পয়লা জুলাই চীনের ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ সার্বিকভাবে চালু হয়েছে । ফলে তিব্বত স্বায়তস্বাসিত অঞ্চলে রেলপথের শূন্য স্থান পূরণ করা হয়েছে । এই রেলপথের চালু হওয়া বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । কিছু বিদেশি বন্ধু বলেছেন , ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ যেমন তিব্বতের জনগণকে সুখ ও শান্তি এনে দিয়েছে এবং অন্য অঞ্চলে যোগাযোগের সুবিধা করে দিয়েছে , তেমনি অন্যান্য দেশের জনগণের জন্য পুঁজি বিনিয়োগের সুবিধাও যুগিয়েছে । আজকের অনুষ্ঠানে শ্রোতা বন্ধুরা আমাদের সঙ্গে এই সম্পর্কে বিদেশি বন্ধুদের মতামত শুনুন ।
লাসা শহরের বাখুও রাস্তায় অনেক দোকান আছে । সেখানে সিয়ামুকাপু নামে একটি নেপালী রূপার জিনিসের দোকান আছে , এই দোকান খুবই বিখ্যাত । তবে জুন মাসে সংবাদদাতা সেখানে গিয়ে দেখেছেন এই দোকান পুনরায় সাজানো হচ্ছে ।
৪৫ বয়সী নেপালী ব্যবসায়ী রত্না কুমারতুলাদর বলেছেন , এই বার পুনরা সাজানো এই দোকান খোলার পর সবচেয়ে বড় হবে । দোকানের সংস্কারে তিনি ১৫০ হাজার রেন মিন পি
এই রেলপথ চালু হওয়ার পর আমার মনে হয় আমার দোকানের ব্যবসা আরো ভালো হবে । কারণ আরো বেশি মানুষ তিব্বতে আসবে , লাসায় আসবে এবং আমার দোকানে আসবে । সুতরাং আমাদের এখন থেকে কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে ।
লাসায় তুলাদর ২২ বছর ধরে ব্যবসা করেন । এখন তিনি বেশির ভাগ সময় লাসায় থাকেন । কয়েক মাস পর তিনি একবার নেপালে যান এবং সেখান থেকে কিছু রুপার জিনিস আনেন । তুলাদরের বাবা লাসায় ৪০ বছর ধরে আছেন । তিনি বিনিময় ব্যবসা করেন , ভারতের কাপড় , সাবান এর পরিবর্তে তিব্বতের পশম ও চীনামাটির বিনিময় করেন । তখন তিব্বতে বিদ্যুত ও ভালো পথ ছিলনা । তুলাদরের বাবা দু'তিন বছর পর পর নেপালে ফিরে যেতে পারতেন । এসব ছোট ছোট ঘটনা তুলাদরের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । এখন ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ চালু হয়েছে । নেপাল থেকে তিব্বতে ব্যবসা করতে এখন অনেক সুবিধা হয়েছে ।
রেলপথের চালু হওয়া তিব্বত ও নেপাল উভয়ের জন্য ভালো । আমরা আগে থেকেই ছিংহাই-তিব্বত রেলপথের চালু হওয়ার আশা করেছিলাম । কারণ এই রেলপথের মাধ্যমে অনেক পণ্যদ্রব্য লাসায় পাঠাতে পারবে । আমরা ছিংহাই প্রদেশ থেকে পণদ্রব্য নেপালে পাঠাতে পারবো এবং নেপাল থেকে চীনেও দ্রব্য পাঠাতেও পারবো । এই রেলপথ আমাদের ব্যবসার জন্য সহায়ক হবে । আমি খুব খুশি ।
তুলাদর এখন লাসায় প্রধানত নেপালের রূপার জিনিস ও বৌদ্ধ মূর্তি বিবিধ পণ্য বিক্রি করেন । রেলপথ চালু হওয়ার পর চীনের মূলভূভাগে কিছু সুন্দর এবং সস্তা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কিনে নেপালে বিক্রি করার পরিকল্পনা তার আছে । নিজের পরিকল্পনা সম্বন্ধে তুলাদর খুব আশাবাদী :
চীনের অন্যান্য শহরে আমার ব্যবসার প্রসারণ করতে আমি খুব আগ্রহী । যেমন পেইচিং বা ছেং তু শহর । অন্য শহরে নতুন শাখা দোকান খুলতে আমি খুব আশাবাদী । আশা করি এই রেলপথের মাধ্যমে আরো বেশি পণ্যদ্রব্য নেপাল থেকে চীনের বিভিন্ন শহরে পাঠানো যাবে ।
বর্তমানে লাসায় নেপালী ব্যবসায়ী বেশি নয় । তুলাদর অনুমান করেন যে , রেলপথের চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিব্বতে আরো বেশি নেপালী ব্যবসায়ী আসবেন । তিনি সংবাদদাতাকে বলেন , নেপালের পত্রিকায় ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ সম্বন্ধে অনেক খবর প্রকাশ করেছে । এই রেলপথের চালু হওয়া নেপালের অর্থনৈতিক মহলের জন্যও একটি সুখবর ।
বা খুও রাস্তায় তুলাদরের দোকানের কাছাকাছি মাকি আমি নামে একটি তিব্বত রেস্তোরা আছে । স্কটল্যান্ডের ভিভিয়েন ম্যাকডোনাল্ড নিজের শিশুর সঙ্গে এই রেস্তোরায় চা খাচ্ছেন । এই রেলপথ সম্পর্কে তিনি বলেন :
তিব্বতীদের জন্য এই রেলপথ চালু হওয়ার পর আরো বেশি পণদ্রব্য তিব্বতে পাঠানো যাবে । তাদের জীবন আরো ভালো হবে এবং আরো সুবিধা হবে । আমার মনে হয় আরো বেশি পর্যটক তিব্বত ভ্রমণ করতে আসবে । কারণ ট্রেনে ভ্রমণ করা বিমানের চেয়ে আরো সস্তা । এই রেলপথের চালু হওয়া আরো বেশি সাধারণ লোকের জন্য সুযোগ যুগিয়েছে ।
ট্রেনের টিকিট সস্তা ছাড়াও পর্যটকরা ট্রেনে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারে । এই রেলপথ বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যের রেলপথ বলা হয় । ম্যাকডনাল্ডের মেয়ে সংবাদদাতাকে জানিয়েছে , সে ট্রেনে তিব্বতে গিয়ে ভ্রমণ করতে খুব আগ্রহী ।
আমার মনে হয় হয়ত ট্রেন করে তিব্বতে যেতে অনেক সময় লাগবে , তবে পথের সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবো । তা বিমানের চেয়ে আরো সুন্দর । আমার মনে হয় পর্যটকরা নিশ্চয় এমন ভ্রমণের বিষয়টি পছন্দ করে ।
এই বিশ্বে সমুদ্রপষ্ঠ থেকে সবচেয়ে উচ্চু রেলপথ সম্পর্কে শুধু তিব্বতের ২০ লাখ জনগণ নয় , বিশ্বের অন্যান্য জায়গার জনগণে নিজের সুন্দর আকাঙ্খা আছে ।
|