শ্রীলংকার সরকারী বাহিনী আর সরকার-বিরোধী তামিল ইলাম টাইগার মুক্তি সংস্থা এলটিটিই মাভিলুরু খালের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য ১০ আগস্ট শ্রীলংকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পুনরায় তুমুল গুলিবিনিময় করেছে, এতে ২৩ জন সরকারী সৈন্য আহত হয়েছেন।
মাভিলারু খাল শ্রীলংকার উত্তর-পূর্বাংশের ট্রিনকোমালি জেলায় অবস্থিত। এই সেচ খালটি এলটিটিই গেরিলা নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। গত ২০ জুলাই গেরিলারা খালটি বন্ধ করে দিয়েছে, ফলে খালের নিম্ন অববাহিকায় শ্রীলংকা সরকারের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ১৫ হাজার কৃষক পরিবার এবং ৩০ হাজার হেক্টর ধানী জমিতে গুরুতর পানি সংকট দেখা দিয়েছে। গেরিলারা বলেছে, শ্রীলংকা সরকার নিয়ন্ত্রিত পূর্ব মুতুর এবং ইছরামপাটু অঞ্চলের পানি সরবরাহ শুরু না করা পর্যন্ত মাভিলারু সেচ খাল খুলবে না। শ্রীলংকা সরকার মনে করে, নতুন জলসেচ প্রকল্প নির্মাণ করতে সময় লাগবে, এখনই নির্মাণ করা যাবে না। এর সঙ্গে মাভিলারু খালের উত্স বন্ধ রাখার বিষয়টি তুলনা করা ঠিক না। শ্রীলংকার যুদ্ধবিরতি তত্ত্বাবধান কমিটির মধ্যস্থতায় দু'পক্ষ ছয় দিন পরোক্ষ আলোচনা করেছে, কিন্তু এলটিটিই কোন প্রকার আপোষ করছে না। এমন পরিস্থিতিতে শ্রীলংকার সরকারী বাহিনী গত ২৬ জুলাই থেকে এলটিটিই নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের ওপর সামরিক তত্পরতা শুরু করেছে, যাতে জোর করে মাভিলারু নিয়ন্ত্রণ নেয়া যায়। ২০০২ সালে শ্রীলংকা সরকার এলটিটিই'র সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর এই প্রথম দু'পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরণের , দীর্ঘ সময় সশস্ত্র সংঘর্ষ এবং গুরুতর হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দুই সপ্তাহ স্থায়ী গুলি বিনিময়ে শ্রীলংকার উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলে মোট ৪৪০ জনেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে, বহু লোক আহত হয়েছে। হাজার হাজার নিরীহ নাগরিক গৃহহারা হয়েছে। শ্রীলংকার সরকারী বাহিনী এবং এলটিটিই'র বিপুল সংখ্যক সদস্য প্রতিপক্ষের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করে লড়াই করেছে। যুদ্ধবিরতি লাইনটি এখন নামমাত্র রয়েছে। এই ঘটনা থেকে মনে হচ্ছে যে, তাদের মধ্যে বিরুদ্ধাচরণ এক নতুন পর্যায় অর্থাত্ অত্যন্ত বিপদজনক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এবার দু'পক্ষের মনোভাবই শক্ত। স্থানীয় জনগণ মনে করে, এলটিটিই সেচ খালটি বন্ধ করে সরকারের কাছে বেশি দাম চেয়েছে , এর একটা কারণ হচ্ছে তার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের জনসাধারণের অনুগ্রহভাজন হওয়া। কিন্তু এর মূল কারণ হচ্ছে শ্রীলংকা সরকারের ওপর চাপ দেয়া। এটা এলটিটিই'র নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, অর্থাত্ "চরমপন্থী" বা"সন্ত্রাসী" পদ্ধতিতে নিজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করা। অতীতে শ্রীলংকা সরকার সংযম বজায় রাখতো, কিন্তু এখন তারা আর আপোষ করে না। শ্রীলংকা সরকার সংঘর্ষে নতি স্বীকার করে না। নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার দরুণ শ্রীলংকা সরকার ও এলটিটিই'র মধ্যকার মতভেদ আরো গভীর হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, শ্রীলংকার সরকারী বাহিনী আর এলটিটিই গেরিলাদের মধ্যকার সংঘর্ষ ক্রমবর্ধমান হলেও সার্বিক যুদ্ধের সঙ্গে আরো কিছু ব্যবধান আছে। কারণ যুদ্ধের মাধ্যমে শ্রীলংকার অভ্যন্তরীন জাতীয় সমস্যা সমাধান করা দু'পক্ষের শ্রেষ্ঠ বাছাই নয়। ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা থেকে জানা গেছে, তারা কেউ প্রতিপক্ষকে শেষ করে দিতে পারে না। অন্য দিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রবল চাপের কারণে কেউ প্রথমে সার্বিক আক্রমণ চালাতে পারে না। তাহলে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কঠিন সমস্যায় পড়বে। এখন যে অবস্থা তাতে শ্রীলংকার অচলাবস্থা অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শান্তি প্রক্রিয়া পুনর্বার শুরু করার উপর সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব দিয়েছেন।
|