v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-08-01 16:48:40    
বিদেশী চীনা চলচ্চিত্র শিল্পী লু ইয়েন

cri
    লু ইয়েন হচ্ছে মাকির্ন অস্কার পুরস্কারের বিচারক কমিটির একমাত্র প্রাচ্য দেশের সদস্যা । এ বছর লু ইয়েনের বয়স ৭৯ বছর , তিনি একজন বিদেশী চীনা চলচ্চিত্র শিল্পী । বয়স বেশী হলেও লু ইয়েন এখনও দেখতে সুন্দর ।

    লু ইয়েন পেইচিংয়ে জন্মগ্রহণকরেন । ১৯৪৭ সালে তিনি বাবা-মার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের হনুলুলুতে থাকতে শুরু করেন । ১৯৫৬ সালে লু ইয়েন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি অপেরা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন । পড়াশুনার শেষ বছরে নাটক ' আগষ্ট মাসে চা দোকানে ' লু ইয়েনের অভিনয় বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । তখন থেকে লু ইয়েন হলিউডে তার চলচ্চিত্র শিল্পী জীবন শুরু করেন । তিনি অস্কার পুরস্কার পাওয়া বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ফ্যান্ক বোজার্জি ও বিখ্যাত চলচ্চিত্র শিল্পী মার্লোন ব্র্যান্ডারসঙ্গে সহযোগিতা করে অভিনয় করেছেন , হলিউডে লু ইয়েনের সুনাম আছে ।

    লু ইয়েনের বয়স যখন কম , চীনের দ্বার রুদ্ধ ছিল । তিনি প্রায়ই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই ধরনের সংস্কৃতির বড় ব্যবধান অনুভব করেন । তিনি বলেছেন , যুক্তরাষ্ট্রে একজন চীনা চলচ্চিত্র শিল্পী হিসেবে আমি অভিনয়ের সুযোগ বেশী পেতাম না । তখন চীন মুক্তদ্বার নীতি কার্যকরী করে নি , চীন সম্পর্কিত ছায়াছবির সংখ্যা কম । তাই আমাদের হাতে  বেশীর ভাগই চল্লিশ বা পঞ্চাশ বছর আগের পুরনো কাহিনীর চিত্রনাট্যের কপিগুলো । যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র পরিচালকরা চীনের সংস্কৃতি জানতেন না , শুটিংয়ের সময় মতভেদ দেখা দিলে পরিচালক মুখে আমার মতামত গ্রহণ করতেন , কিন্তু আসলে তিনি আমার মতামত শুনতেন না । চীনের বাস্তব অবস্থা বুঝা কঠিন ব্যাপার ।

    ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থবিনিয়োগে তৈরী চলচ্চিত্র ' শেষ সম্রাট'-এ লু ইয়েন প্রধান নায়িকা রাণী ছিসির ভুমিকায় অভিনয় করেন । এই ছবি তৈরীর সময়ও ইতালির চলচ্চিত্র পরিচালক বেনার্দো বের্টোলুসি ও লু ইয়েনের মধ্যেও বার বার তর্কবিতর্ক হয়েছিল । এই ছবি ১৯৮৭ সালে অস্কার শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার জয় করেছে ।

    এই ছায়াছবির পর লু ইয়েন অনেক চীনাভাষার ছবিতে চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । তিনি মোট তিন বার চীনের ইতিহাসের বিখ্যাত ব্যক্তি—ছিং রাজবংশের শেষ রানী ছি সির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এবং তিনবার তাইওয়ানের চলচ্চিত্র পুরস্কার—সোনালী ঘোড়া পুরস্কার পেয়েছেন । মূলভূভাগের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সিয়ে চিংয়ের পরিচালিত ছায়াছবি ' শেষ অভিজাত পরিবার '-এ লু ইয়েন চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । তা ছাড়া লু ইয়েন নাটক ' ফুল ঢাকের গান ' , ' সু সি হুয়াংয়ের জগত ' , ' আগষ্ট মাসের চা দোকান ' ও 'বাগানের স্বপ্ন ' ইত্যাদিতে প্রধান নায়িকার ভুমিকায় অভিনয় করেছেন । গত ৩৫ বছরে লু ইয়েন যুক্তরাষ্ট্র , চীন ও প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মোট দু শ'রও বেশী চলচ্চিত্র , নাটক , টেলিভিশন নাটক ও অপেরায় অভিনয় করেছেন এবং নানা ধরনের পুরস্কার পেয়েছেন । পুরস্কার পাওয়া সম্বন্ধে লু ইয়েন বলেছেন , আমি অনেক পুরস্কার পেয়েছি , এতে আমি আনন্দ বোধ করি । কারণ আমার অভিনয় বিশেষজ্ঞ ও দর্শকদের স্বীকৃতি পেয়েছে । কিন্তু আমি জানি আমার পাওয়া নানা ধরনের পুরস্কারের পিছনে অনেক লোক আমাকে সাহায্য করেছেন । দর্শকরা শুধু অভিনেতা- অভিনেত্রীর সাফল্য দেখেছেন , আমার পিছনে অনেক লোক নীরবে অনেক কাজ করেছেন , তারা নীরব বীর । আমি মনে করি , তাদের মধ্যে পরিচালকদের অবদান সবচেয়ে বড় । বিখ্যাত পরিচালক লি হান সিয়ানের সঙ্গে সহযোগিতা করার সময় আমি লক্ষ্য করেছি , পরিচালক লি হান সিয়ান একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি । তিনি চলচ্চিত্রের সম্পাদনা , আলোকচিত্র গ্রহনআর চিত্রশিল্প সম্বন্ধে ভালো করে জানেন । তার স্ত্রী আমাদের গ্রুপের সবাইকে তার বাড়ী নিয়েছিলেন ।

    বহু বছর ধরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান আর দুদেশের জনগণের সমঝোতা বাড়ানোর জন্য লু ইয়েন অনেক অনুকূল কাজ করেছেন । তিনি দুটি দেশের উত্কৃষ্ট ছবি , টি ভি নাটক , বইপত্র ও ঐতিহ্যিক নাটক দুদেশের জনগণের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন । তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কার্টুন ছবি ' মিকি মাউস এন্ড ডোনাল্ড ডাক ' চীনা ভাষায় অনুবাদ করেছেন । চীনের ছেলেমেয়েরা এই ছায়াছবি খুব পছন্দ করেন । চীনের চলচ্চিত্র শিল্পী চাং চি ই ও কোং লি প্রমুখ লু ইয়েনের সাহায্যে যুক্তরাষ্ট্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন এবং স্বীকৃতি পেয়েছেন । লু ইয়েন বলেছেন , আমি আশা করি , আমি দুটি দেশের সংস্কৃতির মধ্যে সেতুর ভুমিকা পালন করতে পারবো। আমি চীনের সংস্কৃতি পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রচার করতে চাই । আমি আশা করি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ছায়াছবি তৈরী ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো বাড়বে এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে দুটি দেশের সমঝোতা বাড়বে , এতে দুটি দেশের জনগণ একে অপরের সংস্কৃতি , নাগরিকদের জীবন আর সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাবেন এবং পরস্পরের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পারেন ।

    চীনে থাকাকালে লু ইয়েন চীনের বিখ্যাত পিকিং অপেরা শিল্পী মেই লান ফাং ও ইউ চে ফেইয়ের কাছ থেকে পিকিং অপেরা শিখেছিলেন । তাই তিনি প্রায়ই মঞ্চে পিকিং অপেরা অভিনয় করতেন । চীনের ঐতিহ্যিক পিকিং অপেরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কাছে পরিচিত করার জন্য ১৯৮০ সালে লু ইয়েন যুক্তরাষ্ট্রে ' পিকিং অপেরা নির্বাচনী সংগ্রহ ' প্রকাশ করেছেন । এই সংগ্রহে তিনি চীনের পাঁচটি ঐতিহ্যিক পিকিং অপেরা চীনা ভাষা থেকে ইংরাজী ভাষায় অনুবাদ করেছেন ।এই পাঁচটি ঐতিহ্যিক পিকিং অপেরার নাম হলোঃ ' দামী পাথরের ব্রেসলেট কুড়ানো ', ' উ চিয়া ফো ' , ' মাঝির কাহিনী ', ' ফেন হো নদী উপসাগর ' আর ' প্রজাপতির স্বপ্ন '। তিনি চীনের বিখ্যাত অপেরাগুলোর চরিত্রগুলো সম্বন্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর ভুলবুঝাবুঝি দূর করার চেষ্টা করেছেন। পশ্চিমা দেশগুলোর দর্শকরা যাতে পিকিং অপেরার কাহিনী ভালোভাবে বুঝতে পারেন , তার জন্য তিনি সৃজনশীলভাবে পিকিং অপেরার চীনা ভাষায় গীত গানগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ইংরাজীতে কথা বলা আর মঞ্চের পাশে ইংরাজী ভাষার ব্যাখ্যা দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন । তার এই সব ব্যবস্থা মার্কিন নাগরিকদের চীনের ঐতিহ্যিক পিকিং অপেরা উপভোগ করতে সাহায্য করেছে ।

    লু ইয়েন দীর্ঘদিন পাশ্চাত্য সংস্কৃতির পরিবেশে থাকেন । কিন্তু তিনি কখনও ভুলেন নি যে তিনি একজন চীনা । চীনের ঐতিহ্য , চীনের সংস্কৃতি , চীনের গৌরব ও দুঃখ তিনি কখনই ভুলেন নি । তিনি চীনের সংস্কৃতি ও সাফল্য পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রচারের নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন ।