v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-07-14 14:09:13    
হুই জাতির গায়ক সু এর তুং

cri
    শ্রোতাবন্ধুরাঃ 'হুয়া এর' এক ধরণের স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন লোক সংগীত । তা উত্তর-পশ্চিম চীনের হুই জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রচলিত । এই ধরণের লোক সংগীতের কথা উদার , সাদাসিধা আর তা চড়া কন্ঠে পরিবেশন করা হয় । সেজন্য তার সংখ্যালঘু জাতির আর স্থানীয় অসাধারণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান । গত কয়েক বছরে হুই জাতির গায়ক সু এর তুং হুয়া এর নামে এই লোক সংগীতের বিষয় ও পরিবেশনের নৈপুণ্য আরো সম্প্রসারিত করেছেন । ফলে তা জনসাধারণের আরো সমাদর পেয়েছে । এখন হু জাতির লোকদের বিয়ের অনুষ্ঠান আর অন্য ধরনের দাওয়াতে সময় সময় তার কন্ঠে গাওয়া সংগীত শোনা যায় । আজ এই অনুষ্ঠানে হুই জাতির এই গায়ক প্রসংগে আপনাদের কিছু বলছি আমি…

    সু এর তুং উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্ত-শাসিত অঞ্চলের একজন শিক্ষক । তার অবসরকালীন সখ হল গান রচনা আর পরিবেশন করা । গত দশাধিক বছরে ' হুই জাতির লোকেরা' , 'ডালিমের ফুল' ইত্যাদি নামে তার ৫টি ডিস্ক প্রকাশিত হয়েছে । এই সব ডিস্কে এক শো বিশাধিক সংগীত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ।

    সু এর তুং ছোট বেলা থেকে গান গাইতে পছন্দ করেন । বিশ্ববিদ্যালয় পাস করার পর তিনি গান রচনা শুরু করেন । প্রথমে তিনি প্রধাণতঃ কাজাখ ও উইগুর জাতির ছ'টি গান রচনা করেন । পরে একটি প্রীতি-সম্মেলনে সহপাঠীদের প্রভাব ও উত্সাহে তিনি হুই জাতির সংগীত রচনা শুরু করলেন । এই স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন যে ,

    ঐ প্রীতি-সম্মিলনীতে তার একজন বন্ধু তার কাজাখ ও উইগুর জাতির সংগীত রচনা ও পরিবেশনের নৈপূণ্যের খুব প্রশংসা করেন । তিনি হুই জাতির গান রচনা করতেও সু এর তুংকে উত্সাহ দিলেন । তখন আরেকজন সহপাঠী হুই জাতির সংগীতের অস্তিত্ব অস্বীকার করলেন । এতে সু এর তুং খুব কষ্ট পেলেন । তিনি তত্ক্ষনাত্ এই সহপাঠীর কথা খন্ডন করে দিলেন । হুই জাতির সংগীত নেই? 'হুয়া এর' তো হুই জাতির লোক সংগীত । তার সহপাঠী আরো বলেন , হুই জাতির আধুনিক গান নেই , কিন্তু ঐতিহ্যিক হুয়া এর গান বোঝা যায় না ।

    পরে সু এর তুং মনে করেন যে , সহপাঠীর কথার যুক্তিও আছে । জনসাধারণের মনে হু জাতির সংগীত শুধু হুয়া এর আওতায় সীমিত । প্রবীণরা যে হুয়া এর গান করেন , তার সুর ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো একঘেয়ে এবং তা সাধারণতঃ আঞ্চলিক ভাষায় পরিবেশন করা হয় । এই কারণে এই ধরণের গায়ক-গায়িকা আর শ্রোতাদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে ।

    ফলে হুই জাতির সংগীত কেমন করে জনপ্রিয় করে তোলা যায় , সে সম্বন্ধে সু এর তুং ভাবতে শুরু করলেন ।

    অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির সংগীত বিকশিত হচ্ছে । তারা পাশ্চাত্যের সংগীত ও অগ্রণী সংস্কৃতি যার যার জাতির সংস্কৃতির সংগে সংযোগ করেছেন । এর ভিত্তিতে নিজের জাতির সংগীত ও সংস্কৃতি আরো সম্প্রসারিত হয়েছে । তিনিও এই কথা ভেবেছেন যে , হুই জাতির নিজের জনপ্রিয় গানও থাকা উচিত । এই ধরণের প্রণালীর মাধ্যমে নিজের জাতির সংস্কৃতি ও উত্কৃষ্ট ঐতিহ্য সকলের কাছে প্রচার করা যাবে ।

    তখন থেকে সু এর তুং হুই জাতির সংস্কৃতি ও ইতিহাস নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করলেন । অধ্যয়নের মাধ্যমে তিনি আবিষ্কার করলেন যে , চীনের ইতিহাসে যেমন মিন রাজবংশ আমলের নাবিক চেন হো , ছিং রাজবংশ আমলের লেখক ফু সুং লিন আর বর্তমান যুগের বিখ্যাত শিল্পী মা সান লি প্রমুখও হুই জাতির লোক ।

    যদিও এই সব নামকরা লোক দেশ-বিদেশে সুপরিচিত , কিন্তু তারা যে হুই জাতির লোক , তা অনেকে হয়তো জানেন না । এই সব ব্যক্তির নাম প্রচার করার জন্য একজন সংগীতবিদ হিসেবে তিনি একটি গান রচনা করতে চেয়েছেন , যাতে সবাই জানতে পারেন এরা হুই জাতির লোক । সুতরাং তিনি ' হুই জাতির লোকেরা' নামে গান রচনা করেছেন । সু এর তুংয়ের বন্ধু পাও ইয়্যু ছেং বলেছেন , তিনি সু এর তুংয়ের এই গান সবচাইতে পছন্দ করেন ।

    হুই জাতির লোকেরা যে সব পছন্দ বিষয় জানতে চান , সু এর তুং গান গাওয়ার মাধ্যমে তা ব্যক্ত করেন । তার গানের মধ্য দিয়ে পাও ইয়্যু ছেং হুই জাতির ইতিহাস সম্পর্কে বেশ কিছু জানতে পেরেছেন ।

    সু এর তুং সংগীত পছন্দ করেন । কিন্তু তার সংগীত রচনার পথ সোজা নয় । যখন তিনি নিজের খরচে তার প্রথম ক্যাসেট প্রকাশনা করলেন , তখন প্রকাশনার খরচ কমানোর জন্য তিনি তার স্ত্রী ও ছেলের সংগে ক্যাসেট প্যাকিং করলেন । প্রথম দিকে অর্থ অভাবের কারণে প্রচার করা হয় নি বলে বাজারে তার ক্যাসেট বেশি বিক্রি হয় নি । ফলে তিনি নিজেই প্রচারের কাজ করলেন । তিনি যেখানে গেলেন , সেখানে তিনি তার গান গাইলেন । তার একাগ্রচিত্ত আর আবেগ সবাইকে মুগ্ধ করেছে । ধীরে ধীরে ক্রেতারা তার সংগীত ও ক্যাসেট পছন্দ করতে শুরু করলেন । পাও ইয়্যু ছেং সংবাদদাতাকে বলেছেন ,

    তিনি সু এর তুংয়ের সংগে গ্রামাঞ্চলে গিয়েছিলেন । গ্রামবাসীরা তাদের স্বাগত জানাবার জন্য যে মনোজ্ঞ পরিবেশ দেখা দিয়েছে , তাতে তিনি খুব মুগ্ধ হয়েছেন । তিনি কখনো এই ধরনের আবেগ ও অনুভূতি অনুভব করেন নি । হুই জাতির বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা নিবিড়ভাবে তার গাড়ি ঘিরে ধরে । তার গান শুনতে শুনতে তাদের চোখ জলে ভরে যায় । এখন যেমন হুই জাতি , তেমনি উইগুর , কাজাখসহ সিনচিয়াংয়ের অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির লোকেরাও তার গান খুব পছন্দ করেন ।

    জনসাধারণের মধ্যে তার গান যে জনপ্রিয় হয়েছে , তাতে সু এর তুংয়ের গান রচনার উত্সাহ আর আবেগ আরো উদ্বুদ্ধ হয়েছে । কিছু দিন আগে তিনি নিজের খরচে 'হুই জাতির লোকেরা', 'হুই জাতির মেয়েরা', 'প্রিয় জনের ডালিমের ফুল' ইত্যাদি ভি সি ডি প্রস্তুত করেছেন । এখন তার গানগুলো উত্তর-পশ্চিম চীনের অঞ্চলগুলোতে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছে ।

    পেইচিংয়ে হুই জাতির শহরবাসী মা চে লি বলেছেন , তিনি ছাড়া তার ১০ বছর বয়স্ক ছেলেরও সু এর তুংয়ের গান শুনতে খুব ভাল লাগে । কারণ তার গান শুনতে শুধু মধুর লাগে তা নয় , তার উপকারও আছে । তিনি বলেছেন ,

    সু এর তুংয়ের কতকগুলো গানে হুই জাতির পুরানো ঐতিহ্য ও ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে এবং মনুষ্যত্ব, মহাব্রতে নিয়োজিত দৃঢ় সংকল্প , মানুষে মানুষে আদর , পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদি ধারণাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । তিনি মনে করেন , তার গান ইতিবাচক তাত্পর্যপূর্ণ ।

    সু এর তুং আশা করেন যে , তিনি তার গানের মাধ্যমে জনসাধারণের সাংস্কৃতিক জীবন বৈচিত্র্যময় করে তুলবেন । তাদের জন্য গান গাওয়া এবং তাদের কাছ থেকে রচনার আরো বেশি আবেগ পাওয়ার জন্য তিনি তাদের কাছে আরো বেশি সময় যাবেন ।