v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-08-08 20:46:04    
চীনের প্রথম অন্ধ পিয়ানোর সুর ঠিক করার পারদর্শী

cri
    ছেন ইয়েন একজন অন্ধ মেয়ে , তবে পিয়ানোর সুর ঠিক করার ব্যাপারে তিনি পারদর্শী । পিয়ানোর সুর ঠিক করার কৌশল আয়ত করার জন্য ছেন ইয়েন চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেন নি ।

    ছেন ইয়েন ১৯৭৩ সালে উত্তর চীনের হোপে প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন , তিনি পেইচিং শহরে বড় হয়েছেন । জন্ম থেকেই ছেন ইয়েনের চোখের তারার উপর ছানি থাকে বলে ডাক্তার তার চোখে অস্ত্রোপচার করেন । অস্ত্রোপচারের পর ছেন ইয়েনের বাঁ চোখের দৃষ্টি শক্তি মাত্র ০.০২ , তিনি শুধু আলো ও রং অনুভব করতে পারেন । তার ডান চোখের কোনো দৃষ্টিশক্তি নেই । পাঁচ মাসের সময় তার বাবা-মা নিরাশায় তাকে নানীর হাতে দেন , ছেন ইয়েন নানীর যত্ন ও ভালোবাসায় বড় হয়েছেন ।

    ছেন ইয়েন যাতে অন্যান্য ছেলেমেয়ের মতো সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারে , তার নানী ছেন ইয়নের শ্রবণ শক্তি ও স্পর্শ অনুভূতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন । ছেন ইয়েনের বয়স যখন চার বছর , তার নানী তাকে শ্রবণ শক্তির উপর নিভর করে হাটতে বলেন । নানী চীনা মুদ্রার এক সেন্ট , দুই সেন্ট ও পাঁচ সেন্টের কয়ন মাটিতে ফেলেন , ছেন ইয়েন কয়ন মাটিতে পড়ার শব্দ অনুসারে কয়নের মূল্য আন্দাজ করেন । ছেন ইয়েনের স্পর্শ অনুভূতি প্রশিক্ষণের জন্য তার নানী তাকে সূচের ছিদ্রে সুতা ঢোকার কৌশল আয়ত্ত করার নিদের্শ করেন । এই কাজ একজন অন্ধের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। এই কৌশল শেখার জন্য ছেন ইয়েন প্রতি দিন চর্চা করেন । এই সব প্রশিক্ষণ ছেন ইয়েনের স্বনির্ভর জীবন আর পরে পিয়ানোর সুর ঠিক করার কৌশল শিখতে সাহায্য করেছে । ছেন ইয়েন এখন চীনের একজন বিখ্যাত পিয়ানোর সুর বিন্যস্ত মিস্ত্রী হয়েছেন , এই সাফল্যের মূলে রয়েছে ছোট বেলায় নানী প্রশিক্ষণ ও সাহায্য । এই অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে ছেন ইয়েন বলেছেন ,

    "আমার জীবনে নানীর প্রভাব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । আমি নানীর ভালোবাসায় বড় হয়েছি । ছোট বেলায় আমার নানী আমি না খেয়ে মরে যাওয়ার চিন্তার করতেন । তাই তিনি আমার শ্রবণ শক্তি ও স্পর্শ অনুভূতি প্রশিক্ষণ করতেন এবং আমাকে নিজের উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করতে উত্সাহ করতেন । তিনি প্রায় বলেন তুমি কোনো কিছু করতে চাইলে দ্বিধা না করে করতে যাও , সফল ও ব্যর্থ হওয়ার কথা চিন্তা করবে না , কাজ শেখার প্রক্রিয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । আমি ছোট বেলা থেকেই নানীর এই কথা অনুসারে প্রচেষ্টা করি । নানী আরো বলেছেন , পৃথিবীতে অসম্ভব কিছু নেই । তুমি চেষ্টা করার সঙ্গে সঙ্গে কিছু না কিছু ফল পাবে ।"

    ছেন ইয়েনের ছোট বেলা কষ্টকর । স্কুল বয়স হওয়ার পরও তিনি স্কুল ভর্তি হতে পারেন নি । দৃষ্টিশক্তি প্রায় নেই বলে অনেক স্কুল তাকে গ্রহণ করতে চায় না । ১৩ বছর বয়সে ছেন ইয়েন পেইচিংয়ের একটি অন্ধদের স্কুলে ভর্তি হন । ছোট বেলা থেকেই ছেন ইয়েন সংগীত পছন্দ করেন এবং অনেক বাদ্যযন্ত্র শিখেন । অন্ধদের স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের নানা প্রকৌশল শেখানোর ব্যবস্থা আছে । গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে চীন ইউরোপ থেকে পিয়ানোর সুর ঠিক করার উন্নত প্রকৌশল আমদানি করে । ছেন ইয়েন পিয়ানোর সুর বিন্যস্ত করার প্রকৌশল শেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । কিন্তু এই প্রকৌশল আয়ত্ত করা মোটেই সহজ নয় ।

    ছেন ইয়েন বলেছেন , "প্রথম দিকে আমি মনে করি পিয়ানোর সুর ঠিক করা পিয়ানো বাজার কৌশল শেখার মতো সহজ হবে । কিন্তু আমি চিন্তাও করতে পারি নি যে পিয়ানোর আট হাজারের বেশী খুচরাংশ আছে , এই সব খুচরাংশের অবস্থান মনে রাখতে হবে এবং মেরামতের পর সংযোজন করতে হবে । সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার হলো পিয়ানোর খুচরাংশ তৈরী করা । আমাকে কাঠ মিস্ত্রীর মতো পিয়ানোর ছোট ছোট খুচনাংশ তৈরী করতে হবে । দৃষ্টি শক্তি কম বলে আমি প্রায়ই হাতুড়ির আঘাতে ব্যথা পেতাম ।"

    ছেন ইয়েন প্রতি দিন ১৫ ঘন্টা দিয়ে পিয়ানোর সুর ঠিক করার কৌশল শিখেন । ২২ বছর বয়সে ছেন ইয়েন পিয়ানোর সুর ঠিক করার কৌশল আয়ত করেন এবং অন্ধ স্কুলের পড়াশুনা শেষ করেন । ছেন ইয়েন পেইচিংয়ের অনেক পিয়ানো দোকানে কাজ করার দরখাস্ত করেন , কিন্তু একটি দোকানও তাকে গ্রহণ করে না ।ছেন ইয়েন নিরাশ হন নি । তিনি একটি বড় পিয়ানো দোকানে গিয়ে ম্যানেজারকে চাকরী পাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন , ম্যানেজার তাকে একটি পিয়ানোর সুর ঠিক করতে বলেন । ম্যানেজার ছেন ইয়েনের কাজে সন্তুষ্ট হলেন এবং তাকে দোকানে কাজ করতে রাজি হন । ছেন ইয়েন এক মাস সময় নিয়ে পেইচিংয়ের মানচিত্র পরিচিত করার চেষ্টা করেন এবং অতিথির অনুরোধ অনুসারে তাদের বাসায় গিয়ে পিয়ানোর সুর ঠিক করেন । আস্তে আস্তে ছেন ইয়েনের দক্ষতা অতিথিদের স্বীকৃতি পেয়েছে । আরো বেশী লোককে সাহায্য করার জন্য ছেন ইয়েন পিয়ানো প্রশিক্ষণ ও মেরামতের একটি হোটলাইন খুলেন । তিনি বলেছেন ,

    "আমি ১৯৯৬ সালে পিয়ান প্রশিক্ষণ ও মেরামত হোটলাইন খুলেছি । প্রথম দিকে সমাজ আমাকে গ্রহণ করে না । তাই আমি আমার হোটলাইন খোলার মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের পিয়ানো প্রশিক্ষণ আর মেরামতের কাজ করেছি । কাজের সময় আমি অতিথিদের পিয়ানোর সুর ঠিক করে দেই আর অবসর সময় বাচ্চাদের পিয়ানো শিক্ষাই ।"

    এখন ছেন ইয়েন স্থায়ী চাকরী পেয়েছেন । ২০০৪ সালে ছেন ইয়েন একটি বিশেষ কম্পিউটারের মাধ্যমে ' ছেন ইয়েন—কানের পৃথিবী ' নামে একটি বই লিখেন । তিনি তার বইতে নিজের অভিজ্ঞতা বণর্না করেছেন এবং বিকলাঙ্গ বন্ধুদের উত্সাহ করেছেন । একই বছর ছেন ইয়েন পেইচিংয়ে সিন য়ুয়ে নামে একটি পিয়ানোর সুর বিন্যস্ত কোম্পানি খুলেন । তিনি বলেছেন , ইউরোপ ও আমেরিকায় অন্ধদের পিয়ানোর সুর ঠিক করার ইতিহাস শতাধিক বছর পুরনো , কিন্তু চীনের ইতিহাস মাত্র বারো বছর । আমার স্বপ্ন হলো আমার নামে একটি বিখ্যাত পিটানো সুর বিন্যস্ত কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা ।

    ছেন ইয়েন শুধু চীনের প্রথম অন্ধ পিয়ানো সুর বিন্যস্ত মিস্ত্রী নন, চীনের অন্ধদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথমে আত্মজীবনী লিখেছেন , ছেন ইয়েন সাতার কাটতে পারেন , সাইকেন চালাতে পারেন এবং রৌলার স্কেটিং ও টাই কুন দো চর্চা করেন । ছবি আঁকা ছেন ইয়েনের ছোটবেলার শক । ১৯৮৭ সালে তার আঁকা একটি ছবি জাপানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শিশু চিত্র প্রদশর্নীতে পুরষ্কার পেয়েছে ।এখনও তার এই শখ বিলুপ্ত হয় নি , তিনি চীনের ঐতিহ্যিক স্টাইলের ছবি আঁকার কৌশল আয়ত্ত করার জন্য একজন শিক্ষক খুজঁছেন ।