v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-07-25 17:26:42    
কো তে কাং ও তার রসাত্মক সংলাপ

cri
    রসাত্মক সংলাপ চীনের জনসাধারণের প্রিয়এক ঐতিহ্যিক শিল্পরূপ । কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই জনপ্রিয় শিল্পরূপের প্রসার মন্থর । চীনের কিছু লোক রসাত্মক সংলাপকে বাচাঁনোর আহ্বানও জানিয়েছেন । কিন্তু এ বছরের প্রথম দিকে চীনের সাংস্কৃতিক অঙ্গঁনে একটি কালো ঘোড়ার আবির্ভাব ঘটেছে । কো তে কাং নামক একজন লোকশিল্পীর পরিবেশন করা রসাত্মক সংলাপ চীনের রাজধানী পেইচিং ও থিয়েনচিংয়ের দশর্কদের আন্তরিক সমাদর পেয়েছে । কো তে কাংয়ের অনুষ্ঠানের টিকিট পাওয়া খুব কঠিন , তার পরিবেশন করা রসাত্মক সংলাপ শুনে দশর্করা দীর্ঘসময় হাততালি দিয়ে তাকে আরো কিছু বলার অনুরোধ করেন । এক দিন দশর্কদের অনুরোধে আরো বেশী শোনানোর জন্য তাকে বিশবার মঞ্চে উঠতে হয় । কো তে কাং রসাত্মক সংলাপের এক নতুন তারকা হয়েছেন । কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবেশিত রসাত্মক সংলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনাও দেখা দিয়েছে ।

    কো তে কাং তার পরিবেশিত ' জুয়া খেলা ' নামে একটি রসাত্মক সংলাপে জুয়াড়ীদের অস্থিরভাব জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন । খেলায় জিতে পয়সা পাওয়ার সময় জুয়াড়ীর আনন্দে আটখানা ভাব আর হেরে যাওয়ার সময় হতোদ্যম ভাব প্রকাশের রসাত্মক কথা শুনে চা খানায় দর্শকরা বার বার হাততালি দেন , তাদের হর্ষধ্বনি দীর্ঘ সময় ধরে চলে।

    এ বছর কো তে কাংয়ের বয়স ৩৩ বছর , তিনি খুব লম্বা নন , কিন্তু একটু মোটা । মঞ্চ অনুষ্ঠান পরিবেশনের সময় তিনি প্রায়ই চীনের ঐতিহ্যিক পোশাক --ধুসর রঙয়ের লম্বা গাউন পরেন , তাকে দেখে লোকশিল্পীর সহজসরল ভাব বোঝা যায় । কো তে কাং উত্তর চীনের থিয়েন চিং শহরে জন্মগ্রহণ করেন । ছোট বেলা থেকেই অপেরা ও রসাত্মক সংলাপ শুনতে পছন্দ করতেন । তিনি আট বছর বয়সে তিনি একজন প্রবীণ শিল্পীর কাছে রসাত্মক সংলাপ শিখতে শুরু করেন । তার পর তিনি থিয়েনচিংয়ের বেশ কয়েকটি অপেরা দলে পিকিং অপেরা , হোনান অপেরা ও পিং জু অপেরা শিখেছেন এবং ধীরে ধীরে নিজের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শৈলী সৃষ্টি করেছেন ।

    গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় কো তে কাং রসাত্মক সংলাপের উত্পত্তিস্থল--পেইচিংয়ে আসেন । কিন্তু সেই সময় রসাত্মক সংলাপের প্রসার অচলাবস্থায় ছিল । থিয়েটারের রসাত্মক সংলাপের অনুষ্ঠানে দশর্কের সংখ্যা কম , টি ভি অনুষ্ঠানেও রসাত্মক সংলাপের অনুষ্ঠান কম । জীবিকার জন্য কো তে কাং কুলির কাজ করেছেন এবং ব্যবসা করেছেন । পেইচিংয়ে তার জীবন কষ্টকর হয়ে ওঠে , কিন্তু তিনি কখনও রসাত্মক সংলাপ পরিবেশনের স্বপ্ন ভুলেন নি।

    ১৯৯৬ সালে কো তে কাং ' তে ইউন সে ' নামে এক রসাত্মক সংলাপ গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন । এই গোষ্ঠীর সদস্যরা ৮০ থেকে এক শ' আসনের চা খানায় রসাত্মক সংলাপ পরিবেশন করেন । তখনকার অবস্থা সম্বন্ধে কো তে কাং বলেছেন , এখন আমার রসাত্মক সংলাপের অনুরাগীর সংখ্যা বেশী , অনেকে থিয়েটারের আসনের পাশে দাড়িঁয়ে দাড়িঁয়ে আমার সংলাপ শুনেন , থিয়েটারের বাইরে অনেকে অপেক্ষা করেন । কিন্তু তে ইউন সে প্রতিষ্ঠার সময় দশর্কের সংখ্যা খুব কম ছিল । একবার আমি মঞ্চে উঠে দেখেছি নীচে মাত্র একজন দশর্ক বসে আছেন । আমি মঞ্চে দাড়িয়ে তাকে বলেছি , আপনি মন দিয়ে আমার রসাত্মক সংলাপ শুনুন , বাথরুমে যেতে চাইলে আমাকে বলবেন । এখন এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে মজা পেয়ে হো হো করে হাসেন । কিন্তু সেই দিন আমার মন খুব কষ্ট ছিল ।

    দশ বছর পর অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে । কো তে কাং এখন জনপ্রিয় রসাত্মক সংলাপশিল্পী হয়েছেন । পেইচিং ও থিয়েনচিংয়ে কো তে কাংয়ের রসাত্মক কথা শোনার হিড়িক পড়েছে । চীনের শতাধিক তথ্যমাধ্যম কো তে কাংয়ের সাক্ষাত্কার নিয়েছে । তার অনুষ্ঠান দেখার জন্য নাগরিকরা ভোরবেলায় থিয়েটারের টিকিট রুমে যান । অনুষ্ঠানের আগে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশরা আসে । কোনো কোনো অনুরাগী কো তে কাংয়ের অনুষ্ঠান দেখার জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিশেষভাবে থিয়েনচিং থেকে আসেন ।

    চীনের তথ্য মাধ্যমগুলো কো তে কাংয়ের রসাত্মক সংলাপ জনপ্রিয় হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করেছে । তারা মনে করে , প্রথমে কো তে কাং ছোট বেলা থেকেই রসাত্মক সংলাপ পছন্দ করেন বলে রসাত্মক সংলাপ পরিবেশনের দক্ষতা ভালোভাবে আয়ত্ত করেছেন। রসাত্মককথা বলার সময় তিনি নানান ধরনের গান বা অপেরা গাইতে পারেন । তিনি শুধু ঐতিহ্যিক রসাত্মক সংলাপ বলেন না , বাস্তব জীবনের হাস্যকর বিষয় নিজের সংলাপে মিশিয়ে রসাত্মক সংলাপে প্রাণশক্তি যুগিয়েছেন । এই ধরনের রসাত্মক সংলাপ শুধু বয়োবৃদ্ধ দশর্করা শুনতে পছন্দ করেন না, অল্পবয়সী দশর্করা আনন্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষণীয় মনে করেন । দ্বিতীয় , কো তে কাংয়ের রসাত্মকসংলাপে সাহসের সঙ্গে সমাজের অশুভ প্রবণতা ও অসদ্ব্যাবহারের সমালোচনা করেছেন । ব্যঙ্গ কৌতুক হলো রসাত্মক সংলাপের প্রাণশক্তি। ব্যাপক দশর্ক এই ধরনের সমালোচনা পছন্দ করেন । কো তে কাং তার রচিত একটি রসাত্মক সংলাপে ২০০৫ সালে চীনের শিল্পী মহলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সমালোচনা করেছেন , শিল্পীদের মধ্যে যেমন চলচ্চিত্র তারকা , তেমনি বিখ্যাত পরিচালক ছিল । এটা কো তে কাংয়ের অনুষ্ঠান যুব সম্প্রদায়ের সমাদর পাওয়ার একটি প্রধান কারণ । তা ছাড়া , কো তে কাং থিয়েটারে রসাত্মককথাবার্তা বলতে পছন্দ করেন । তিনি ছোট আকারের থিয়েটারে রসাত্মক সংলাপের অনুষ্ঠান আয়োজন করেন , দশর্কের সংখ্যা পাঁচ শ'র বেশী হবে না । অনুষ্ঠানে মঞ্চের শিল্পী ও নীচের দশর্কদের মধ্যে আদান-প্রদান বেশী ।

    রসাত্মক সংলাপ সম্পর্কে কো তে কাং বলেছেন , এই ধরনের সংলাপের উদ্দেশ্যই মনকে তৃপ্ত করা । বিকেল সাড়ে চারটার সময় দশর্করা আনন্দ পাওয়ার জন্য এসেছেন , শিক্ষা পাওয়ার জন্য নয় । একজন রসাত্মক সংলাপ শিল্পী হিসেবে আমি এটা ভালো করে জানি ।

    পত্রপত্রিকায় কো তে কাংয়ের মূল্যায়নে প্রশংসা ও সমালোচনা দুটোই আছে । চীনের শিল্পকলা গবেষনাগারের বিশেষজ্ঞ উ ওয়েন কো মনে করেন , কো তে কাং সম্বন্ধে আমাদের উদার মনোভাব পোষণ করা উচিত । কো তে কাংয়ের আবির্ভাব চীনের সাংস্কৃতিক অঙ্গঁনে স্বাধীন পরিবেশের পরিচায়ক ।