৩ আগস্ট হচ্ছে ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদি নেজাদের ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথম বার্ষিকী । ঠিক কয়েক দিন আগে অর্থাত ৩১ জুলাই জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের পরমাণু সমস্যা সংক্রান্ত ১৬৯৬ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয় । প্রস্তাবে ইরানের প্রতি ৩১ আগস্টের আগে ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ ও সংশ্লিষ্ট সব ধরণের গবেষণা ও উন্নয়নমূলক তত্পরতা স্থগিত রাখার দাবি জানানো হয়েছে । এই দুটো তারিখ এত কাছাকাছি থাকায় লোকেরা স্বাভাবিকভাবে পরমাণু সমস্যার সংগে নেজাদের সম্পর্ক সংযুক্ত করেছে ।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৬৯৬ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিলিতকণ্ঠে মনে করে যে , এই প্রস্তাব যুক্তিযুক্ত । প্রথমত প্রস্তাবটিতে ইরানের পরমাণু সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রতিফলিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে আলোচনার মাধ্যেমে সমস্যা সমাধানের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়া হয়েছে ।
দ্বিতীয়ত যদিও প্রস্তাবটিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে , ৩১ আগস্টের আগে ইরানকে জাতি সংঘ প্রস্তাব মেনে চলতে হবে , তথাপি ইরান বরাবরই ঘোষণা করে এসেছে যে, সে ২২ আগস্টের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে পরমাণু সমস্যা সংক্রান্ত ৬ জাতির প্রস্তাবের জবাব দেবে , তা বিবেচনা করে প্রস্তাবটিতে ইরানের জন্যে চিন্তাভাবনা ও পদক্ষেপের সময় রাখা হয়েছে । তৃতীয়ত প্রস্তাবটিতে এই মৌলিক পূর্বশর্ত রয়েছে যে , ইরানকে ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা স্থগিত রাখতে হবে । এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পারমাণবিক অবিস্তারের দাবির সংগে সংগতিপূর্ণ । চতুর্থত পরবর্তী পদক্ষপে নেয়ার আগে নিরাপত্তা পরিষদকে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হবে । তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে , ৩১ আগস্টের আগে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের তত্পরতা বন্ধ না করলেও ১৬৯৬ নম্বর প্রস্তাবটি স্বতস্ফুর্তভাবে ইরানের বিরুদ্ধে শাস্তি দিতে পারবে না ।
তা সত্ত্বেও এই প্রস্তাবটির কারণে ইরান প্রথমবারের মত সত্যিকারভাবে নির্বাচনের বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে । ইরান পিছ হটে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা স্থগিত রাখার অবস্থায় আলোচনায় বসবে , না আন্তর্জাতিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পরোয়া না করে তার পারমাণবিক তত্পরতা সে অব্যাহত রাখবে ? ইরান প্রথম পথ বেছে নিলে এখন থেকে আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পরমাণু সমস্য সমাধানের গতিধারায় আনা হবে । তবে গত এক বছরে ইরানের সমস্যার পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় , ইরান দ্বিতীয় পথ বেছে নিলেও আশ্চর্যের কিছু হবে না ।
নেজাদের ক্ষমতাসীন হওয়ার পর গত এক বছরে ইরান পরমাণু সমস্যায় দক্ষতার সংগে ধীরস্থির নীতি অনুসরণ করে এসেছে । যদিও প্রতিবার ইরান পশ্চিমা দেশগুলোর প্রবল বিরোধিতা ও চাপের সম্মুখীন হয়, তবুও সে সবসময় চাপের মোকাবিলা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাস্তব সত্যকে মেনে নিতে বাধ্য করতে সক্ষম হয় । এমনিতে ইরানের হাতে যুক্তরাষ্ট্রের মোকাবেলার জন্যে ইরাক ও আন্তর্জাতিক তেলের দাম - এই দুটো ভালো অস্ত্র ছিল । সাম্প্রতিক লেবানন-ইসরাইল সংকটের সূচনা ও বিকাশ মধ্যপ্রাচ্যের বিশৃংখলাপূর্ণ পরিস্থিতিকে আরো তীব্রতর করে তুলেছে । এটা পরমাণু সমস্যায় ইরানের দর কষাকষির জন্যে খুঁটির সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে ।
ইউরোপের কোনো কোনো পত্রিকা মনে করে যে , ইরান দ্বিতীয় পথ বেছে নিলেও ২২ আগস্টের আগে ৬ জাতির প্রস্তাবের জবাব দেয়ার বিষয়টি কোনোমতেই দ্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যাত হবে না । তার লক্ষ্য হবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা স্থগিত না রেখে অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংগে যোগাযোগ বজায় রাখা । তবে খুব সম্ভবত পশ্চিমা দেশগুলো তা গ্রহণ করবে না । অথচ তাদের আর কি উপায় থাকবে ? গত কয়েক বছরে ইরান তার সমৃদ্ধ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদের সদ্ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া প্রায় সমস্ত বৃহত শক্তিকে ইরানের সংগে সহযোগিতার ক্ষেত্রে টেনে এনেছে । যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক শাস্তিমুলক ব্যবস্থা অবলম্বন করলে তা অবশ্যই এসব বৃহত শক্তির স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করবে ।
|