তান্জানিয়া যৌথ প্রজাতন্ত্র আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলে ও বিষুবরেখার দক্ষিন অবস্থিত। তার উত্তর দিক কেনিয়া ও উগান্ডার সঙ্গে সংলগ্ন। দক্ষিণ দিক জাম্বিয়া, মালাউই ও মোজাম্বিকের সঙ্গে সংলগ্ন। পশ্চিম দিক রোয়ান্ডা, বুরুনডি ও গণতান্ত্রিক কঙ্গোর সঙ্গে সংলগ্ন। পূর্ব দিকে ভারত মহাসাগর।
তান্জানিয়া তানগানয়িকা ( মূলভূভাগ) ও জানজিবার ( উপদ্বীপ) এই দুটি ভাগ নিয়ে গঠিত । ভূখন্ডসীমার আয়তন ৯০ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি বর্গকিলোমিটার ( এর মধ্যে জানজিবারের আয়তন ২৬৫৭ বর্গকিলোমিটার) । লোক সংখ্যা ৩.৬ কোটি ( এর মধ্যে জানজিবারী প্রায় ১০ লাখ )। সয়াহিলি ভাষা তাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা । ইংরেজী ও সয়াহিলি সরকারী ভাষা। তানগানয়িকার অধিবাসীরা ক্যাথলিক, খৃষ্ট ধর্ম ও ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। জানজিবারের অধিবাসীদের মধ্যে প্রায় সবাই ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস করেন।
তান্জানিয়া হচ্ছে আদিম মানবজাতির উত্স্যের অন্যতম। খৃষ্টপূর্ব সময়ে তান্জানিয়ার সঙ্গে আরব, পারস্য ও ভারত ইত্যাদি দেশের বাণিজ্যিক আদানপ্রদান ছিলো। খৃষ্ট্রীয় ৭--৮ শতাব্দীতে আরব ও পারস্যের অধিবাসীরা এখানে বসতি গড়েছে । খৃষ্ট্রীয় ১০ শতাব্দীর শেষ দিকে আরবী ও পারর্স্যীক ইসলামী দেশ স্থাপন করে। ১৮৮৬ সালে তানগানয়িকা জার্মানীর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ১৯১৭ সালে ব্রিটেনের সেনাবাহিনী তানগানিয়াকে দখল করে নেয়। ১৯২০ সালে তানগানিয়া ব্রিটেনের হুকুম দখল এলাকা হিসেবে পবিগনিত হয়। ১৯৪৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ তানগানয়িকাকে ব্রিটেনের " ট্রাষ্টি এস্টেটে " পরিবর্তন করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯৬১ সালের ১ মে তানগানয়িকার স্বশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, এর পর পরই ৯ ডিসেম্বর স্বাধীন ঘোষণা করে। একবছর পর, তানগানয়িকা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯০ সালে জানজিবার ব্রিটেনের সংরক্ষিত অঞ্চলে পরিণত হয়, এবং ১৯৬৩ সালের জুন মাসে স্বশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, একই বছরের ডিসেম্বর তারা স্বাধীনতা ঘোষণা করলে সুদান রাজার অধীনে শাসনতান্ত্রিক রাজতন্ত্র দেশ হয়। ১৯৬৪ সালের জানুয়ারি মাসে জানজিবারের জনগণ সুদান রাজার প্রশাসন উচ্ছেদ করে এবং জানজিবার জনগণের প্রজাতন্ত্র স্থাপন করে। ১৯৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল তানগানয়িকা ও জানজিবার মিলে গঠিত হয় যৌথ প্রজাতন্ত্র । একই বছরের ২৯ অক্টোবর দেশের নাম পরিবর্তন করে তান্জানিয়া যৌথ প্রজাতন্ত্র ব্যাখা হয়।
তান্জানিয়া একটি কৃষি প্রধান দেশ, তার প্রধান কৃষি পণ্য হচ্ছে ভুট্টা, গম, চাল , ভুট্টাজাতীয় খাদ্যশস্য ও বজরা ইত্যাদি। প্রধান আর্থিক পণ্য হচ্ছে কফি, তুলা, লিলাক, চা ও তামাক পাতা ইত্যাদি।
তান্জানিয়ার খনিজসম্পদ প্রচুর, আবিষ্কৃত খনিজসম্পদ যেমন: হীরক, সোনা, খনিজ, লোহা, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি। তান্জানিয়ার কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াকরণ ও হালকা শিল্পকারখানা আছে । এর মধ্যে রয়েছে বস্ত্র, প্রস্তুতকৃত খাদ্য , চামড়া, জুতা সহ চামড়া জাত পণ্য, সিমেন্ট, কাগজ, টায়ার ও কৃষিসার ইত্যাদি ।
তান্জানিয়ার পর্যটন সম্পদও প্রচুর। আফ্রিকার তিনটি হ্রদ যেমন ভিকটোরিয়া হ্রদ, তানগানয়িকা হ্রদ ও মালাউই হ্রদ সব তাদের সীমান্ত রেখায় থাকে। বিশ্বের বিখ্যাত পাহাড় ৫৮৯৫ মিটার সমুদ্রসমতল থেকে বলেই এটা হচ্ছে আফ্রিকায় পাহাড়ের সর্বোচ্চ উচ্চতা ।
১৯৬১ সালে তানগানয়িকার সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৩ সালে আবার জাজিবারের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। তানগানয়িকা ও জাজিবার যৌথ হবার পর , চীন তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যশই অব্যাহত থাকে। ১৯৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল যৌথ হবার দিবস তাদের কূটনৈতিক দিবস নির্ধারণ করে। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবার পর , দুদেশ রাজনীতি ও অর্থনীতি ক্ষেত্রের মৈত্রী সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক ভালভাবে উন্নয়ন করে এবং উচ্চ পর্যায়ের পারস্পরিক আদানপ্রদানও অব্যাহতভাবে ত্বরান্বিত করে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে চীন ও তান্জানিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মূল্য ৪৭.৪৩ কোটি মার্কিন ডলার ছিলো, যা প্রায় ৬৬.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
|