স্বাস্থ্য তত্ত্ব এমন একটি তত্ত্ব , যাতে বহু দিক থেকে মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষনা চালানো হয় । তাকে প্রান বিজ্ঞান বলেও মনে করা হয় । মানুষকে বহু ক্ষেত্রের ওপর ব্যবস্থাপনা চালাতে হয় । কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল নিজের প্রান পরিচালনা করা । বর্তমান পৃথিবীতে স্বাস্থ্য রক্ষা এমন একটি বিজ্ঞান হয়েছে , যার উপর অধিক থেকে অধিকতর মনোযোগ দেয়া হচ্ছে । সবাই সুম্বাস্থ্য আর দীর্ঘায়ু চান , কিন্তু শারিরীক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য অর্জনের জন্য কি কি করতে হবে এবং মানুষের একটিমাত্র প্রানের উপর কেমন করে মনোযোগ দেয়া হবে ? এখন একবিংশ শতাব্দিতে সুস্বাস্থ্য বিষয়ক নতুন ধারনা সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলা হবে ।
একবিংশ শতাব্দি দীর্ঘায়ুরযুগ । ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক বয়স্ক বর্ষ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মহাসচিব কোফি আন্নানএই কথা বলেছেন । একবিংশ শতাব্দি যে দীর্ঘায়ুরযুগ হয়েছে , তার মূলে রয়েছে সমাজের অগ্রগতি। যুক্তরাষ্ট্রের একটি তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী , ২০৮০ সালের মধ্যে মানবজাতির গড়পড়তা আয়ু ৯৭ বছরে দাঁড়াবে । এর মধ্যে নারী এক শো বছর আর পুরুষ ৯৪ বছর গড় আয়ুর অধিকারী হবে ।
১৯৯৫ সালে প্রণীত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি মানদন্ড অনুযায়ী , ৪৪ বছর বয়সের আগে অল্পবয়সী , ৪৫ থেকে ৫৯ পর্যন্ত প্রৌঢ় , ৬০ থেকে ৭৪ পর্যন্ত অল্প বয়স্ক , ৭৫ থেকে৮৯ পর্যন্ত বয়স্ক আর যাদের বয়স ৯০ বছরেরও বেশী , তারা দীর্ঘায়ু বয়স্ক । মানুষ হিসেবে শারিরীক দিক থেকে বুড়ো না হওয়া অসম্ভব , মানসিক দিক থেকে বুড়ো না হওয়া সম্ভব । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরামানুষের তিনটি সময়পর্বও উপস্থাপন করেছেন । ৩০ বছর বয়সের আগে প্রানের প্রাথমিক সময়পর্ব , ৩০ থেকে ৬০ পর্যন্ত প্রান সুরক্ষা সময়পর্ব আর ৬০ বছর পর বয়স্কদের সুস্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেয়ার সময়পর্ব । মানুষের সারা জীবণে যৌবনকাল থেকেই স্বাস্থ্যের উপর মনোযোগ দেয়া উচিত ।
একবিংশ শতাব্দিতে মানবজাতি ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্যের উপর মনোযোগ দেয় । ২০০১ সালে চীনে নাগরিকদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি তদন্ত চালানো হয়েছে । মানুষের জীবন , পরিবার , চাকরি আর স্বাস্থ্যের মধ্যে কোনটা প্রথম স্থানে রাখা উচিত এই সম্বন্ধে জানতে চাইলে শতকরা ৮৫.৯০ ভাগ উত্তরদাতা বলেছেন , স্বাস্থ্যকে প্রথম স্থানে রাখা উচিত । পাশ্চাত্ত্য দেশগুলোতে টাকা পয়সার উপর সবচাইতে গুরুত্ব দেয়া হতো , এখন তার পরিবর্তে স্বাস্থ্যকে প্রথম স্থানে দেয়া হয়েছে । তাদের ধারনা হলঃ স্বাস্থ্য প্রথম , জ্ঞান দ্বিতীয় , সংসার তৃতীয় আর টাকা-পয়সা চতুর্থ ।
স্বাস্থ্য ছাড়া জীবনযাত্রার স্বচ্ছলতাও অসম্ভব । যদিও কেউ কেউ মর্যাদা , লাভ আর ক্ষমতার জন্য যথাসাধ্য অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন , কিন্তু অবশেষেই তারা স্বাস্থ্য ও প্রাণ চান । চীনের প্রখ্যাত অংকবিদ চাং কুয়াং হো ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪৯ বছর বয়সে অকাল মারা গেছেন । এতে প্রতিফলিত হয়েছে যে , স্বাস্থ্যও প্রতিদ্বন্দ্বিতা শক্তি । অনেকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত প্রানের মূল্য জানেন না । এখন সবাই স্বাস্থ্যকেমানুষের প্রথম ধন-সম্পদ বলে মনে করেন ।
এখন চীনের বৃহত্তম মহানগরী শাংহাইয়ের বয়স্ক সমস্যা সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলা হবে ।
শাংহাই চীনের বৃহত্তম মহানগরী । এখন তা একটি পক্ককেশ নগরীতে পরিনত হবে । শাংহাইয়ের জনসংখ্যা আর পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের চেয়ারম্যান শিয়ে লিন লি বলেছেন , শাংহাই চীনের এমন একটি মহানগরী , যা সবচাইতে আগেই প্রবীনদের অর্থাত্ পক্ক-কেশ নগরীতে পরিনত হয়েছে । বর্তমানে শাংহাইয়ের বয়স্ক মাত্রা উন্নত দেশগুলোর গড়পড়তা মানে দাঁড়িয়েছে । ২০০৩ সালে সমগ্র শহরের গড়পড়তা আয়ু উনাশি দশমিক আট শুন্যে পৌঁছেছে । এর মধ্যে পুরুষদের বয়স ৭৭.৭৮ আর নারীদের বয়স ৮১.৮১ হয়েছে । ৬০ বছরেরও বেশী বয়স্কদের সংখ্যা মোট লোকসংখ্যার শতকরা ১৯ ভাগ আর ৬৫ বছরেরও বেশী বয়স্কদের সংখ্যা মোট লোকসংখ্যার ১৫ ভাগ হয়েছে ।
|