের দক্ষিণাংশে লেবাননের সরকারী বাহিনী মোতায়েন করা, ইসরাইলী বাহিনী "নীল লাইনের " পেছন দিকে প্রত্যাহার করা ইত্যাদি। খসড়া প্রস্তাব নিয়ে পরামর্শের প্রক্রিয়ায় আমরা লক্ষ্য করেছি, লেবানন ও ইসরাইল উভয় পক্ষ এবং আরব দেশগুলো এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে নি। তাই চীন এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে।"
নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে । চীন তা সমর্থন করেছে। তবে সুন পিকান উল্লেখ করেন, এই প্রস্তাব নিখুঁত নয়। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তা সাফল্যের সঙ্গে কার্যকর করা যাবে কি না। তিনি বলেন, "আমরা মনে করি, প্রস্তাব গ্রহণ শুধু প্রথম ধাপ। এই প্রস্তাব মোটেই নিখুঁত নয়। তবে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি পালনের আহ্বান জানানোর এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে আঞ্চলিক পরিস্থিতির উত্তেজনা প্রশমন করা যাবে। বিশেষ করে মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা যাবে। কিন্তু আমরা মনে করি, প্রস্তাব গ্রহণের চেয়ে প্রস্তাব কার্যকর করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা খুবই কঠিন দায়িত্ব।"
যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য দেশগুলো হিজবুল্লাহকে একটি "সন্ত্রাসী সংগঠন" বলে মনে করে। কিন্তু অন্যরা মনে করে যে, হিজবুল্লাহ হলো ইসরাইলী দখলের বিরুদ্ধে এক সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন। এই প্রসঙ্গে সু পিনকান বলেছেন, "হিজবুল্লাহ দলের মূল্যায়ণ এক বিতর্কিত সমস্যা। বর্তমান অবস্থায় দেখতে গেলে, হিজবুল্লাহ দলের প্রতি বেশ জনসমর্থন রয়েছে। লেবাননের সংসদে তার আসন আছে, লেবাননের সরকারেও হিজবুল্লাহ দলের মন্ত্রী আছেন। তাই লেবাননী জনগণই হিজবুল্লাহ দলের মূল্যায়ণ বা ভাগ্য নির্ধারণ করবেন। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য সমস্যার মতো হিজবুল্লাহ সমস্যাও যুদ্ধ আর সশস্ত্র উপায়ে সমাধান করা যাবে না। বরং জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব এবং 'ভূমির বিনিময়ে শান্তির নীতি' অনুযায়ী বৈঠকের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধান অর্জন করা উচিত। "
তাঁর এবারকার মধ্যপ্রাচ্য সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সু পিকান বলেছেন, "মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার মূল কারণ সবাই জানেন । অর্ধ-শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তীন -ইসরাইল বিরোধ চলেছে, চার বার যুদ্ধও হয়েছে। তার কারণ ফিলিস্তিন সমস্যাটি এখনও সমাধান হয় নি। তাই আমরা মনে করি ফিলিস্তিন সমস্যা হলো আরব-ইসরাইল বিরোধের মূল কারণ । ফিলিস্তিনী জনগণের বৈধ আধিকার পুন:প্রতিষ্ঠিত না হলে এই অঞ্চলে ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তিও সম্ভব হবে না।"
উপসংহারে তিনি বলেন, " চীন মনে করে, জাতিসংঘ প্রস্তাব এবং ভূমির বিনিময়ে শান্তির নীতি অনুসারে শান্তিবৈঠকের মাধ্যমে আরব-ইসরাইল বিরোধের রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে। তাহলেই -কেবল মধ্যপ্রাচ্যের স্থায়ী ও ন্যায্য শান্তি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।"
|