কঙ্গো প্রজাতন্ত্র আফ্রিকার মধ্য-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। তা দক্ষিণ-পূর্বে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও অ্যাংগোলার সঙ্গেঁ সংলগ্ন, উত্তরে মধ্য-আফ্রিকা ও ক্যামেরুন, পশ্চিমে গ্যাবোনের সঙ্গেঁ সংলগ্ন, দক্ষিণ-পশ্চিমে অতলান্তিক মহাসাগর। তার তটরেখার দৈর্ঘ্যএক'শ পঞ্চাশেরওবেশী কিলোমিটার। কাঙ্গোর আয়তন ৩ লক্ষ ৪২ হাজার বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা হচ্ছে ৩৮.৬ লাখ। রাজধানী হচ্ছে ব্রাজাভিল।
কঙ্গোএকটি বহুজাতিক দেশ। সারা দেশে মোট ৫৬টি বড় বা ছোট জাতি রয়েছে। বৃহত্তম জাতি হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের কঙ্গো জাতি। তা লোকসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ। দেশের অধিকাংশ অধিবাসী প্রাচীন ধর্মে বিশ্বাসী এবং ২৬ শতাংশ ক্যাথলিক ধর্ম বিশ্বাসী।
কঙ্গোর মানুষ গান গাইতে পছন্দ করেন তবে তারা নৃত্যে সুনিপুণ। কঙ্গো শহর বা গ্রামে যে কোনো সময় রাস্তাঘাটে, গাছের ছায়ায় লোকজনের গান গাওয়ার ও নাচের আনন্দদায়ক দৃশ্য দেখা যায়। বংশপরমপরায় কঙ্গো নাচ ও গান করতে পছন্দ করেন বলে তাদের মধ্যে হাসি-খুশী ও উদার জাতীয় গুণ দেখা যায়। কঙ্গোর নারীরা তাদের চুলে অসংখ্য বেণী বানান এবং চুলে কেশ সজ্জার উপকরণে সাজান।
কঙ্গোর প্রাকৃতিক সম্পদ খুব বৈচিত্র্যময় এবং তেলসহ বহু ধরণের খনিজ সম্পদ আছে। এদের মধ্যে তেল ও বনা হচ্ছে কঙ্গোর অর্থনীতির দু'টি স্তম্ভ। বিশ শতাব্দীর আশি'র দশকে ব্যাপকভাবে তেল কাজে লাগানো হয় বলে অর্থনীতি দ্রুতভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। দেশের জি.ডি.পি ১৯৮৪ সালে ৯৫৮.৫ বিলিয়ন আফ্রিকান ফ্রাঙ্কপৌঁছেছিল। মাথাপিছু আয় প্রায় এক হাজার দু'শ মার্কিন ডলার। তা আফ্রিকার মাঝারি উপার্জনক্ষম দেশে পরিণত করেছে। ১৯৮৫ সালের পর কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাচ্ছিল, দেশের রাজনীতি অস্থিতিশীল হচ্ছিল, আফ্রিকান ফ্রাঙ্কের মূল্য হ্রাস পাচ্ছিল এবং ভারী ঋণ, কাঙ্গোর অর্থনীতিকে গেল বছরগুলোয় অবণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল এবং দেশটি গুরুতর সংকটাবস্থায় পড়েছিলো। আন্তর্জাতিক ব্যাংক কঙ্গোকে ভারী ঋণ জর্জারিত দরিদ্র দেশ হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার অর্থনীতির শৃঙ্খলা পুনর্গঠন করে এবং আন্তর্জাতিক তেলের দাম বিপুলমাত্রায় বেড়ে যায় বলে কঙ্গোর অর্থনীতির সূচক আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কঙ্গো হচ্ছে সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত উচ্চ শিক্ষার মানসম্পন্ন একটি দেশ। ১৯৯৫ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর প্রকাশিত নতুন শিক্ষা আইনের নিয়ম অনুযায়ী, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৯৯ সালে কঙ্গোয় শিশুদের স্কুলেযোগদানের হার হচ্ছে ৭৩ শতাংশ। ২০০০ সালে বয়স্কদের নিরক্ষরতা দূরীকরণের হার হচ্ছে ৮০.৭ শতাংশ। কঙ্গো বহুবার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিরক্ষরতা দূরীকরণ পুরস্কার পেয়েছে।
চীন এবং কঙ্গোর মধ্যে ১৯৬৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্পর্ক স্থাপনের পর রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে দু'দেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের উন্নয়ন খুব সুষ্ঠু। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও কঙ্গোর বাণিজ্য বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বিজ্ঞাপ্তি থেকে জানা গেছে, ২০০৫ সালে চীন ও কঙ্গোর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মূল্য ২৪২ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। অনুরূপ সময়ের তুলনায় এটা ৪৫.৮ শতাংশেও বেশী।
|