আফগানিস্তানের তথ্য মাধ্যম ৯ আগস্ট জানিয়েছে, সম্প্রতি আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই পাশ্চাত্য তথ্যমাধ্যমে সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় বলেছেন, ২০০৯ সালে আফগানিস্তানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার অংশ নেয়ার ইচ্ছা নেই। ২০০৪ সালের অক্টোবরে কারজাই সর্বাধিক ভোট পেয়ে আফগানিস্তানের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন । আফগান সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে দু'বার নির্বাচিত হতে পারেন এবং তাঁর কার্যমেয়াদ পাঁচ বছর। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় আর তিন বছর বাকি আছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে কারজাই উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন বলে এ বিষয়টি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
জানা গেছে, মার্কিন "ফরচুন" পত্রিকার সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাত্কারে কারজাই বলেছেন, তিনি মনে করেন, দু'বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালানো ঠিক হবে না। এই সুযোগ অন্যজনকে দেয়া উচিত। তিনি আশা করেন, তাঁর কার্যমেয়াদকালে এই দেশের জন্য নেতৃত্বের পরিবর্তন হতে পারে এমন একটি স্থিতিশীল পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
কারজাই বলেছেন, এখন আফগান সরকার নানা ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। যদিও আফগানিস্তানের গোটা পরিস্থিতি নিরাপদ। সরকার এই দেশকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তবু চলতি বছরে তালিবানের কিছু সংখ্যক সশস্ত্র ব্যক্তির প্রতি-আক্রমণের দরুণ আফগানিস্থানের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি প্রদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠন প্রসঙ্গে কারজাই বলেছেন, বিগত কয়েক বছরে আফগান সরকার অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করা এবং জনগণের জীবনযাপনের গুণগত মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়ভাবে সাফল্য অর্জন করেছে। ২০০৫ সালে আফগানিস্তানের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩৫৫ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। তা ২০০৪ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কর আদায় ক্ষেত্রেএখনো অর্থনীতির স্বয়ংসম্পূর্ণ বিকাশ নিশ্চিত করা যায় নি। আফগানিস্তান এখনো পৃথিবীতে সবচেয়ে দরিদ্র দেশের অন্যতম। তার শিক্ষার হার সর্বনিম্নে এবং শিশুদের মৃত্যু হার বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে।
তা ছাড়া , কারজাই রাষ্ট্র পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সম্মুখীন নানা চ্যালেঞ্জও সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করেছেন। তিনি বলেছেন, আফগান সরকারের ভেতরে বিদ্যমান দুর্নীতি সমস্যা উদ্বিগ্নজনক। বিদেশী সাহায্য সংস্থাগুলোর অপব্যয় সমস্যাও গুরুতর। আফিম চাষ নির্মূল করার বিষয়টি দুরুহ হওয়ায় আফগানিস্তানে আফিম চাষ আর এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাদকদ্রব্যের বাণিজ্য আফগানিস্তানের জাতীয় অর্থনীতির তিন ভাগের এক ভাগে দাঁড়িয়েছে। আফগান সরকারের বহু লোক মাদকদ্রব্যের উত্পাদন আর বাণিজ্য থেকে অবৈধভাবে উপকৃত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, কারজাই-এর এবারকার মন্তব্য পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না হলেও , তা থেকে কিছুটা বোঝা যায় যে, আফগান পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় নানা কঠোর পরিস্থিতির মোকাবেলায় তাঁর সরে যাওয়ার চিন্তাভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে আফগান পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের সাহায্যদান অভিযান এখনো চলছে। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের শেষ দিকে লন্ডনে অনুষ্ঠিত আফগান সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উত্থাপিত পাঁচসালা উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক সমাজ পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে আফগানিস্তানকে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চাঁদা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ৭ আগস্ট জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে , আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের জাবুল ও কুনার প্রদেশে দুটি প্রতিষ্ঠান খুলবে, যাতে আফগান সরকারের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বাস্তবায়ন আর অব্যাহতভাবে শান্তিপুর্ণরূপে পুনর্গঠন করার ব্যাপারে সাহায্য করা যায়।
|