v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-07-18 15:30:49    
চীনে বিভিন্ন জাতির চিরস্থায়ী জীবকোষ ভান্ডার প্রতিষ্ঠিত

cri
    শ্রোতাবন্ধুরাঃ গত দশাধিক বছরে চীনের চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে চীনের বিভিন্ন জাতির চিরস্থায়ী জীবকোষ সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের একটি বিরাটাকার ও পূর্ণাংগ ভান্ডার দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশের রাজধানী খুনমিংয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । জীবকোষ ভান্ডার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় চীনে ভবিষ্যতের কয়েক শো বছরে বিভিন্ন জাতির জীন নিয়ে গবেষণার জন্য নমুনা যোগানো হবে । আজ এই অনুষ্ঠানে এই জীবকোষ ভান্ডার সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…

    ছু চিয়া ইউ চীনের চিকিত্সা বিজ্ঞান একাডেমীর জীব বিদ্যা গবেষণাগারের অধ্যক্ষ । এর সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিভিন্ন জাতির চিরস্থায়ী জীবকোষ ভান্ডারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিও । তিনি বলেন যে , চীন জাতিগত সম্পদে সমৃদ্ধ । ৫৬টি জাতির যার যার জাতি অধ্যুষিত অঞ্চল আছে । মানব জাতির উদ্ভব , বংশ বিস্তার প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই সব জাতির নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য আছে । চীনের বিভিন্ন জাতি মানব জাতির বংশ বিস্তারের রকমারিতা নিয়ে গবেষণা করার অফুরন্ত উত্স । সুতরাং এই ধরনের জীবকোষ ভান্ডার গঠন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।

    ভিন্ন ভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতির লোকেরা এক নয় , এবং চিকিত্সার দিক থেকেও তাদের অবস্থা এক নয় ।

    গত কয়েক বছরে সমাজের নিরন্তর অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে কতকগুলো জাতির লোকেরা বাইরের লোকদের সঙ্গে বিয়ে করে অন্যান্য জায়গায় স্থানান্তর করতে শুরু করলেন । ফলে এই সব জাতির অপেক্ষাকৃত নিখুঁত জীন বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে । সুতরাং একটি সংখ্যালঘুজাতির চিরস্থায়ী জীবকোষ ভান্ডার গঠন করায় যেমন চীনসহ বিশ্বের মানব জাতির স্বাস্থ্য, জীন ইত্যাদি নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে মানবজাতির বংশ বিস্তারের বেশ কিছু মূল্যবান সম্পদ বজায় রাখা যাবে , তেমনি তাতে কয়েক বছর পর বিভিন্ন জাতির জীন নিয়ে গবেষণার জন্য নমুনা যোগানো যাবে । প্রফেসর ছু চিয়া ইউ বলেন , এখন মানব জাতির বংশ বিস্তারের বিশেষ বিশেষ তথ্য সংগ্রহ করা আর তা বাঁচানো না গেলে চীনে বিভিন্ন জাতির লোকদের স্ব-বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীন বজায় রাখার সম্ভাবনা হারিয়ে যাবে ।

    বিভিন্ন জাতির চিরস্থায়ী জীবকোষ মানব জাতির রোগ আর কতকগুলো ওষুধের জীন নিয়ে গবেষণা করার একটি অত্যন্ত মূল্যবান তথ্য । এখন এই সব সম্পদ বাঁচানো না গেলে তা সম্ভবতঃ বিলুপ্ত হয়ে যাবে । অর্থাত্ আমাদের বংশ বিস্তারের এই সব সম্পদ রক্ষা করতে হবে , যাতে তার বিলুপ্তি রোধ করা যায় । কিন্তু আমাদের দেশি-বিদেশী সহযোগিতাও ত্বরান্বিত করতে হবে । চীন মানব জাতির বংশ বিস্তারের সম্পদ ব্যবস্থাপনা পূর্ণাঙ্গ করে তোলার প্রচেষ্টাও চালাচ্ছে । আসলে এই ক্ষেত্রে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে ।

    ইয়ুননান প্রদেশের খুনমিংয়ে অবস্থিত চীনের চিকিত্সা একাডেমীর জীববিদ্যা গবেষণাগারের ল্যাবরেটরীতে জীবকোষ ভান্ডার প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত মাদাম হোয়াং সিয়াও ছিং তরল নাইট্রোজেন রিফ্রিজ্যারেটর খুলে দেখালেন । এর ভিতরে সারিবদ্ধভাবে এক সারি বক্স দাঁড়িয়ে আছে । প্রতিটি বক্সে ১০০টি হিমায়িত টিউব আছে । প্রতিটি হিমায়ন টিউবে জীবকোষের নমুনা সংরক্ষিত আছে । টিউবের বাইরে জীবকোষ দানকারীদের নাম , জাতি , সংগ্রহের সময় লেখা আছে । সংবাদদাতা দেখলেন , মাইনাস ১৯৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তরল নাইট্রোজেন রিফ্রজ্যারেটরে আ ছাং জাতির একজন পুরুষের জীবকোষের নমুনা ভাল অবস্থায় সংরক্ষিত আছে । হোয়াং সিয়া ছিং বলেছেন , যাবতীয় জীবকোষের নমুনা চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরের সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে সংগৃহীত হয়েছে । এর মধ্যে বেশির ভাগ অঞ্চল উঁচু পর্বতমালায় অবস্থিত । সংগ্রহের কাজ খুব কষ্টে চলছিল । নমুনা সংগৃহীত হবার পর হিমায়িত ফ্রিজ করা হয়েছে । মিঃ সুং হাও এই সব সংগ্রহকারীর একজন । তিনি চীনের প্রায় সব সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে গিয়েছিলেন । যাদের জীবকোষের নমুনা বাছাই করা হয়েছে , তারা তিন প্রজন্মের মধ্যে অন্য জাতির লোকদের সংগে বিয়ে না করা প্রয়োজন । এই প্রসংগে তিনি আবেগের সংগে বলেছেন ,

    তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক গ্রামবাসী । কেউ কেউ প্রাথমিক স্কুল আর মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রী । তাদের জীবকোষের নক্সা সংগ্রহের আগে তাদের গ্রামের প্রধান আর থানার ক্লিনিক বা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে কাজের লক্ষ্য ও তাত্পর্য প্রচার করা হয় । তার পর ছেলেমেয়েরা বাবা মাকে রাজী করানোর চেষ্টা করে । অনুমতি পেয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের জীবকোষের নমুনা দানের ব্যবস্থা করে ।

    কোন কোন সময় স্থানীয় সংখ্যালঘু জাতির আস্থা পাওয়ার জন্য কর্মীদের গ্রামের প্রধানদের সংগে মদ খেতে হতো । কারণ স্থানীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী , মদ না খেলে বন্ধু নন ।

    সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে লোকেরা উঁচু পর্বতমালায় বাস করেন । হান জাতির লোকদের সংগে তাদের যোগাযোগ নেই , তারা হান ভাষাও বুঝতে পারেন না । কর্মীরা তাদের সংগে আদান প্রদান করতে পারতেন না , তাদের জীবকোষের নমুনা অনুদানে রাজী করানো তো আরো দূরের কথা । ফলে কর্মীরা বাধ্য হয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সংগে যোগাযোগ করতেন । তাদের সাহায্যে গ্রামবাসীদের নমুনা দানে রাজী করানো হতো । সুং হাও ইয়ুননান প্রদেশের সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে নক্সা সংগ্রহের কাজ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে বলেন যে , নক্সার ফলপ্রসূতা সংরক্ষণ করার জন্য তারা দূরের পাহাড়ী অঞ্চল থেকে গাড়িতে করে আর তার পর তাড়াহুড়া করে বিমানযোগে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খুনমিংয়ের পরীক্ষাগারে পৌঁছে দিতেন । তাদের পরিশ্রম অধিকাংশ লোকের সম্মতি আর প্রশংসা পেয়েছে । মান জাতির ছাত্রী ছেং ছাং বলেছে ,

    তাদের এই প্রকল্প সুগভীর তাত্পর্যপূর্ণ । তা আমাদের দেশের জাতিতত্ত্ব , বংশ বিস্তার তত্ত্ব আর জীবন বিজ্ঞান বিকাশের অনুকূল হবে ।

    প্রফেসর ছু চিয়া ইউ বলেন , ২০১০ সালের মধ্যে চীনে ৫৬টি জাতির ৮০ থেকে ১০০টি চিরস্থায়ী জীবকোষ ভান্ডার গড়ে তোলা হবে । তখন পার্কিনসন রোগের মতো দুরারোগ্য রোগ চিকিত্সা করার ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হবে ।