দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের নেচিয়াং শহরের কেন্দ্রস্থলে চেন মিন লিয়াং নামে ১১৩ বছর বয়স্কা একজন বৃদ্ধা থাকেন । জন্ম থেকে এপর্যন্ত তিনি কখনো হাসপাতালে যান নি । তিনি দাঁতহীন মুখ দিয়ে শক্ত খাবার খেতে পারেন।
বর্তমানে এই বৃদ্ধার শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি এখনো ভালো আর তাঁর বুদ্ধি শক্তি স্বাভাবিক । বৃদ্ধাটির সপ্তম ছেলে বলেছেন , মায়ের চেয়ে দু' বছরের বড় বাবা ৪৩ বছর বয়সে মারা গেছেন । মা বিধবা হয়েছেন , ৭০ বছরের বেশী সময় হল । জীবনে তিনি অসংখ্য অসুবিধা কাটিয়ে উঠেছেন । কয়েকটি বাচ্চাকে দেখাশুনার জন্য তিনি আর বিয়ে করেন নি । তখন পরিবার খুব গরীব ছিল । সংসার চালাবার জন্য তিনি অন্যদের বাড়ির কাজ করার উপর নির্ভর করে উপার্জন করতেন । যখন তার বয়স ৬২ বছর , তখন তিনি অষ্টম ছেলের সংগে চিকুং শহরে গিয়ে বাস করেন । অষ্টম ছেলে তার মায়ের দীর্ঘায়ুর কয়েকটি অভিজ্ঞতা প্রসংগে বর্ননা করেছেন ।
এক , প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠার পর তিনি পূর্ব দিকে মুখ করেন । ১৮ মিনিটের মতো তিনি দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকেন , চোখ বন্ধ করেন আর আবারও দূরে তাকান । পরবর্তী ১২ মিনিটে তিনি দু' চোখের আশেপাশে ম্যাসেজ করেন । তার পর তিনি উদ্যানে গিয়ে ব্যায়াম করেন । তিনি প্রতিদিন এই শরীর চর্চায় অবিচল থাকেন ।
দুই, দয়া , স্নেহ ও মমতার প্রকৃতি।
ছেলেদের জানা মতে বৃদ্ধা কখনো অন্যদের সংগে ঝগড়া করেন নি এবং বাচ্চদের গালি দেন নি । বাচ্চদের শিক্ষার ব্যাপারে তিনি সব সময় যুক্তিযুক্ত পরামর্শ দেয়ার পদ্ধতি গ্রহণ করেন । তিনি বাচ্চাদের আদর আর স্নেহ করেন , নমনীয়তা অবলম্বন করেন , কখনোরাগ করেন না ।
তিন, পরিশ্রমী আর জীবনযাপনে অধ্যবসায়ী
গত পরশু বছরের শরত্কালে বৃদ্ধারপ্রথমবারের মতো ঠান্ডালেগেছে । সর্দির পর অসুবিধার জন্য তার ছেলে তার জন্য একটি ক্রাচ কিনেছেন । অর্ধেক বছর পর তিনি ক্রাচ ছেড়ে পিঁড়ির সাহায্যে হেটে চলেন । এমনকি বাথরুমে যাওয়া আর গোসল করার সময়ও তিনি অন্যদের সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেন । গত বছরের প্রথমার্ধে তিনি তার চতুর্থ ছেলের জন্য কাপড়-চোপড়ও কেচেছেন ।
চার, ব্যাধি প্রতিরোধ করার জন্য বনৌষধি ব্যবহার ।
যখন তার বয়স ৬০ বছরের বেশী , তখন বয়স্কদের বাতরোগ প্রতিরোধ করার জন্য তিনি মাঝে মাঝে উপকন্ঠের পাহাড়ে উঠে বনৌষধি সংগ্রহ করতেন । গোসল করা আর পা ধোয়ার সময়ে এই সব ব্যবহার করা হয় । তা ছাড়া বৃদ্ধা বনৌষধি থেকে ঔষধ তৈরী করে প্রতিদিন তা পান করেন ।
পাঁচ, বৃদ্ধাটা রাতে খুব দেরীতে ঘুমান না এবং ভোরে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেন । দুপুর বেলায় একটু ঘুমান , রোজ ওষুধের মতোঅল্প মদ খান , মাংস বেশী খান না , হস্তশিল্প দ্রব্য তৈরী চর্চা করেন এবং টেলিভিশনে খবর ও ছায়াছবি দেখতে পছন্দ করেন।
বৃদ্ধা স্বাস্থ্য রক্ষার উপর খুব গুরুত্ব দেন । বসন্তকাল ও শরত্কালে তিনি দুদিনে একবার গোসল করেন , গরমকালে তিনি প্রতিদিন গোসল করেন আর শীত্কালে তিনি কমপক্ষ একবার গোসল করেন । তিনি নিজের হাতে কাপড়-চোপড় কাচেন ।
এখন সুস্বাস্থ্যের সংগে পড়াশুনা সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলা হবে ।
পড়াশুনা রোগ প্রতিরোধ আর স্বাস্থ্য রক্ষার অনুকুল । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি তদন্ত অনুযায়ী , হেপাটাইটিস , ডায়াবেটিক আর হৃদপিন্ড ও রক্তনালীর রোগী ও তাদের মৃত্যুহার রোগীদের শিক্ষা আর সংস্কৃতির মানের সংগে জড়িত। যাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির মান উচুঁ , তাদের এই সব রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়ার হার কম এবং তাদের দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনাও বেশী ।
বই পড়ায় যে রোগ প্রতিরোধ আর স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায় , তার মূলে রয়েছে ভালো মন , মন শক্তি চর্চা আর জীবনযাপনের কৌতুহল বৃদ্ধি ।
|