v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-08-11 18:41:10    
মায়ের ভালবাসা

cri
    সুং ইয়াফোং চীনের হেইলুংচিয়াং প্রদেশের আছেন শহরের আছেন জেলার এক সাধারণ গ্রামীণ নারী । ২০০২ সালে তিনি স্বামী সিং তিয়েনউর সঙ্গে আছেন শহরে মজুরি করতে আসেন । সেই সালের শেষ দিকে সুং ইয়াফোং আছেন শহরের শিশু হাসপাতালে এক আত্বীয়কে দেখতে আসেন ।যখন তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে যাচ্ছিলেন ঠিক সে সময়ে হাসপাতালের বারান্দা থেকে ভেসে আসা শিশুর দুর্বলকান্নাকাটির আওয়াজ তাকে আকর্ষণ করে ।

    হাসপাতালের বারান্দার লম্বা চেয়ারে সুং ইয়াংফোং এক অকালে জন্মনেয়া ছেলে দেখলেন । ঠান্ডায় ছেলেটির শরীর প্রায় বেগুনী হয়ে উঠেছে এবং তার কান্নার আওয়াজ এত দুর্বল যে প্রায় শোনা যায় না । এই অবস্থা দেখে সুং ইয়াফোং অস্থির হলেন । মুমূর্ষুপ্রায় ছেলেটি দেখে তিনি অনেক ক্ষণ ধরে বারান্দায় আসা যাওয়া করলেন । ছেলেটিকে ছেড়ে বাসায় ফিরে যেতে মন শক্ত করতে পারেন না বলে তিনি সর্বপ্রথমে ছেলেটিকে নিজের বাসায় আনার সিদ্ধান্ত নিলেন । সুং ইয়াফোং ও তার স্বামী দুজনই মাসে মাত্র ৮-৯শ' ইউয়ান পান । বাড়ির ভাড়া ,মেয়ের স্কুল-ফি বাদে বাকি অর্থ দিয়ে মোটামুটিভাবে পরিবারের তিনজনের সংসার চলে যায়। অতিরিক্ত এক বাচ্চাকে লালনপালন করতে তারা সত্যিই সক্ষম নন । সু ইয়াফোং ও স্বামী সেই সারা রাত ধরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন । অবশেষে স্বামী-স্ত্রী দুজন সিদ্ধান্ত নিলেন যে, প্রথমে তারা এই অসহায় ছেলেকে বাঁচাবেন এবং পরে তার জন্যে কোনো ছেলেমেয়ে নেই এমন একভাল পরিবার বেছে নেবেন ।

    ছেলেটি অকালে জন্ম নেয়া ছেলে এবং যখন সুং ইয়াফোং তাকে সনাক্ত করেন তখন তার ওজন মাত্র এক কেজিরও কম ।সাধারণ বাচ্চার মতো দুধ খেতে পারে না বলে সুং ইয়াফোং নানা পদ্ধতিতে তাকে দুধ খাওয়ান । তিনি নিজের আপন ছেলের মতো এই ছেলেকে লালনপালন করেন। যে কোনো সময়ে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে যায় তার ভয়ে তিন-চার মাস ধরে সুং ইয়াফোং ভালভাবে মুখ পরিস্কার করেননি,চুল আঁচড়াননি এবং কাপড় ছেড়ে আরামে ঘুমাননি । তার সযত্ন ও লালনপালনে ছেলেটি বেঁচেছে । সুং ইয়াফোং তার নাম দেন "থিয়েন ই "অর্থাত"ভগবানের ইচ্ছা" ।

    বাড়তে বাড়তে থিয়েন ইর বয়স এক বছর পার হল । এই বয়সে সাধারণ বাচ্চা কথা শিখতে এবং পায়ে হাঁটতে শুরু করে । কিন্তু থিয়েন ই পায়ে দাঁড়াতে পারে না ,সে শুধু বিছানায় উবু হয়ে এগোতে পারে এবং সে কথাও বলতে শুরু করেনি । এই অবস্থা দেখে সুং ইয়াফোংয়ের স্বামী,তার আতীয়স্বজন,বন্ধু-বান্ধবরা তাকে থিয়েন ইকে অনাথ শিশুয়ালয়ে পাঠাতে পরামর্শ দেন। অকালে জন্মগ্রহণ করায় থিয়েনইর শারিরীক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল, প্রায়ই জ্বর হয় । একবার চিকিত্সা করলে তিন-চারশ' রেনমিনপি লাগে । গরিব হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে সুং ইয়াফোং টাকাপয়সা ধার করে থিয়েনইকে হাসপাতালে চিকিত্সা করাতেন। স্বামী রিক্সা চালিয়ে যে উপার্জন করেন তা দিয়ে পরিশোধ দিতেন । বাস্তব সংসারের অসুবিধা ও পরিবারস্বজনদের অসন্তোষে সুং ইয়াফোং একবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন । কিন্তু অবশেষে মাতৃত্ববোধ তাকে জীবিত থাকার উত্সাহ দিয়েছে । এর পর স্বামী সিং তিয়েনউ ধীরে ধীরে তাকে বুঝেছেন এবং থিয়েন ইর জন্যে গুড়া-দুধ কেনার জন্যে সব রকমের কাজ করেন । একবার মজুরি করার সময়ে অসাবধানে তার কোমর সমস্যা হয়েছে। চিকিত্সা করার টাকার অভাবে তিনি বাধ্য হয়ে বিছানায় দেড় বছর ধরে শুয়ে ছিলেন ।কয়েক বছর ধরে সিং তিয়েনউ একদিনও ছুটি কাটাননি । এই পরিবারের জন্যে তিনি কষ্ট ক্লান্তি উপেক্ষা করে সংসার চালাতেন ।

    হার্বিনশহরের বড় হাসপাতালে থিয়েন ইকে চিকিত্সা করার জন্যে স্বামী-স্ত্রী দুজন নিজের একমাত্র বাড়ি ৪০০০ইউয়ানে বিক্রি করেন । সেই রাতে স্বামী-স্ত্রী দুজন পরস্পরকে জড়িয়ে কেঁদেছেন । থিয়েন ইকে পাওয়ার পর সুং ইয়াংফোং নিজের সব ভালবাসা তাকে দিয়ে দিয়েছেন । স্কুল ফি ছাড়া তিনি মেয়েকে এক পয়সার হাতখরচও দেননি । মেয়ে যাতে একটি আইসক্রীম খেতে পারে তার জন্যে সুং ইয়াফোং গভীররাতে বাইরে টুকরা-টাকরা জিনিস জড়ো করার সিদ্ধান্ত নেন । কিন্তু কিছু টাকাপয়সা উপার্জন করার পর তিনি মেয়েকে আইসক্রীম কিনতে দেন না,বরং তিনি থিয়েন ইর চিকিত্সার জন্যে তা জমা দেন ।সুং ইয়াফোংয়ের মেয়ের বয়স ১৬ বছর হলেও সে একবারও জন্মদিন পালন করেনি । কিন্তু যখন থিয়েন ইর জন্মদিন তখন সুং ইয়াফোং তাকে জন্মদিনের কেক কিনে দেন ।

    সুং ইয়াফোংয়ের আচরণ অনেক লোককে মুগ্ধ করেছে । তিনি প্রত্যেক দিন থিয়েন ইকে নিয়ে মালিশ করতে যান । তিন মাস ধরে মায়ামমতাপূর্ণ চিকিত্সক তার কাছ থেকে এক পয়সাও নেননি । গত বছরের শেষ দিকে আছেন শহরের এক ভাল মানুষ এসে তাদের ৫০০ রেনমিনপি দেন । টাকাপয়সা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুং ইয়াফোং থিয়েন ইকে হার্বিনশহরের শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান । পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত হয় যে,থিয়েন ইর মস্তিস্কের রোগে আক্রান্ত হয় । চিকিত্সা করতে চাইলে প্রথমে অপারেশন করতে হবে আর অপারেশন করতে কমপক্ষে ৫০-৬০ হাজার রেনমিনপি লাগে । সুং ইয়াফোং থিয়েনইকে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে হার্বিন থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন ।

    এবছরের বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ ইয়ুছুয়েন হাসপাতালের ডাক্তার ওয়াং সিজিয়ে থিয়েনইকে দেখতে শুন্যের নিচে ৩০ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের শীত উপেক্ষা করে বিশেষভাবে আছেন শহরে আসেন ।তারপর সুং ইয়াফোং থিয়েনইকে নিয়ে পেইচিংয়ে আসেন । ইয়ুছুয়েন হাসপাতাল থিয়েনইর হাসপাতাল থাকা ও অপারেশনের খরচ মওকুফ করেছে । এক চিকিত্সা সাজসরঞ্জাম কোম্পানি সুং ইয়াফোং ও থিয়েনইর পেইচিং আসা-যাওয়া ও দৈনন্দি খরচ বহন করে । চার দির পর থিয়েন ইর অপারেশন হয় । সুং ইয়াফোং বলেছেন,সমাজের সাহায্যের জন্যে তিনি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ । যখন থিয়েন ই পা দিয়ে হাঁটতে সক্ষম হবে তখন তাদের যত কষ্ট হোক না কেন তিনি থিয়েনইকে কিন্ডারগার্টেনে পাঠাবেন এবং পরে তাকে স্কুলে পড়তে পাঠাবেন । কারণ তিনি মা,তাই তিনি থিয়েন ইর জন্যে সব করতে পারেন ।