লি চিনছেং চীনের রেলপথ স্থাপনা কোম্পানির প্রথম অনুসন্ধান ও ডিজাইন একাডেমির সহকারী প্রধান ইঞ্জিনিয়ার। ছিংহাই তিব্বত রেলপথের সবচেয়ে ভালো ডিজাইন পরিকল্পনা খুঁজে বের করার জন্যে তিনি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০০মিটার উচুঁতে অবস্থিত ছিংহাই তিব্বত পথে প্রায় ৫০বার যাওয়া আসা করেন । এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় এক লক্ষ কিলোমিটার । তিনি তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁদের দু'পা দিয়ে "জীবনের জন্য হুমকী এই এলাকায়" পরপর জরীপ করার মাধ্যমে অবশেষে ১১৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ "আকাশ পথ" অর্থাত্ বিশ্বের ছাদে অবস্থিত রেলপথের গতিধারা নির্ধারণ করেন ।
কালো চামড়া, পরিপক্ক চুল এবং বহু বছর বাইরে জরীপ করার জন্যে ৪৪ বছর বয়স্ক লি চিনছেং'র চেহাড়া দেখতে আসল বয়সের চেয়ে বেশী মনে হয় । ১৯৮৪ সালে তিনি কাজে যোগ দেয়ার পর, পরপর চীনের অনেক প্রধান রেলপথের নির্মাণকাজে অংশগ্রহণ করেন ।
২০০০ সালের শুরুতে তত্কালীন প্রথম অনুসন্ধান ডিজাইন একাডেমীর লানচৌ শাখার উপ-প্রধান লি চিনছেং একটি আনন্দদায়ক খবর শুনেন-- কয়েক দশক আগে বন্ধ হওয়া কেরমু থেকে লাসা পর্যন্ত ছিংহাই-তিব্বত রেলপথের নির্মাণকাজ অবিলম্বে শুর হবে । তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে প্রাথমিক জরীপ কাজ চালান এবং এ রেলপথের প্রধান দিক ও পরিকল্পনা নির্ধারণ করেন । আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মনে করেন , এইকাজ সহজভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন না ।
ছিংহাই তিব্বত মালভূমিতে রেলপথ নির্মাণ করার প্রধান সমস্যা হল প্রকল্পের বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব । লিপিবদ্ধ তথ্য না থাকার জন্য তাঁদের জরীপ কাজ শূন্য থেকে শুরু করেন । ২০০০ সালের আগস্ট মাসে লি চিনছেং ৫০০জনেরও বেশী জরীপ কর্মী নিয়ে কেরমু গিয়েছিলেন । পরপর কয়েক মাসে তাঁরা পাহাড় ডিংগিয়ে অদম্য মনোবল নিয়ে নির্মিতব্য "আকাশ পথের" নীল নকশা তৈরি করেন । বিজ্ঞানসম্মত ও যুক্তিযুক্ত তদন্ত আর অনুসন্ধানের মাধ্যমে ছিংহাই -তিব্বত রেলপথের নির্মাণকাজে লি চিনছেং দেশের জন্য ৮০ কোটি ইউযান রেনমিনপি বাঁচিয়ে তুলেন । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫২৩১ মিটার উচুঁতে অবস্থিত থাংকুলা পাহাড়ে রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ বাছাই'র এক গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি । গত শতাব্দীর ৭০দশকে নির্ধারিত এই রেলপথের নির্মাণের দু'টি পরিকল্পনা ছিল । এক. ছিংহাই-তিব্বত সড়কের সঙ্গে সমানতালভাবে নির্মাণ করা ,দুই.ছিংহাই -তিব্বত সড়কের ৩০ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে রেলপথ নির্মাণ করা । এ দু'টো পরিকল্পনার মধ্যে কোনটা আরো ভালো হবে ? শুধু জরীপ তথ্যের মাধ্যমেই তা প্রমাণিত হবে ।
২০০১ সালের আগস্ট মাসে লি চিনছেং তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে থাংকুলা পাহাড়ে প্রবেশ করেন ।সেখানে আবহাওয়া খুবই খারাপ, বৃষ্টি ও তুষার বেশি, লোকেরা সহজেই ঠাণ্ডায় ম্রিয়মান এবং অন্য গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে । এ দলের মধ্যে লি চিনছেং'র বয়স সবচেয়ে বেশী । তাঁর শরীরও ভালো নয় । অতি ক্লান্তির কারণে তিনি তাঁদের জরীপকাজের শেষ দিকে মানুষবিহীন এলাকায় অসার হয়ে পড়েন । অবশেষে সকল কর্মীর প্রচেষ্টায় তাঁকে সুস্থ করে তোলা।
কষ্টকর এই জরীপের মাধ্যমে গ্রহণ করা তথ্য ছিংহাই-তিব্বত রেলপথের লাইন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত হয় । বারবার পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানের মাধ্যমেই ছিংহাই -তিব্বত রেলপথ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০৭২ মিটার উচুঁতে অবস্থিত মানুষবিহীন এলাকা থেকে থাংকুলা পাহাড় অতিক্রম করা সম্ভব হয় । এইভাবে ৫.৭ কিলোমিটার পথ কমিয়ে আনা হয় এবং এতে ৩৭ কোটি ইউয়ান অর্থ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে ।
রেলপথের ডিজাইনে তিনি প্রচেষ্টা চালিয়ে কম ব্যয় করেন । কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে তিনি বিরাট অংকের পুঁজি বিনিয়োগ করেন । ছিংহাই-তিব্বত রেলপথের পরিবেশ সংরক্ষণের মোট ১ বিলিয়ন ৫৪ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি বরাদ্দ করা হয় । আগের কোনো প্রকল্পে এত বিরাট ব্যয় করা হয় নি । বর্তমানে ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ হল চীনের রেলপথ নির্মাণের ইতিহাসে সবুজ পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে চমত্কার প্রতীক ।
চমত্কার অবদান রাখার জন্যে লি চিনছেং চীনের "পয়লা মে" শ্রম পুরস্কার এবং ২০০২ সালে চীনের "চৌঠা মে" যুব পুরস্কার পান ।
|