উত্তর-পূর্ব চীনের হারবিন প্রদেশের মেডিকল বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন হলুদ চুল ও নীল চোখের পুরুষ সবসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্কারের কাজ করেন , কিছু লোক ভাবেন , এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কি একজন বিদেশি ক্লিনার আছে ? আসলে তিনি হলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক , তার নাম সোন মোর ।
মোর যুক্তরাষ্ট্রের লোসএন্জেলসে জন্মগ্রহণ করেছেন । মার্কো পোলোর ভ্রমণ এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি চীন এই নাম মনে রেখেছেন । সেই থেকেই তিনি চীনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন । গত বছরের আগস্ট মাসে তিনি ইন্টারনেটে দেখেছেন যে হারবিন মেডিকল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ইন্সটিটিউটে কিছু বিদেশি শিক্ষককে নিয়োগ করবে ,এই খবর দেখে চীনে চলে আসেন ।
চীনে আসার আগে মোর ভাবত চীনে নিশ্চয়ই অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে । কারণ যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায় চীনামাটি , মজা ইত্যাদি ছোট জিনিস যা চীনে উত্পাদন করা হয় । চীনে গিয়ে মোর দেখেছেন , চীনে শুধু শিল্প প্রতিষ্ঠান বেশি নয় , চীনের সুন্দর সুন্দর দৃশ্যও অনেক বেশি । মোর মনে করেন হারবিনে থাকলে তিনি নিজের আচরণের মাধ্যমে এই শহরকে আরো সুন্দর করতে পারবেন ।
প্রত্যেক বুধবার ও মঙ্গরবারের সকাল ৯ টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মোরের কাজের সময় । যদিও আবহাওয়া অনেক খারাপ , মোর কাজের কাপড় পরে নিজের পছন্দের গান শুনে শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্কারের কাজ করেন । সবার প্রশংসায় মোর আন্তরিকভাবে বলেন , এটা কিছুই না , আমি চীনকে পছন্দ করি এবং হারবিনকে পছন্দ করি , আমি আশা করি এই শহর আরো সুন্দর হবে ।
হ্যালো , কেমন আছেন । বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকেরা মোরকে দেখলে সবসময় তাকে এই কথা বলেন । ৬০ বছর বয়সী উয়েই সাহেব সংবাদদাতাকে বলেন , তিনি আর মোর পুরোনো বন্ধু । এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক জন শিক্ষকও মোরকে জানেন , তিনি বলেন , মোর সমসময় বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্কার করেন । আমি সবসময় তাকে দেখি । এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ ইন্সটিটিউটের কমিউনিস্ট পার্টি কমিশনের চেয়ারম্যান ওয়াং ই লিন বলেন , মোরের আচরণ সমাজকে তার ভালোবাসা ও দায়িত্ব প্রকাশের অভিব্যক্তি। মোর বলেন , এসব কাজ কঠিন নয় । তিনি এই সব কাজের মাধ্যমে চীনাদের মনে একটি ভালো ছাপ ফেলতে চান।
মোরের আন্তরিকতা চীনাদের সম্মান অর্জন করেছে । মোরের জন্মদিনে তার ছাত্রছাত্রীরা তার জন্য একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানের করেছে । সবাই তাকে জিজ্ঞেস করেন তিনি কি কি উপহার পছন্দ করেন । মোর বলেন , আমাকে কিছুই দেবেন না , আপনাদের উচিত আপনাদের ভালোবাসা প্রত্যেক জনকে পাঠানো ।
১৭ বয়সে মোরের মা মারা গেছে , ২১ বয়সে তার বাবারও মৃত্যু হয়েছে । ২৬ বয়স মোর বাড়ি ত্যাগ করে বাইরে কাজ করতে শুরু করেন । বাসা এই শব্দ তার জন্য একটি অস্পষ্ট ধারণা । কিন্তু এবার চীনে তিনি বাসার অনুভূতি খুঁজে বের করেছেন ।
হারবিন মেডিকল বিশ্ববিদ্যালয়ে মোরের একটি ছোট বাড়ি আছে । মোরের অনেক বন্ধু সবসময় তার বাসায় যান , তারা একসঙ্গে আলাপ করেন , আনন্দে সময় কাটান । অনেক শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা এর মাধ্যমে মোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েছে ।
মোর চীনের ঐতিহ্যিক ও বিশেষ খাবার চিয়াও জি খুব পছন্দ করেন । চিয়াও জি খেয়ে খেয়ে মোর সংবাদদাতাকে একটি গোপন কথা বলেন । তিনি বলেন , ভবিষ্যতে আমি বিয়ে করলে একজন চীনা মেয়েকে বাছাই করে নিতে চাই ।
মোর ও হারবিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচুক্তি তাড়াতাড়ি শেষ হবে । এখন মোরের চীন ও চীনা জনগণের সঙ্গে গভীর ভালোবাসা আছে । তিনি বলেন , আমি চীনকে ত্যাগ করতে চাই না । আমি হারবিন এই শহরকেও ত্যাগ করতে চাই না । এখানে অনেক জিনিস আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । সুন্দর সুন্দর বোরফ লাইট , সুস্বাদ্যু চিয়াও জি , চীনের বন্ধু , এই সব নিশ্চয়ই সবসময় আমার স্বপ্নে আসবে ।
|