v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-07-27 14:55:25    
রত্ন ভবন

cri
    পেইচিংএর রাজকীয় প্রাসাদ হচ্ছে চীনের সবর্শেষ দু'টো রাজবংশ ছিং আর মিং রাজবংশের প্রাসাদ। এখানে আছে সুমহা পুরাতন স্থাপত্যের সংগ্রহশালা আরও আছে লক্ষ লক্ষ মূল্যবান পূরার্কীতি। এটা একটি বিরাটাকারের প্রাচ্য সংস্কৃতির ভান্ডার।

    রত্ন ভবন রাজকীয় প্রসাদের পূর্বাংশে অবস্থিত।তিন শতাধিক বছর আগে ছিং রাজবংশের রাজা ছিয়েনলন তাঁর নিজের জন্যে এই স্থাপত্য সংগ্রহশালা নির্মাণ করেন। এই ভবনকে ছ'টি প্রদর্শনী কক্ষে বিভক্ত করা হয়। গোটা ভবনের আয়তন ২২০০ বগর্মিটার। এখানে মোট ৩১১টি পুরার্কীতি দেখানো হয় । সে সব পুরাকীর্তি রাজকীয় প্রাসাদের পুরার্কীতির মধ্যে বাছাই করা হয়। রাজকীয় প্রাসাদের প্রাচীনকালের পুরার্কীতি বিভাগের পরিচালক মাদাম জেন রং ব্যাখ্যা করে বললেন, এখানে যে সব রত্ন দেখানো হয়েছে সে সব দুষ্প্রাপ্য জিনিস। এ সব জিনিস মূল্যাতীত । এ সব জিনিস রাজার নির্দেশ অনুযায়ী রাজকীয় কারখানায় তৈরী করা হয় । দেশের বিভিন্ন জায়গার বিখ্যাত মিস্ত্রিরা নকশা কাজে অংশ নেন। এ সব রত্নের মধ্যে কিছু কিছু রাজাকে স্থানীয় কর্মকর্তাদের দেওয়া উপহার। এ সব সোনা, রৌপ্য, জেইড , মুক্তা এবং হীরা দিয়ে তৈরী সুক্ষ্ম শিল্পকলা তত্কালের শিল্পকলার সর্বোচ্চ মানের প্রতিনিধিত্ব করে।

    এ সব রত্নের মধ্যে বেশীর ভাগ প্রাসাদের দৈন্যন্দিন ব্যবহৃত জিনিস। এতে রাজকীয় পরিবারে জীবনযাত্রার মযার্দা আর সুক্ষ্মতপ্রতিফলিত হয়। এ সব দৈন্যন্দিন জিনিসের মধ্যে সাদা জেইডের কাপ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । এই কাপ নিখুঁত সাদা জেইডে খোদাই করা হয়। এই কাপ দেখতে পুরোপুরি ফোটানো একটি সাদা লিলির মতো। এই রত্ন ভবনে এ ধরনের জেইডের তৈরী পাত্র আরও অনেক আছে। মাদাম জেন বলেছেন, এ সব জেইড চীনের সবচেয়ে বেশী জেইড উত্পাদন স্থান---শিনচিয়াংয়ের হোজেন থেকে আনা হয়। জেইডের মধ্যে এই সাদা জুটের গুণ সবচেয়ে ভাল। তিনি বলেছেন, এই ধরনের জেইডের গুণ সবচেয়ে ভাল। তা পানি থেকে সংগ্রহ হয়। সুতরাং মনে হয় এ ধরনের জেইডে এক পোঁচ তেল মাখা হয়েছে।। জানা গেছে এ সব জিনিস অতি মূল্যবান।

    এই রত্ন ভবনে যে সব রাজকীয় পরিবারের জিনিসপত্র দেখানো হয় সে সব জিনিসপত্র নকশায় অত্যন্ত সুক্ষ্ম। এ সব জিনিসের মধ্যে একটি অকীকের তৈরী কাপ দর্শকদের আকর্ষণকরে। কাপের আকার স্ববৈশিস্ট্যসম্পন্ন। কাপের হাতল হল খোদাই-করা একটি অদ্ভুত বুনো প্রাণী। তার সামনের দু'টো পা কাপের পাশে আর মুখ কাপের দিকে রেখে মনে হয় এই প্রাণী কাপের ভিতরের জিনিস চুপি চুপি খেতে চায়। এই ছোট অদ্ভুত বুনো প্রাণীর নকশা অত্যন্ত প্রাণময়।

    দীর্ঘ সময় পার হয়েছে বলে, এই রত্ন ভবনের বেশীর ভাগ পূরাকীর্তির উত্স পরীক্ষানিরীক্ষায় মেলে না। কিন্তু কিছু কিছু রত্নের তথ্য সংশ্লিষ্ট ফাইলে পাওয়া যায়।

    প্রাসাদে নারীরা চিরকাল রহস্যময়। রত্ন ভবনে যে সব জিনিসপত্র দেখানো হয়েছে সে সব জিনিসপত্র অতীতে প্রাসাদের নারীদের ভালবাসা সম্বন্ধে জোরালোতথ্য যুগিয়ে দিয়েছে। এই ভবনে অজস্র নারী আর উপপত্নীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংরক্ষিত রয়েছে। এমন কি উপপত্নিদেরকে রাজার দেয়া বিয়ের অনুমোদন-পত্রও এই রত্ন ভবনে দেখা যায়। এই বিয়ের অনুমোদন পত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় ম্যান আর হান দু'টো ভাষায় রাজার রারী হিসেবে অনুসৃত নানা ধরনের বিধিনিয়ম লেখা আছে। এ সব সংরক্ষিত জিনিসপত্রের মধ্যে রানী আর উপপত্নিদের অলঙ্কারও রয়েছে। এ সব অলঙ্কারের মধ্যে একটি মণি আর মুক্তা প্রাসাদে সবচেয়ে বড়। একটি আঙটি দশাধিক কেলার ভারী। এখানে প্রত্যেকটি অলঙ্কার মযার্দার প্রতীক।

    রত্ন ভবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য আছে। এই স্থাপত্যের নাম লোসোডান অথার্ত লোসো ঘর। ছিং রাজবংশের নারী ছিশি এক সময় ওখানে বসবাস করতেন। এই ঘরে বিভিন্ন মূল্যবান চিত্র দিয়ে সাজানো হয়। এ কথা বলা যায় যে গোটা প্রাসাদে এটা হল সবচেয়ে আরামদায়ক জায়গা। বতর্মানে এই ঘরে প্রধানত দেখানো হয়েছে কয়েকটি বিরাটাকারের জিনিসপত্র। এই ঘরে একটি সবচেয়ে বড় পরিদর্শনী দ্রব্য হল ' ডাইয়ুর পানি সংস্কারের প্রকল্প' । এটা হল একটি ২ মিটার উচু এবং ৫ টন ভারী বিরাটাকারের জেইড। দু শতাধিক বছর আগে এই ভাষ্কর্য এখানে রাখা হয়। রত্ন ভবনের স্বেচ্ছাসেবক কর্মচারী সেন লি ছিও ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এই ভাষ্কর্যে যে পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তার উতপাদন স্থান চীনের উত্তর-পশ্চিম শিনচিয়াং মিলো পাহাড়। শিনচিয়াং থেকে পেইচিংএ আনার পর আবার চীনের দক্ষিণাংশের ইয়াংযৌ শহরে পাঠানো হয়। কারণ তত্কালে ইয়াংযৌ শহরের ভাষ্কর্যের শিল্পকলা আধুনিক। এই ভাষ্কর্য কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আবার পেইচিংএ পাঠানো হয়। এই প্রকল্প সম্পন্ন করতে দশ বছর লেগেছিল। এই প্রকল্পে যে শ্রম শক্তি আর অর্থ ব্যবহৃত হয়েছিল তা হিসাব করা কঠিন। তিনি বলেছেন, জানা গেছে, এই ভাষ্কর্য শিংচিয়াং থেকে আনার জন্যে প্রতি দেড় কিলোমিটার পর পর একটি কুয়া খনন করতে হবে। শীতকালে কুয়ার পানি দিয়ে মাটিতে বরফ তৈরী করা হত। এই বিরাটাকারের ভাষ্কর্য বরফের উপর একটু একটু করে সামনে নিয়ে যাওয়া হত। এই বিরাটাকারের পাথর শিংচিয়াং থেকে পেইচিংএ আনতে তিন বছরের সময় লাগে। আবার ইয়াংযৌতে ভাষ্কর্যের কাজে ছ' বছর ছিল।

    সকল পযর্টকএই বিরাটাকারের ভাষ্কর্য দেখে অবাক হয়ে যায়।একজন মার্কিনী পযর্টক মিস্টার ট্রাভিস বলেছেন, রত্ন ভবনে তিনি এই জেইডের ভাষ্কর্য সবচেয়ে পছন্দ করেন। তিনি বলেছেন,এই পুরাতন সুক্ষ্ম ভাষ্কর্য খুব দৃষ্টিনন্দন। আমি এটা পছন্দ করি। ভাষ্কর্যের কাজ অত্যন্ত সুক্ষ্ম এবং নকশা অত্যন্ত ভাল।