v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-07-18 21:42:36    
লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণকারী ছেন চে

cri
    গত দশ-বারো বছরে ছেন চে দক্ষিণ- পশ্চিম চীনের সংখ্যালঘু জাতি অধুষিত অঞ্চলে লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণের কাজ করেছেন । তার নিরলস প্রচেষ্টা ক্রমেই সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ।

    লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণের কাজ করার আগে ছেন চে চীনের একজন বিখ্যাত গীতিকার । তার লেখা বেশ কয়েকটি গান গত শতাব্দীর আশিরও নব্বইয়ের দশকে চীনাদের মুখে মুখে ছিল । এই সব গানের মধ্যে আছে ' পৃথিবীকে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করুন ' , ' হলুদ মাটির পাহাড় ' , ' চৌ সি খৌ ' ইত্যাদি।

    ১৯৮৬ সালে বিশ্ব শান্তিবর্ষ উপলক্ষে ছেন চে ' পৃথিবীকে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করুন ' নামে একটি গান রচনা করেছেন । এই গান তখন চীনে দ্রুত জনপ্রিয় হয় । রচয়িতা ছেন চের নামও এই গানের সঙ্গে সমগ্র চীনে ছড়িয়ে পড়ে । নব্বইয়ের দশক থেকে ছেন চে বিভিন্ন স্টাইলের গান লিখতে শুরু করেন , তার লেখা গানগুলো সংগীত মহলের স্বীকৃতি পেয়েছে ।

    সংগীত মহলের স্বীকৃতি ও শ্রোতাদের প্রশংসা পেয়ে ছেন চে বিপুলভাবে অনুপ্রাণিত হন । ছোট বেলায় ছেন চে গীতিকার হতে চান নি । তিনি সাহিত্য পছন্দ করেন । তিনি প্রচুর সাহিত্য পড়েছেন । বিশেষ করে কবিতা পড়ার সময় মনের অনুভূতি গানের কথায় মেশানোর চেষ্টা করেন । তিনি বলেছেন আধুনিক গানের কথাগুলো নাগরিকদের মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে , এটা মানব জাতির মানসিক ভাষা ।

    ছেন চে যে সব গানের কথা লিখেছেন , তার বেশীর ভাগই কবিতা থেকে আসে । তিনি কবিতার লাইন দিয়ে গানের পরিবেশ সৃষ্টি করেন এবং সাহিত্য ও সংগীতের সমন্বয়ের চেষ্টা করেন । কিন্তু গানের কথা রচনায় খ্যাতি লাভের পর ছেন চে এই পথে অগ্রসর হন নি । তিনি তার দৃষ্টি লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণের দিকে ফেলেছেন । দক্ষিণ–পশ্চিম চীনে অনেক সংখ্যালঘু জাতি বাস করে । সেখানকার অধিবাসীদের জীবন এখনও কষ্টকর। ছেন চে জানেন সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি ও নৃত্যসংগীতের প্রাণশক্তি আছে । ১৯৯৪ সালে লোকসংগীত সংগ্রহের জন্য ছেন চে পশ্চিম চীন যাত্রার একটি পরিকল্পনা তৈরী করেন ।

    ' মে মাসের ঝিঁ ঝিঁ পোকা ' নামক গানের সুর ও গায়কের স্বর দুটিই সুন্দর । দশ-বারো বছর আগে কুয়াং সি প্রদেশে সফরের সময় ছেন চে এই গান শুনেছেন । আজকের দিনে এই ধরনের মধুর ও সহজসরল লোকসংগীত কম শোনা যায় । ১৯৯৮ সালে ছেন চে কুয়াং সি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ৯৫ বছরবয়সী এক চুয়াং জাতির বৃদ্ধ ছেন চের জন্য একটি লোকসংগীত গেয়েছেন । এই গান ছেন চেকে মুগ্ধ করেছে। কিন্তু তখন ছেন চের হাতে রেকর্ডিংয়ের সরঞ্জাম ছিল না । এক মাস পর ছেন চে যখন রেকর্ডিংয়ের সরঞ্জাম নিয়ে আবার কুয়াং সি যান , তিনি শুনেছেন সেই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে । এই ঘটনা থেকে ছেন চে লোকসংস্কৃতি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছেন । তখন থেকে তিনি এই ব্রতে আত্মনিয়োগ করতে বদ্ধপরিকর ।

    কিন্তু ছেন চের প্রচেষ্টা শুরুতে সহজ হয় নি । প্রথম দুই বছর তার লোক সংগীত সংগ্রহের প্রচেষ্টা স্থানীয় অধিবাসীর সমর্থন পায় নি । ২০০২ সালে ছেন চে একটি গ্রামে লোকসংগীত সংগ্রহ গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন । কোনো আর্থিক সাহায্য পান নি বলে ছেন চে নিজের খরচে লোকসংগীত সংগ্রহের কাজ করেন। কয়েক মাস পর আর্থিক কারণে ছেন চে বাধ্য হয়ে লোকসংগীত সংগ্রহের কাজ বন্ধ করে দিলেন ।

    ফুমি জাতি ইউননান প্রদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের একটি সংখ্যালঘু জাতি । বতর্মানে এই জাতির লোকসংখ্যা মাত্র ৩০ হাজারের কাছাকাছি । এই জাতির লোকসংগীতও তার লোকসংখ্যার মতো ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে । ছেন চে এই জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে লোকসংগীত সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছেন এবং সাফল্য অর্জন করেছেন । এই জাতির লোকসংগীত , নাচ ও ঐতিহ্যিক হস্তশিল্প যাতে বংশপরম্পরায় সম্প্রসারিত হয় , ছেন চে গ্রামের ছেলেমেয়েদের স্থানীয় লোকসংগীত ও নাচ শিখান । ছেন চে মনে করেন , এর আগে সংখ্যালঘু জাতির লোকসংগীত সংগ্রহের কাজ শুধু সুর ও গান রেকর্ডিং ও গ্রায়ক-গায়িকাদের ছবি তোলায় সীমাবদ্ধ ছিল । কিন্তু ছেন চে আশা করেন সংখ্যালঘুজাতির লোকসংগীত ও নাচ স্থানীয় অধিবাসীদের , বিশেষ করে ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রচার করার মাধ্যমে লোকসংস্কৃতি বংশপরম্পরায় সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা চালানো উচিত । তিনি বলেছেন , সংখ্যালঘু জাতির লোকসংগীত ও নাচ সম্প্রসারণ করা আমার লক্ষ্য । আমি আশা করি সংখ্যালঘু জাতিগুলোর অধিবাসীরা নিজ জাতির বৈশিষ্ট্যময় লোকসংগীত ও নাচকে গুরুত্ব দেবেন এবং মাঝেমধ্যে দশর্কদের মাঝে পরিবেশন করার মাধ্যমে সবাইকে আনন্দ দিতে পারেন । আমরা শুধু সংখ্যালঘু জাতির লোকসংগীতের রেকর্ডিং শুনতে চাই না বা তাদের নাচের ছবি দেখতে চাই না ।

    ২০০৪ সালের শেষ দিকে ছেন চে দক্ষিণ –পশ্চিম চীনের সংখ্যালঘু জাতির দশ-বারোজন শিল্পীকে রাজধানী পেইচিংয়ে নিয়ে আসেন । তারা রাজধানীর সাংস্কৃতিক মঞ্চে দশর্কদের দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের লোকসংস্কৃতি দেখিয়েছেন এবং সমাদর পেয়েছেন । এ বছরের মার্চ মাসে ছেন চে আবার ফু মি জাতির দশ-বারোজন মেয়ে নিয়ে চীনের জাতীয় যাদুঘরের উদ্যোগে আয়োজিত চীনর অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন । এই প্রদশর্নীতে ফুমি জাতির মেয়েরা নিজের জাতীয় পোশাক পরে নিজ জাতির লোকসংগীত গেয়েছেন এবং নাচ পরিবেশন করেছেন । তাদের বৈশিষ্ট্যময় নাচগান রাজধানীর দর্শকদের দৃষ্টি কেড়েছে । ছেন চের সংখ্যালঘু জাতির লোকসংস্কৃতি বাঁচানোর প্রচেষ্টা সফল হয়েছে ।

    ছেন চে বলেছেন , গত দশ বছরে তিনি সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিতপাহাড়ী অঞ্চলে লোকসংস্কৃতি সম্প্রসারণের কাজ করেছেন , কিন্তু গান লেখার কাজ তিনি ছেড়ে দেন নি । এই দশ বছরের অভিজ্ঞতা তার গান রচনাকে সাহায্য করবে । তিনি কাজের ফাঁকে ফাঁকে অনেক গান লিখেছেন । ব্যস্ততার দরুণ এই সব গান প্রকাশ করা হয় নি । তিনি আশা করেন , তার লেখা গানগুলো তার লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণের প্রচেষ্টার মতো শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে ।