(লি রুইছুন) ছোটো বোনের কিডনী পরিবর্তন করা দরকার আর তার বোড় বোন নিজের কিডনী ছোটো বোনকে দিতে চায় । কিন্তু মা বড় মেয়েকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। কেন?মার মনে এক বিরাট গোপন কথা আছে । কিন্তু তিনি জানেন না যে,তার গোপন কথা অনেক আগেই ফাঁস হয়ে গেছে । তার তিনটি মেয়ের মনে যে গোপন কথা আছে তা সত্যিকারের গোপন বিষয় ।
২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের লিউচৌ শহরের লি রুইছুনের মেজো মেয়ে ১৮ বছর বয়সী ইয়াং থিং ইউরেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আছে,তার কিডনী পরিবর্তন করা দরকার । কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এমন কিডনী এখনো পায়নি বলে তিনি খুব চিন্তিত। ঠিক এই সময়ে ডাক্তার ছিয়াও এক প্রস্তাব করেন । প্রস্তাবটিতে লি রুইছুন আরও বেশি অস্থির হন ।
ডাক্তার ছিয়াও বলেন, ইয়াং থিংয়ের বড় বোনের বয়স ২০ বছর,যদি তার আপত্তি না থাকে এবং রক্ত-গ্রুপও ইয়াং থিংয়ের সঙ্গে খাপখায়,তাহলে তার কিডনী ইয়াং থিংকে দিতে পারে । ডাক্তার ছিয়াওয়ের উল্লেখিত ইয়াং থিংয়ের বড় বোন হলো লি রুইছুনের বড় মেয়ে ইয়াং চিং যিনি নাননিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন । স্বজনের কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট করা হলে সহজে সুস্থ হতে পারে । তাই ইয়াং চিং ইয়াং থিংকে তার একটি কিডনী দান করবে বলে ডাক্তার ছিয়াও আশা করেন । কিন্তু মা লি রুইছুন তীব্রভাবে প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেন । তাঁর ভয় এই যে, বড় মেয়ে হাসপাতালে আসলে শুধু মেজো মেয়েকে বাঁচাতে পারবে না তা নয়,তার পরিবারে সম্ভবত বিরাট আলোড়ন সৃষ্টিও হতে পারে ।বড়মেয়ের হাসপাতাল আসায় কেন লি রুইছুনের ভয় ? তার মনে কি ধরণের গোপন বিষয় আছে?
(ইয়াং চিং)
লি রুইছুনের পরিবার পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এক সুখী পরিবার । লি রুইছুন ও তার স্বামী ইয়াং ছেনছিংয়ের তিনটি ছেলেমেয়ে আছে ।বড় মেয়ে ইয়াং চিং,মেজো মেয়ে ইয়াং থিং এবং ছেলে ইয়াং ছেন । স্বামী ইয়াং ছেনছিং গোটা সংসার চালান । ধনী না হলেও তারা সুখী এবং আনন্দিত ।মেজো মেয়ে ইয়াং থিংয়ের রোগ পরিবারের সুখ-আনন্দ কেড়ে নিয়েছে ।
রক্ত পরীক্ষা থেকে জানা যায় ,স্বামী-স্ত্রী দুজন এবং ছেলে ইয়াং ছেনের রক্ত ইয়াং থিংয়ের সঙ্গে খাপখায় না । তাই ডাক্তার ছিয়াও প্রস্তাব করেন যে, উপযুক্ত কিডনী পাওয়ার আগে ইয়াং চিং তাদের এক মাত্র আশা ।
ইয়াং চিং হাসপাতালে এসে রক্তপরীক্ষা করবে কথাটা জেনে লি রুইছুন অস্থির হন । ইয়াং চিংকে হাসপাতালে আসতে বাধা দেয়ার জন্যে তিনি টেলিফোনে ইয়াং চিংকে বলেন, তুমি এসো না । আমরা তিনজনের মধ্যে কারও রক্ত তার সঙ্গে খাপখায় না । তুমি আসলে কোনো লাভ নেই । কিন্তু ইয়াং চিং হাসপাতালে আসার সিদ্ধান্ত নিল । লি রুইছুনের ভয় কি ? তার মনের গোপন বিষয়টি কি?
বিশ বছর আগের এক গভীর রাত,কোনো কৌশলগত কারণে লি রুইছুন হাসপাতালে তার প্রথম বাচ্চা হারান । বাচ্চার মৃত্যুতে দুঃখ-দুর্দশায় নিমজিত ইয়াং রুইছিন হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরার পথে এক কাগজের বাক্স পেলেন ।বাক্স থেকে এক নবজাতক শিশুর আওয়াজ শোনা গেলো । লি রুইছুন বাচ্চাটিকে বাসায় নিয়ে আসেন এবং নাম দিয়েছেন ইয়াং চিং । ইয়াং চিং দিন দিন বড় হয়ে উঠে । পরে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মেজো মেয়ে ইয়াং থিং ও ছেলে ইয়াং ছেনের জন্ম হয় । সন্তানদের আনন্দে ও সুষ্ঠুভাবে নিজেদের পাশে ঘিরে বড় হয়ে ওঠা দেখে স্বামী-স্ত্রী দুজন ইয়াং চিং যে নিজের আপন মেয়ে নয় এগোপনীয়তা চিরকালই প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।
ইয়াং চিং বোনের কাছে শুনেছে, বাবার রক্ত এ-গ্রুপের আর মা,ইয়াং থিং ও ইয়াং ছেনের রক্ত ও-গ্রুপের । ইয়াং চিং ভাবে তার রক্তও ও-গ্রুপের হবে। কিন্তু সে স্পষ্টভাবে জানে ,তার রক্ত বোনের রক্তের সঙ্গে পুরোপুরি খাপখাওয়ার সম্ভাবনা অতি সামান্য । কারণ চার বছর আগেই সে মায়ের সেই গোপন কথা জেনেছে ।
(ইয়াং থিং)
চার বছর আগে ইয়াং চিং নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রী ছিল,এক দিন সে ভাইবোনের সঙ্গে খেলছিল । তারা আকস্মিকভাবে মায়ের সংরক্ষিত দুটো লাল রঙয়ের কাপড়ের চাদর এবং একটি খাতা দেখেছে । খাতার ভেতরে কয়েকটি কাগজ ছিল । কাগজগুলোতে তিন ভাইবোনের নাম লেখাছিল । কিন্তু তার নামের পিছনে "দত্তক"শব্দটি ছিল ।সে অবাক হল এবং মনেমনে ভাবল,পরে যদি মা আমাকে আর চাইবেন না , আমি কি করব? কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার এই ধারনা পাল্টে ফেলে । ছোটো বেলা থেকে এ পর্যন্ত বাবামা তাকে যে যত্ন দেন এবং যে ভালবাসা দেন , তা সবই তার চোখের সামনে ভেসে আসে । যদি এখন বাবামাকে নিজের পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি , তাহলে বাবামার মনে কালো ছায়া পড়বে । ইয়াং চিং চিরকালই গোপন বিষয়টি মনে মনে রাখার সিদ্ধান্ত নিল । কেউ ভাবতে পারেনি যে, বোন ইয়াং থিং ও ভাই ইয়াং ছেনও সঙ্গে সঙ্গে গোপন বিষয়টা রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল ।
পরিবারের অখন্ডতা রক্ষার জন্যে তিনটি দশ-বারো বছর বয়সী ছেলেমেয়ে গোপন বিষয়টি রক্ষার পথ বেছে নেয় । সে দিন থেকে এই দরিদ্র পরিবারের ভাই-বোনেরা আগের চাইতে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ।
পরিবারের প্রত্যেক সদস্য অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে একই গোপন কথা নিজ নিজ মনে সংরক্ষন করেছে । মেজো মেয়ে ইয়াং থিংয়ের ইউরেমিয়া হওয়া এই শান্ত পরিবারে আবার আলোড়ন জাগিয়ে তুলেছে ।
দুঃখের বিষয়, পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী ইয়াং চিংয়ের রক্ত ইয়াং থিংয়ের ও-গ্রুপের রক্তের সঙ্গে খাপখায় না ।ফলাফল জেনে ইয়াং চিং ডাক্তারের কাছে নিজের কিডনী দিয়ে বোনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এমন কিডনী বিনিময় করার প্রস্তাব করেছে । নিয়ম লঙ্ঘন করেছে বলে হাসপাতাল তার এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেছে ।এই সময় মা লি রুইছুন ছেলেমেয়েদের সম্পূর্ণ গোপন কথাও বুঝেছেন । বাবামা নিজের আপন বাবামা নন , ভাইবোন নিজের আপন ভাইবোন নয় কথাটা জেনে বাবামা ও ভাইবনের প্রতি ইয়াং চিংয়ের ভালবাসা ও যত্ন বিন্দুমাত্র কমে যায়নি দেখে লি রুইছুন অত্যন্ত তৃপ্ত হন ।
এই বিশেষ পরিবারের কাহিনীতে অনেক লোক মুগ্ধ হন । হাসপাতাল তাদের জন্যে চিকিত্সার মোটা ঋণ মওকুফ করেছে এবং যততাড়াতাড়ি সম্ভব ইয়াং থিংয়ের জন্যে কিডনীর ব্যবস্থা করার কথা দিয়েছে । ইয়াং থিং কিডনী ট্রান্সপ্লান্টের অপেক্ষায় আছে । ইয়াং থিংয়ের কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট সফল হবে বলে তার পরিবারের সবাই আশায় ভরপুর ।
|