v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-08-10 20:24:02    
পেইচিংয়ের কয়েকটি রাজকীয় উদ্যান

cri
    ৮ শতাধিক বছর আগে পেইচিং রাজধানীতে পরিণত হয়। তখন থেকে দশাধিক ছোট-বড় রাজকীয় উদ্যান সংরক্ষিত হয়েছে। এ সব উদ্যানের দৃশ্য সুন্দর এবং পরিবেশ শান্ত। বতর্মানে পেইহাই পার্কের উদ্যানগুলো বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে সুদীর্ঘ ইতিহাসসম্পন্ন রাজকীয় উদ্যান। পেইহাই পার্কের সংস্কৃতি গবেষণালয়ের ইতিহাস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ম্যাডাম পেই জেন জেন ব্যাখ্যা করে বলেছেনম, ১৩ শতাব্দীতে এই সুন্দর জায়গা ইউয়ান রাজবংশের প্রথম রাজা ফুবিলির চোখে পড়ে। তিনি এই জায়গায় ইউয়ান রাজবংশের রাজধানী নির্মানের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেছেন,ইউয়ান রাজবংশ থেকে মিং , ছিং রাজবংশ পযর্ন্ত পেইচিং সবর্দাই রাজাদের বসবাস করার জায়গা ছিল। বিশ্বের রাজধানী নির্মানের ইতিহাস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, একটি উদ্যান থেকে একটি রাজধানীতে পরিণত হওয়া বিশ্বে এই উদাহরণ প্রায় ছিল না।

    বতর্মানে পেইহাই পার্কের আয়তন প্রায় ৭০ একর। অর্ধেরও বেশী হল জলসীমার আয়তন। চকচক স্থাপত্য এবং শান্ত আর মার্জিত মন্দিরগুলো সুবিন্যাস্তভাবে সারা পার্কে ছড়িয়ে পড়ে। পেইহাই পার্কের হ্রদের কেন্দ্রে একটি ছোট দ্বীপ আছে। এই দ্বীপের নাম ছনহুওয়া দ্বীপ। এই দ্বীপে একটি তিব্বত শৈলীর সাদা প্যাগোটা আছে। চীনের ছিং রাজবংশ আমলে এই প্যাগোটা নির্মিত হয়। কারণ ছিং রাজবংশের রাজারা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করতেন।

    এই সাদা প্যাগোটাতে উঠে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ দিকে তাকালে লোকেরা লক্ষ্য করতে পারে যে , এই ছনহুওয়া দ্বীপ সহ মোট তিনটি ছোট-বড় দ্বীপ এক সঙ্গে সংযুক্ত হয়। যদি আকাশে কুয়াশা থাকে তাহলে এ তিনটি দ্বীপ কখনও নজরে পড়ে কখনও আবার নজর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রাচীনকালে চীনের মিস্ত্রিরা রাজকীয় উদ্যান নির্মাণের একটি বিশেষ পদ্ধতিতে এই তিনটি দ্বীপ নিমার্ন করেন। এই পদ্ধতি হল ' একটি হ্রদে তিনটি পাহাড়'। মানে হ্রদ খনন করে কৃত্রিম পাহাড় তৈরী করা হয়। পানিতে তিনটি কৃত্রিম দ্বীপ তৈরী করা হয়। চীনের প্রাচীনকালের রুপ কথায় সাগরে তিনটি দেবতা পাহাড় আছে। এ তিনটি পাহাড়ে যে ঔষুধ লুকিয়ে থাকে মানুষ তা খেলে বুড়ো হবে না। সুতরাং চীনের রাজারা নিজেদের দীর্ঘজীবি থাকার জন্যে এ সব রাজকীয় উদ্যানের হ্রদে তিনটি কৃত্রিম দ্বীপ নির্মান করেন। মিস্টার লি জিয়েন পিন যিনি বিশেষভাবে পেইচিংএর ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এ ধরনের স্থাপত্য চীনের রাজকীয় উদ্যানগুলোর বৈশিষ্ট্য। তিনি বলেছেন ,এ ধরনের স্থাপত্য কেবল রাজকীয় উদ্যানগুলোতে নির্মান করা যায়। অন্যরা অনুশীলন করতে পারে না। ' একটি হ্রদে তিনটি পাহাড়' পেইহাই পার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। পেইহাই পার্কে পরিদর্শন করতে আসলে যদি আপনি এ তিনটি দ্বীপে না গিয়ে তাহলে আপনি এই রাজকীয় উদ্যানের আত্মা দেখেনি।

    পেইহাই পার্কের কথা শেষ করে আমরা পেইচিংএর পশ্চিম উপকন্ঠের সামা প্যালেস অথার্ত গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদের কথা নিয়ে আলোচনা করবো। সামা প্যালেসের নিমার্ন কাজ ১৭৫০ সালে শুরু হয়। সামা প্যালেসের উপ পরিচালক মিস্টার গাও ডা উয়ে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, বিশ্ব সংস্কৃতি উত্তরাধিকারগুলোর অত্যতম হিসেবে সামা প্যালেস চীনের দৃশ্য বিশিষ্ট উদ্যান নকশার একটি চমত্কার কাজ বলে গণ্য করা হয়। তিনি বলেছেন,সামা প্যালেস পেইচিং রাজকীয় উদ্যানগুলোর একটি চমত্কার প্রতিনিধি। তা ছাড়া এটা হল পেইচিং রাজকীয় উদ্যানগুলোতে সবচেয়ে অক্ষতভাবে সংরক্ষিত উদ্যান।

    সামা প্যালের আয়তন প্রায় ৩০০ একর। এ কথা বলা যায় যে, তখনকার স্থাপত্য নিমার্ণকারীরা সারা পৃথিবীর সুন্দর দৃশ্য সামার প্যালেসে দেখাতে চেষ্টা করতে চাইতেন। সামা প্যালেসের প্রধান দর্শনীয় স্থান উয়েনসৌ সেন আর খুয়েমিন হ্রদ নিয়ে গঠিত হয়। ৫০ মিটার উচু উয়েনসৌ সেন দেখতে বাদুরের মতো। খুয়েমিন হ্রদের আকার একটি পিছ ফুলের মতো। চীনের ঐতিহ্যিক ধারণায় বাদুর মানে সুখ এবং পিছ মানে দীর্ঘবায়ু। ছিং রাজবংশের রাজা ছিয়েলন তাঁর মার জন্ম দিবস পালন করার জন্যে এই উদ্যান নির্মান করতেন। সুতরাং চীনের সুখ আর বায়ু সংস্কৃতি এই উদ্যানে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়।

    সামা প্যালেসে পরিদর্শন করার সময় ভিতরের লং করিডর না দেখলে চলবে না। এই লং করিডর ৭২৮ মিটার দীর্ঘ। এটা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ করিডর। এক সময় চেনিস বিশ্ব রেকডে এই করিডর নাম অন্তর্ভুক্ত।

    সামা প্যালেস পরিদর্শন করার পর, আমরা ইউয়েমিনইয়েন পার্ক বেড়াতে যাবো। ইউয়েমিনইয়েন পার্ক এক সময় ছিং রাজবংশের রাজাদের একটি অন্যতম প্রিয় প্রাসাদ। দু:খের ব্যাপার হল. ১৮৬০ সালে ব্রিটেন আর ফ্রান্স যৌথ বাহিনী এই পাক আগুনে পুড়ে দেয়। অবশেষে এই পার্ক ভুস্মিভুত হয়। এখন এই পাকে মাত্র ইউরোপীয় শৈলীর অট্রালিকার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। পেইচিংবাসী মিস হান নিন ইতিহাস গবেষণা করতে পছন্দ করেন। তিনি সংবাদদাতাকে বললেন, আমার মনে হয় , সামা প্যালেসের চাইতে ইউয়েমিনইয়েন পাক আরও আকর্ষনীয়। যদিও এখন শুধু ধ্বংসাবশেষ রয়েছে তবু যখন আপনি এ সব ধ্বংসাবশেষ দেখে তখন আপনি অতীতের সমৃদ্ধি অনুভব করতে পারেন। এই পার্ক ধ্বংসগ্রস্ত হলেও তার সৌন্দর্য এখনও রয়েছে।