বৈজ্ঞানিক গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, তামাক আগ্নিসংযোগ করা হলে তা থেকে প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি ক্ষতিকর বস্তু সৃষ্টি করে, যারফলে ধূমপায়ী লোকেরা ক্যান্সার, হৃদরোগ , রক্তনালীর রোগ আর অস্টেওফোরোসিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়। প্রতিবছর বিশ্বের মোট ৫০ লাখ লোক ধূমপান জলিত রোগে মারা যায় । অনেক ধূমপায়ী সিগারেট সেবন ত্যাগ করতে চায়, কিন্তু বাস্তবায়িত করতে পারে শুধু কয়েক জন। তাহলে সিগারেট সেবন ত্যাগ করার ভাল উপায় আছে কিনা ? আজকের " বিজ্ঞান ও জীবন" অনুষ্ঠানে আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
বর্তমান বিশ্বের মোট ১.১ বিলিয়ন ধূমপায়ী আছে, তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি সিগারেট সেবন ত্যাগ করতে চায়। তাহলে সিগারেট সেবন ত্যাগ করার উপায় কি? চীনের রোগ বিষয়ক প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের উপপ্রধান ," ধূমপায়ী প্রথমবারের মত সিগারেট সেবন ত্যাগ করলে, তার মনোবল অনেক জোড়ালো, সে আশা করে তার ঘনিষ্ঠ লোকেরা তাকে সমর্থন করবে । সমাজে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে সিগারেট সেবন ত্যাগ করা বেশি সহজ হবে। ধূমপান খুব বেশি করার জন্য মাঝে মাঝে ওষুধ খাওয়া উচিত। তাই মোটের উপর মোট তিনটি বিষয় আছে , তা দৃঢ়মনোবল , পরিবেশ ও ওষুধের ওপর নির্ভরতা।"
ইয়াং কুংহুয়ান ঠিক কথাই বলেছেন, দৃঢ়মনোবল , পরিবেশ ও ওষুধের ওপর নির্ভরতা হচ্ছে সিগারেট সেবন ত্যাগ করার তিনটি চাবিকাঠি। আমরা প্রথম দৃঢ়মনোবল নিয়ে আলোচনা করবো। দৃঢ়মনোবল থাকলে যে প্রাথমিকভাবে জানে যে ধূমপান শুধু স্বস্থ্যের অনেক ক্ষতি করছে তা নয়, বরং একটি খারাপ অভ্যাস । "বয়স বাড়ার সময় ধূমপান করলে কোনো লাভ নেই। বরং ক্ষতির পরিমান বেশী। আমার কাশি দেবার সময় কাশির সাথে যে শ্লেষ্মা নির্গত হয় তা হলো কালো রুঙ ।
শ্রোতাবন্ধুরা, যদি আপনি ধূমপান করার ক্ষতি ও খারাপ অভ্যাস সম্পর্কে এখনো বেশি না বুঝতে পারেন , তাহলে আপনাকে যে কোন ভাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে জানতে হবে।
কোনো কোনো লোক বলছে যে , ধূমপায়ী ও অধূমপায়ীর মুখগহ্বর থেকে জীবাণু দু'পক্ষের মধ্যে ধূমপায়ীর অনেক কম। আরো কোনো কোনো লোক বলছে যে , ধূমপায়ীরা সিগারেট সেবন ত্যাগ করার পরও রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
এসব ভুল কথা । কিছু কিছু ধূমপায়ীর যে সিগারেট সেবন ত্যাগ করার দৃঢ়মনোবল রয়েছে তা জাগিয়ে তুলতে হবে। তাই সকল ধূমপায়ীকে সংশ্লিষ্ট জ্ঞান প্রদান করা দরকার । আসলে প্রচুর বৈজ্ঞানিক পরিক্ষা নীরিক্ষা প্রমাণ করেছে যে, ধূমপান করলে শুধু নিজেরই ক্ষতি হয়, এতে কোনো লাভ নেই ।
দৃঢ়মনোবল ছাড়াও একটি ভাল পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যে সমাজের সার্বিক সুন্দর পরিবেশ ও পরিবারস নিজ এলাকার ছোট পরিবারের সুষ্ঠু পরিবেশ । কিন্তু প্রাথমিকভাবে উচিত হচ্ছে সমাজের সার্বিক পরিবেশের ব্যপক পরিবর্তন করা ।
বর্তমান বিশ্বের মোট ১৯০টিরও বেশি দেশ " তামাক নিয়ন্ত্রণ কাঠামো প্রস্তাবের " সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। প্রতিদিনই তামাক নিষিদ্ধ আইন বিভিন্ন দেশে তৈরী হচ্ছে । তামাক নিষিদ্ধ সহায়ক সার্বিক পরিবারের সুষ্ঠু পরিবেশ এখন গড়ে তোল ।
সমাজের সার্বিক পরিবেশ ছাড়াও নিজের পরিবার ও এলাকার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধুর কাছে এখন সিগারেট সেবন ত্যাগ করার খবর জানাতে হবে এবং আশা করে সে তাদের সমর্থন পাবে। এর সঙ্গে সঙ্গে সকল সিগারেট সেবন পরিহারকারী এক সঙ্গে পারস্পরিকভাবে নিজেদের অবস্থান রক্ষায় মত বিনিময় করতে পারে। এইভাবে সিগারেট সেবন ত্যাগ করা বেশি সহজ হবে।
আতিরিক্ত ধূমপানকারীকে সিগারেট সেবন ত্যাগ করার সময় অবশ্যই ওষুধ খাওয়া উচিত। এসব ওষুধ ধূমপায়ীর সিগারেট সেবন ত্যাগ করার পর ধারাবাহিক মাথা ব্যথা সহ অন্যান্য রোগের জন্যেও সহায়ক হবে।
বর্তমানে সিগারেট সেবন ত্যাগ করার ওষুধ অনেক রকমের আছে। সচরাচর দেখা যায় যে ক্রমাগত চিবোতে হয় এমন লজেনচুষ। তার উপকারীতা হচ্ছে ধূমপায়ী সিগারেট সেবন ত্যাগ করার পর ধূমপায়ীকে তামাকের ওপর নির্ভরশীলতা দ্রুতভাবে কমানোর সুবিধা পাওয়া ।
উল্লেখ্য, যদি আপনি সিগারেট সেবন ত্যাগ করতে চান, তাহলে ছ'য় মাস পর্যন্ত আপনাকে এইসব পদ্ধতিবজায় রাখতে হবে। আপনার সিগারেট সেবন ত্যাগ করার মনোবলও অক্ষুন্ন রাখতে হবে।
লু সিউসিয়া একজন শিক্ষক । তিনি প্রায় ৩০ বছরেরও বেশী ধূমপান করেছিলেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি সিগারেট সেবন ত্যাগ করেছেন। কিন্তু একবছর পর, তিনি আবার ধূমপান করছেন। এখন প্রতিদিন কমপক্ষে ৪টি সিগারেট ধূমপান করেন।
" আমার বন্ধু আমাকে জিজ্ঞাস করেন ' আমি কেন আবার ধূমপান করি?' আমি উত্তর ' আমার জীবনে কোনো অন্য খারাপ শখ নেই, তাই শুধু এই ধূমপান করি'।"
আসলে আবার ধূমপাত করার ক্ষেত্রে ভয় লাগবে না। খুব কম লোকই সিগারেট সেবন ত্যাগ করার লক্ষে একবার বা একবারেরও বেশী ব্যর্থ হবার পর, স্থায়ীভাবে সিগারেট সেবন ত্যাগ করার মনোবল বজায় রাখতে পারে। জানা গেছে, গড়পড়তা একজন সাতবার সিগারেট সেবন ত্যাগ করার পর সফল হতে পারে।
|