২০০৪ সালে পূর্ব চীনের চিয়াং সি প্রদেশের কান চৌ শহরের উপকন্ঠে নতুন গ্রামাঞ্চলের নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং এখন তা স্থিরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে । কানচৌর গ্রামাঞ্চলের ক্যাডার আর জনসাধারণ মন্তব্য করেন যে , তাদের নতুন গ্রামাঞ্চলের নির্মাণকাজ বাস্তবতার দিক থেকে চলছে ।
কান চৌর চিন থাং গ্রামের দক্ষিণে পরপর সাত আটটি কৃষক পরিবারের বাস । তাদের বাসার সামনে সমাধিস্থলের বদলে সিমেন্ট দিয়ে ফসল শুকানোর একটি মাঠ নির্মিত হয়েছে । ক্যাডার আর গ্রামবাসীরা বলেন , নতুন গ্রামাঞ্চল নির্মাণ করতে হলে পুরানো রীতি-নীতিও পরিবর্তন করা দরকার । সুতরাং সমাধিস্থল স্থানান্তরিত হয়েছে ।
সংবাদদাতা সিমেন্ট সড়ক বেয়ে চিন থাং গ্রামে প্রবেশ করলেন । বাড়িতে বাড়িতে নিজস্ব পথ গ্রামের সড়কের সংগে সংযুক্ত । বনে বাস্কেটবল খেলার মাঠ আর অন্য রকম খেলাধূলার ব্যবস্থা আছে । গ্রামবাসীদের কৃষি যন্ত্র ধোয়া আর গরু পোষার জন্য ব্যবহার্য পুকুরের পানি স্বচ্ছ , ঝকঝকে । বাসার সামনে আর পেছনের প্রাঙ্গন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন । গ্রামবাসীদের বাড়িঘর স্থানীয় বৈশিষ্ট্য অনুসারে সাদা ইট আর কালো টালি দিয়ে নির্মাণ করা হয় । গ্রামের বাইরের দিক ফল গাছ আর ধানের ক্ষেতে ভরপুর ।
সংবাদদাতা কান চৌর সাত আটটি গ্রামে ঘুরে ঘুরে দেখেছেন । ওখানকার গ্রামের পরিবেশ সংস্কারের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্থানীয় ভৌগোলিক অনুযায়ী এই অঞ্চলের স্থাপত্যের ঐতিহ্য বজায় রাখার ভিত্তিতে গ্রামাঞ্চলের সংস্কারের কাজ চালানো । এ পর্যন্ত কানচৌর ৪ হাজারের বেশি গ্রামের মধ্যে ২ হাজারের বেশি গ্রামে সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে । শহরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ গ্রামীণ বাড়িঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার পরিসেবা জোরদার করেছে । তাদের কাছে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন স্থাপত্য বিষয়ক নানা রকম ডিজাইনের নক্সা বিনা খরচে বিলি করা হয়েছে । এতে কৃষকদের বাড়িঘর নির্মাণের উত্কৃষ্টতা অনেক বেড়েছে ।
কান জেলার চিয়ান থিয়ান গ্রামের গ্রামবাসী তাই হুয়া চুয়ান সংবাদদাতেকে তার বাসার নতুন নির্মিত বাথরুম দেখিয়ে দিলেন । তিনি বলেন , আগে গ্রামাঞ্চলে যে পুরানো বাথরুম ব্যবহার করা হতো , তার সাংঘাতিক দুর্গন্ধ ছিল । এখন তার বদলে আধুনিক নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে পরিষ্কার নতুন বাথরুম নির্মিত হয়েছে ।
কান চৌ শহরে জঞ্জাল ও পথের অন্তরায় সরিয়ে নেয়া , পথের সংস্কার করা , বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা আর পুরানো বাথরুমের পুনর্গঠন করার একটি অভিযান চালানো হয়েছে । বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য পাইপ আর পাম্পের সাহায্যে কৃষকদের কাছে জলপ্রপাতের পানি পাঠানো হয় । এখন এই ব্যবস্থা কৃষকদের কলের পানিতে পরিণত হয়েছে । গ্রামাঞ্চলে গবাদি পশু যে মলত্যাগ করে , তাকে সারে পরিণত করে পরিবেশ দূষণমুক্ত করা হয় ।
মিথেন গ্যাস ব্যবহৃত হবার পর গ্রামবাসীদের বাথরুমে শাওয়ার বসানো হয় । প্রতিদিন সন্ধ্যায় কৃষি কাজ শেষে কৃষকরা গরম পানি ব্যবহার করে গোসল করতে পারেন । আগে চাকরি করার জন্য যারা বাইরে গেছেন , তারা গ্রামে ফিরে গ্রামীণ জীবনধারায় অভ্যস্ত হতেন না । এখন গ্রামে সড়ক চালু হয়েছে , এতে মাল পরিবহনের জন্য সুবিধা হয়েছে । বাইরে চাকরি করে এমন গ্রামবাসীদের মধ্যে অনেকে গ্রামে ফিরেছেন । তারা গ্রামেও নতুন চাকরি ও ব্যবসা অন্বেষণ করতে পারেন ।
পুরানো রীতি-নীতির বদলে গ্রামবাসীদের জীবনধারা অনেক রূপান্তরিত হয়েছে । আগের বেশ কিছু লৌকিক আচার দূর হয়ে গেছে ।
সমাজ আধুনিক হয়েছে , কৃষকদের ধ্যাণধ্যারণাও নতুন হয়ে উঠেছে । চিয়ান থিয়ান গ্রামের কৃষক তেই হুয়া সেন কৃষি কাজ করেন আর গবাদি পশু পালন করেন । তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ সম্পর্কিত নতুন নতুন জ্ঞান লাভ করেছেন । তাদের গ্রামে মোট ১২২টি কৃষক পরিবার আছে । এদের মধ্যে ২২টি পরিবারে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে ।
আন ইউয়ান চীনের এমন একটি আদর্শ জেলা , যেখানে দূষণমুক্ত কমলালেবু উত্পন্ন করা হয় । জেলার পার্টি-কমিটির সম্পাদক ওয়াং ইয়াং চিনের পথনির্দেশনায় সংবাদদাতা সান ছুয়ান থাই পর্বতের শৃঙ্গে উঠলেন । উপর থেকে নীচে তাকালে বিস্তীর্ণ একটি কমলালেবু বাগান চোখে পড়ল । তিনি বলেন , এটা সমগ্র জেলার সর্বশ্রেষ্ঠ ফল বাগান । তার রফতানি পরিমাণ জেলার মোট রফতানি পরিমাণের অর্ধেকেরও বেশি । এই ফল বাগান ৫টি গ্রামে বিস্তৃত । ৪৮৩ কৃষক পরিবার এই বাগানে কাজ করে । গ্রামবাসী হো তে লুং পরিবারের কমলালেবু বাগানের আয়তন ১৭ একরে দাঁড়িয়েছে । গত বছর তার পরিবার সাড়ে তিন লক্ষ ইউয়ান আয় করেছে ।
কান চৌ বিশ্বের এমন অন্যতম অঞ্চল , যেখানে কমলালেবু রোপণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী । কমলালেবু রোপণের জন্য উপযোগী এই অঞ্চল আবিষ্কৃত হবার পর স্থানীয় সরকার এই অসাধারণ প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে কমলালেবু রোপণ সম্প্রসারিত করেছে , যাতে স্থানীয় অধিবাসীদের স্বচ্ছল করে তোলা যায় । এ পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় কমলালেবু রোপণকারী জমি ১.৭ লক্ষ একর হয়েছে । এই শিল্পের উত্পাদন মূল্য ১০ বিলিয়ন ইউয়ানে দাঁড়াবে ।
ছও থো থানার কান চি ইউয়ান নামে একটি ফল কোম্পানি ফলমূল বিক্রির জন্য দক্ষিণ চীনের সেন চেন শহরে একটি শাখা গড়ে তুলেছে । গত বছর কোম্পানির এই শাখা থেকে ১৫ লক্ষ কিলোগ্রাম ফলমূল বিক্রি করা হয়েছে । এই কোম্পানির অধীনস্থ প্রতিটি কৃষক পরিবারের বার্ষিক আয় ৩০ হাজার ইউয়ানেরও বেশি হয়েছে ।
কৃষির শিল্পায়নের চাহিদা মেটানোর জন্য আন ইউয়ান জেলায় ১৭৮টি কৃষি সমবায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । কৃষির শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের আয়ও ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেয়েছে ।
কান চৌ দক্ষিণ চীনের হাকাস্ উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল । এই অঞ্চলের অর্থনীতি এখনো অনুন্নত । ৮টি জেলা দারিদ্র্যমুক্ত হয় নি । দারিদ্র্য বিমোচনে তাদের সাহায্য করার জন্য স্থানীয় সরকার তাদের কাছে বেশ কয়েকটি অগ্রাধিকার দিয়েছে । অর্থ সংগ্রহের জন্য সমাজের বিভিন্ন মহলও অনুদান দিয়েছে । দারিদ্র্য বিমোচনে এ সব অর্থ বরাদ্দ আর অনুদান যথাযথ ফলপ্রসূ হয়েছে ।
গ্রামে নির্মাণকাজ চালাবার জন্য যাবতীয় গ্রামবাসীর সম্মেলন আয়োজন করা দরকার । এই কাজের ব্যবস্থাপনার জন্য সবচেয়ে প্রভাবশালী এমন গ্রামবাসীদের নিয়ে একটি নেতৃস্থানীয় গ্রুপ গঠিত হয়েছে । তাদের পরিচালনায় অর্থ সংগ্রহ করা হয় আর এই ক্ষেত্রের কাজের তত্ত্বাবধান করা হয় । নতুন গ্রামাঞ্চল নির্মাণের ক্ষেত্রে গ্রামাবাসীদের এই গ্রুপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
কান চৌ শহরের এই সব ব্যবস্থা অর্থনীতির বিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ । তা ব্যাপক কৃষকের সমাদর পেয়েছে ।
|