কেউ কেউ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে গেলে রাজনৈতিক তাত্পর্যসম্পন্ন পর্যটন স্থান যেমন হোয়াইট হাউস, আইনসভা ভবন আর কিছু বিখ্যাত যাদুঘর পরিদর্শন করা ছাড়াও সেখানকার উন্নত মানের পাতাল রেল ব্যবস্থাও দেখা দরকার। এখন শুনুন এই সম্পর্কে আমাদের সংবাদদাতা শুয়ে ছিং তুও এর পাঠানো বিস্তারিত প্রতিবেদন।
ওয়াংশিটনের পাতাল রেল হচ্ছে এই শহরের গণ পরিবহন ব্যবস্থার প্রধান অংশ। এখন ওয়াংশিটনের পাতাল রেলে মোট ৮৬টি স্টেশন আছে, মোট দৈর্ঘ্য ১৭০ কিলোমিটার। এই পাতাল রেল ব্যবস্থা ওয়াংশিটনের পাশাপাশির ভার্জিনিয়া আর ম্যারিল্যান্ড রাজ্য সংলগ্ন। ওয়াংশিটন শহরের জনসংখ্যা মাত্র ৬ লাখ। কিন্তু এখানের পাতাল রেলে রোজ গড়পড়তা ৭ লাখ ৫০ হাজার যাত্রীকে পরিবহন করে। যাত্রীদের মধ্যে আশেপাশে অঞ্চলের অধিবাসীও আছেন। আরো আছেন অনেক বিদেশী পর্যটক আর অন্য শহরের লোক।
ওয়াংশিটন গ্রেট নগর পরিবহন ব্যুরোর গণ বিষয়ক মহাধ্যক্ষ ম্যাডাম নোরিন তাহিয়ের জানিয়েছেন, ওয়াংশিটনের পাতাল রেল ব্যবস্থার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পাঁচটি লাইন শহরের কেন্দ্র স্থল থেকে উপকন্ঠের দিকে ছড়িয়ে যায়। পাতাল রেল ব্যবস্থাটি শহরাঞ্চল আর উপকন্ঠ অঞ্চলকে সংযুক্ত করে অধিবাসীদের যাতায়াতের সুবিধা দিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ওয়াংশিটনে কর্মরত অধিকাংশ সরকারী কর্মকর্তা শহরাঞ্চলে থাকেন না। তাঁরা শহরতলিতে থাকেন, প্রতিদিন শহরতলি আর শহরাঞ্চলের মধ্যে যাতায়াত করেন। শহরাঞ্চলে গাড়ির পার্কিং ফি দাম বেশি। পাতাল রেল ব্যবস্থায় সব দিকে যাওয়া যায়। যাত্রীদের বাস্তব চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়।
তাছাড়া ওয়াংশিটনের পাতাল রেল চালুর সময়ও পরিবর্তনশীল। প্রতি সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাতাল রেল ভোর পাঁচটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলতে থাকে। শুক্রবার ও শনিবারে পাতাল রেল ভোর ৩টায় বন্ধ হয়। কারণ পরের দিনে সবাই ছুটি পাবে, অফিসে যেতে হয় না। ফলে অনেকে বিনোদনের জন্য দেরীতে বাসায় ফিরে যান। সেই জন্য ছুটির দিনে পাতাল রেল চালুর সময়ও বেশি থাকে। শুক্তবার অধিবাসীরা বাসায় ফিরতে দেরী করতে পারে , ফলে শনিবার সকালে বিছানা থেকে উঠতেও দেরী হয়, তা বিবেচনা করেই পাতাল রেল কর্তৃপক্ষশনিবার সকালে ৭টা থেকে চালু হয়। রবিবারে পাতাল রেল চালুর সময় আবার পরিবর্তিত হয়ে সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলতে থাকে।
এমন পরিবর্তনশীল সময় বন্দোবস্তু স্থানীয় অধিবাসীদের সমাদর পেয়েছে। ২৪ বছর বয়স্ক জোসেফ শহরতলিতে থাকেন। তবে শহরের বাণিজ্য কেন্দ্রের একটি বারে তিনি কাজ করেন। কাজের জন্য তিনি সপ্তাহান্তিক অবকাশে বেশ দেরীতে বাসায় ফিরেন। ওয়াংশিটনের পাতাল রেল ব্যবস্থার জন্য জোসেফ অত্যন্ত সন্তোষ বোধ করেন। তিনি বলেছেন, "এই পাতাল রেল খুব নির্ভরশীল। অত্যন্ত ভালো। বিশেষ করে সপ্তাহান্তিক অবকাশে চূড়ান্ত পাতাল রেল ভোট ৩টা পর্যন্ত চলে। এটা আমার বড় সহায়ক। আমি দেরিতে কাজ শেষ করলেও সুষ্ঠু পরিবহন উপভোগ করতে পারি। আমার নিজস্ব গাড়ি নেই। টেক্সি ভাড়া করলে ১৫ মার্কিন ডলার লাগবে। পাতাল রেলে মাত্র ২ মার্কিন ডলার লাগে। এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে?"
ওয়াংশিটনের পাতাল রেলের টিকিটের দাম দুরত্বের উপর নির্ভর করে। দুরত্ব বেশী হলে দাম বেশি। সকাল আর সন্ধ্যায় লোকজন বেশি থাকে এ সময় দামও একটু বেশি। বৃদ্ধবৃদ্ধা এবং নিম্ন উপার্জনক্ষম ভাতাভোগী ব্যক্তিদের জন্য টিকিটের দাম কিছু মওকুফ করা হয়। পঞ্চাশের উপর বয়স্ক ওয়াল্টার শেফার্ড মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চাকরী করেন। সম্প্রতি তিনি পাতাল রেলের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বাসা বদল করেছেন। তিনি বলেছেন, "পাতাল রেলে করে অফিসে যাওয়া গাড়ি চালানের চেয়ে অনেক সুবিধা। এটা হলো আমার বাড়ি বদলের অন্যতম কারণ। একজন বৃদ্ধ হিসেবে আমি সাধারণ যাত্রীদের চেয়ে কম ব্যয় করি। তা খুবই ন্যায়সংগত। "
ওয়াংশিটন গ্রেট নগর পরিবহন ব্যুরোর গণ বিষয়ক মহাধ্যক্ষ ম্যাডাম নোরিন তাহিয়ের বলেছেন, যাত্রীদের আরো ভালোভাবে পরিসেবা দেয়ার জন্য ওয়াংশিটনের গ্রেট নগর পরিবহন ব্যুরো একটি ওয়েবসাইট খুলেছে। তাতে যাত্রীরা সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারেন।
|