২০০১ সালের নভেম্বর মাসে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চতুর্থ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে নতুন ভাবে বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক আলোচনা শুরু করা হয় । নতুন আলোচনার আরেক নাম হল "দোহা উন্নয়নের কার্যক্রম" বা "দোহা দফা" । এ আলোচনায় ৮টি আলোচ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয় । তা হল : কৃষি, অকৃষি উত্পাদন বাজারে প্রবেশ করার অনুমোদন, পরিসেবা, স্বত্বাধীকার, নীতি, মতভেদের সমাধান, বাণিজ্য ও পরিবেশ আর বাণিজ্য ও উন্নয়ন ।
দোহা আলোচনার উদ্দেশ্য হল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক বাধা দূরীভূত করার বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করা । আরো সুষম বাণিজ্যিক উদ্যোগের মাধ্যমে পৃথিবীর অর্থনীতি বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা । দোহা আলোচনার গুরুত্ব হল কৃষি আর অকৃষি উত্পাদন বাজারে প্রবেশ করার অনুমোদন,প্রধানত কৃষির ভাড়া কামানো, কৃষি উত্পাদনের আমদানী শুষ্ক কমানো এবং শিল্প উত্পাদনের আমদানী শুষ্ক তিন ভাগে নির্ধারণ করা ।
দোহা আলোচনা প্রথমে ২০০৫ সালের পয়লা জানুয়ারীর আগেই শেষ হওয়ার কথা । ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মেক্সিকোর কানকুনে অনুষ্ঠিত পঞ্চম বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনে বিভিন্ন সদস্যদেশ কৃষি সমস্যায় একমত না হওয়ার কারণে অধিবেশন কোনো ফল পাওয়া যায় নি এবং দোহা আলোচনা তখন থেকেই দোদূল্যমানতায় পড়েছে ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও সদস্যদেশগুলোর প্রয়াসে ২০০৪ সালের পয়লা আগস্ট বিভিন্ন সদস্য দেশ দোহা আলোচনা সংক্রান্ত কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করেছে , কৃষির ভাডা কামানো, শুষ্ক বাতিল করা, শিল্প উত্পাদনের আমদানী শুষ্ক কমানো এবং পরিসেবা বাণিজ্য অবাধকরণ ও বাণিজ্যের সুবিধায়নের জন্য মৌলিক নীতি নির্ধারণ করেছে এবং একমত হয়েছে যে আলোচনার সমাপ্তি সময় ২০০৬ সালের শেষ দিকে পিছিয়ে দেবে ।
২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের হংকংয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ষষ্ঠ মন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনে 'মন্ত্রী ঘোষণা' গৃহিত হয়েছে । 'মন্ত্রী ঘোষণা' নির্ধারণ করে যে, উন্নয়নশীল দেশের সদস্য এবং কিছু উন্নয়নমুখী দেশের সদস্য২০০৮ সালের আগে সবচেয়ে দরিদ্র দেশের সকল উত্পাদনের প্রতি শুষ্ক বাতিল করার মাধ্যমে বাজার প্রবেশ করার অনুমোদন দিতে হবে ।২০০৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের সদস্য কার্পাস তুলার রপ্তানী ভাড়া বাতিল করা হবে । ২০১৩ সাল শেষের আগে কৃষি উত্পাদনের রপ্তানী ভাড়া বাতিল করা হবে । কিন্তু কৃষি ভাড়া কমানো, অকৃষি উত্পাদনের শুষ্ক কমানো এবং পরিসেবা শিল্পের উন্মুক্ততা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয় নি ।
এসব প্রশ্ন সম্পর্কে উন্নয়নশীল দেশগুলো আর উন্নয়নমুখী দেশগুলো, পুরনো সদস্য আর নতুন সদস্যের মধ্যে স্বার্থের জন্যে মতভেদ দেখা দেয় । একপক্ষ ই.ইউ.'র যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃষি ভাডা কমানোর ক্ষেত্রে দায়িত্ব অর্পণ করার তাগিদ দেয়,কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ই.ইউ.'র প্রতি কৃষি উত্পাদনের শুষ্ক টেক্স কমানোর ক্ষেত্রে আরো বেশি অর্পণ করার তাগিদও দেয় । পক্ষান্তরে যদিও ই.ইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতবিরোধ অব্যাহত রয়েছে ,তবুও দু'পক্ষই মিলিতভাবে উন্নয়নমুখী দেশগুলোর প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন করে । তারা উন্নয়নমুখী দেশগুলোর প্রতি শিল্প উত্পাদন ও পরিসেবা বাজার উন্মুক্তকরণের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি দেয়ার তাগিদও দেয় ।
|