৩ জুলাই সন্ধ্যায় প্র্যাপিরুন নামক টাইফুন দক্ষিণ চীনের কুয়াংতুঙ প্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার কারণে দক্ষিণ চীনের বেশ কয়েকটি প্রদেশে প্রবল বাতাস ও ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে । এই সব প্রদেশের কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব সহকারে প্র্যাপিরুনের আঘাতের মোকাবেলা করছে এবং দুর্গত জনসাধারণকে ত্রাণ প্রদানেরচেষ্টা চালাচ্ছে ।
প্র্যাপিরুন ৩ জুলাই সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে কুয়াংতুঙ প্রদেশের ইয়াংসি জেলা ও তিয়েন পাই জেলা সংলগ্ন উপকুলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছে । ইয়াংচিয়াং বেতারের সংবাদদাতা লিউ ছাংলি ইয়াংসি জেলা থেকে পাঠানো এক খবরে বলেছেন , প্র্যাপিরুন আঘাত হানার সময় উপকূলীয় এলাকা সহ আশেপাশের এলাকা প্রচন্ডবেগে বৃষ্টিসহ ঝোড় হাওয়া বইতে থাকে । এ সময় বাতাসের গতি ছিল প্রতি সেকেন্ডে৩৩ মিটার । তিনি বলেছেন, আমি এখন ইয়াংসি জেলার সাপাজেন গ্রামের নৌবন্দরে আছি । জায়গাটি সবেমাত্র প্রবল বাতাস ও ঝড়ের শিকার হয়েছে । ঝোড়ের সময় ১২ নম্বর বিপদ সংকেত ছিল । ৩ থেকে ৪ মিটার উচ্চতায় জলোচ্ছাস হয় বলে উপকূলে কারো অবস্থান করা কঠিন ছিল ।
প্র্যাপিরুন আঘাত হানার আগেই কুয়াংতুঙ প্রদেশ কর্তৃপক্ষটাইফুন প্রতিরোধমূলক জরুরী ব্যবস্থা নিয়ে বিপদজনক অঞ্চল থেকে প্রায় তিন লাখ অভিবাসীকে নিরাপদ এলাকায় স্থানান্তরিত করেছে এবং ৪০ হাজারটি মত্স্যশিকার জাহাজকে বন্দরে ফিরিয়ে এনেছে । কিন্তু তা সত্ত্বেও প্র্যাপিরুনের আঘাতে সৃষ্ট প্রবল বাতাস ও ঝড়বৃষ্টির কারণে কুয়াংতুঙ প্রদেশের কুয়াংচৌ ও চুংশান সহ বেশ কয়েকটি শহরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এতে বেশ কয়েকজন লোক মারা গেছেন ।
কুয়াংতুঙ প্রদেশের দুর্যোগ প্রতিরোধ ও বিমোচন বিষয়ক উপ গভর্ণর লি রোংকেন বলেছেন , প্রবল বৃষ্টি থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন ভৌগলিক ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ করা বর্তমানে কুয়াংতুঙ প্রদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ । তিনি বলেছেন , আমাদের ভালভাবে বন্যা প্রতিরোধ করার নানান ব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করতে হবে । প্র্যাপিরোন প্রতিরোধ করা ও ভৌগলিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে । যে অঞ্চলের নাগরিকর প্রাকৃতিকদুর্যোগের সম্মুখীন হন তাদের সবাইকে নিরাপদ জায়গায় সরাতে হবে ।
এখন প্র্যাপিরুন কুয়াংসি অঞ্চলের দিকে সরে গেছে এবং ধীরেধীরে গ্রীষ্মন্ডলীয় ঝড় থেমে যাচ্ছে। কিন্তু আবহাওয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা হুশিয়ার করে দিয়েছেন যে , প্র্যাপিরুনের ধ্বংস করার ক্ষমতাকে হালকা করে দেখা ঠিক হবে না । এর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে এবং তা দীর্ঘস্থায়ীওহতে পারে । কেন্দ্রীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের অনুমান অনুযায়ী পরবর্তী ২-৩ দিনে কুয়াংতুঙ , কুয়াংসি ও হাইনান প্রভৃতি অঞ্চলে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে ।
চীনের বেসামরিক মন্ত্রণালয় কুয়াংতুঙ , কুয়াংসি ও হাইনান অঞ্চলের কাছে এ সংক্রান্তএক জরুরী বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে । বিজ্ঞপ্তিতে প্র্যাপিরুনের প্রবনতা ও তার প্রভাব সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রাখা, বন্যা , পাহাড় ধ্বসে পড়া এবং কাদা-মাটি ও পাথরের প্রবাহপূর্ণ অঞ্চলের অবস্থা তত্ত্বাবধান করা, দুর্যোগ অনুযায়ী যথাযথভাবে ত্রাণের জরুরী ব্যবস্থা নেয়া , বিপদজনক অঞ্চলের জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানেস্থানান্তরিত করা এবং দুর্গত জনসাধারণকে ত্রাণপ্রদানসহ সাহায্য করার জন্যে যথাসময়ে জনবল পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে ।
চীনের আবহাওয়া ব্যুরোর প্রধাস প্রকৌশলী ছিয়াও লিন বলেছেন , বিগত ৫০ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রত্যেক বছর প্রায় ৭-৮টি টাইফুন চীনের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনে থাকে । এ পর্যন্ত প্র্যাপিরুন নিয়ে এ বছর মোট ৫টি টাইফুন চীনে আঘাত হেনেছে । তিনি বলেছেন, এ পর্যন্ত এ বছরের ৬টি টাইফুনের মধ্যে৮০ শতাংশ অর্থাত ৫টি টাইফুন চীনে আঘাত হেনেছে । এটা বিগত শত বছরের মধ্যে কিছুটা কম ।
বর্তমানেচীনের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো জরুরী ব্যবস্থা নিয়ে প্র্যাপিরুনের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে উঠার চেষ্টাচালাচ্ছে ।
|