v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-07-13 22:00:53    
জনগনের বিশ্বস্ত ডেপুটি মেয়র জান চাং রুই

cri
    পঞ্চান্ন বছর বয়েসী মি: জান চাং রুই উত্তর পশ্চিম চীনের সানসি প্রদেশের সিন চৌ শহরের ডেপুটি মেয়র। গত শতাব্দির ষাটের দশকের শেষ দিকে তাঁর জন্ম স্থান পেইচিং ছেড়ে তিনি সানসি প্রদেশে যান । চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে তিরিশ বছর অতিবাহিত হয়েছে । সানসি প্রদেশেই তাঁর সংসার পাতা হয়েছে । কর্মজীবনেও তিনি কৃতার্থ হয়েছেন । তিনি স্থানীয় নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে নিজের বিজ্ঞতা ব্যবহার করে তাঁদের শ্রদ্ধা ও আস্থা পেয়েছেন ।

    ১৯৪৯ সালে পেইচিংয়ের এক সাধারণ শ্রমিক পরিবারে জান চাং রুইয়ের জন্ম । গত শতাব্দির ষাটের দশকের শেষ দিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে বিশ বছর বয়সের জান চাং রুই পেইচিং ছেড়ে সানসি প্রদেশের গ্রামঞ্চলে গিয়ে কৃষিকাজ করতে শুরু করেন ।

    তখন গোটা চীন সমৃদ্ধ ছিল না। শহরে বড় হওয়া জান চাং রুই পল্লিগ্রামের দারিদ্র্য দেখে রীতিমত মর্মাহত হন । তিনি মনে মনে সংকল্প নিলেন, তিনি কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন । তিনি গ্রামবাসীদের সামনে বর্হিবিশ্বের চিত্র বর্ণনা করে তাঁদের দৃষ্টি দূরবিসর্পিত করেন । মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তিনি যে জ্ঞান অর্জন করেছেন কৃষকদের তার ভাগ দেন । তাঁর বাসনা : জ্ঞানের আলোকে কৃষকদের খাদ্যশস্য উত্পাদন বাড়বে ।তখন সেখানকার অনুর্বর জমিতে শুধু একপ্রকার শস্য চাষ করা হত , খাদ্যশস্যের জাত সেকেলে , শস্যের প্রক্রিয়াকরণ অনুন্নত । তাই তিনি মহুকুমা সরকারের কাছে খাদ্যশস্যের উন্নত জাত ব্যবহার করে পার্শ্ববৃত্তি প্রসারের প্রস্তাব উত্থাপন করলেন।

    তিনি বলেছেন ,তখন কৃষি উত্পাদন একেবারে প্রকৃতির মর্জির উপরে নির্ভর করত । বীজ বপনের পর প্রয়োজনীয় সার না দেয়ায় শস্যের গাছ ভালো করে বৃদ্ধি পেত না । তাই আমি উন্নত জাতের বীজ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছি । জেলা সরকার আমার প্রস্তাবকে গুরুত দেয় এবং আমাদের মহকুমায় বিশেষভাবে একটি সভা ডাকে । এই সভায় আমি বলেছি , ছোলার চাষ করে ভালো ফলন না হলে আমরা সয়াবীনের চাষ করব , সয়াবীনের ফলন আশানুরুপ না হলে চীনা আলু চাষ করব । আমাদের পাহাড়ী এলাকায় খরগোশ ও ভেড়া পালন করলেও কৃষকদের আয় বাড়ানো যায় ।

    জান চাং রুই ও স্থানীয় কৃষকদের মিলিত প্রচেষ্টায় অনতিকাল পরেই গ্রামীন অর্থনীতির চেহারা পাল্টে গেল । কৃষকদের প্রতিদিনের রোজগার কয়েক ডজন ফেন থেকে বেড়ে এক ইউয়ানে দাঁড়াল ।

    পরবর্তীকালে জান চাং রুইয়ের পদোন্নতি ঘটে । জেলা ও বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ার পরও তিনি আগের মত স্থানীয় কৃষকদের জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করেন । উদাহরন স্বরুপ বলা যায় , তিনি তবলা ও বাঁশি বাজাতে জানেন , নাচও করতে পারেন , তিনি গাঁথা , নৃত্যনাট্য ও স্থানীয় অপেরার সমন্বয়ে গ্রামবাসীদের দৈনন্দিন জীবনকে সুন্দরভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রতিফলিত করেন । বিভাগের শ্রম অধিদফতরের অনুরোধে তিনি কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করেন । একহাজারেরও বেশী শ্রমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজকর্মের দক্ষতা বাড়িয়ে কলকারখানায় চাকরি পেয়েছেন । বিভাগের বাণিজ্য ও শিল্প অধিদফতরের উপপরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণের পর তিনি দৃঢ়ভাবে ভেজাল ও নকল পন্য চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্হা গ্রহণ করেন । ফলে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যব্যবহার্য পন্যদৃব্য নিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের আর কোনো মাথাব্যথা নেই ।

    তিনি সর্বান্তকরণে জনগনের জন্য যা করেছেন তা সিন চৌর নাগরিকদের মনে গভীর দাগ কেটেছে। তিনি ক্রমশই হয়েছেন তাঁদের শ্রদ্ধার পাত্র। ২০০১ সালে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সিন চৌ শহরের ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন ।

    ডেপুটি মেয়রের দায়িত্বভার যে কত কঠিন জান ছাং রুই তা স্পষ্টই জানেন ।কাজেই তিনি নিজের প্রতি আরো কঠোর হয়ে উঠলেন ।

    তিনি বলেছেন , আমি মনে করি ,একজন কর্মনিষ্ঠ ডেপুটি মেয়র , বিশেষ করে জনগণের পছন্দসই ডেপুটি মেয়র হওয়া সহজ নয় । মেয়রের সহযোগী হিসেবে আমাকে সবসময়ে জনগণের কথা মনে রেখে জনগণের স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে । এ ছাড়া নতুন জ্ঞান অর্জন করে সমস্যা বিশ্লেষণ ও সমস্যা সুরাহার সামর্থ্য বৃদ্ধি করতে হবে ।

    জান চাং রুই স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভুমিকাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন । তিনি সিন চৌয়ের প্রযুক্তি বাগান নির্মান ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাফল্যকে শিল্পজাত পন্যে রুপান্তরের ব্যাপারে কঠোর পরিশ্রম করেছেন । এই প্রসংগে সিন চৌশহরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অধিদফতরের পরিচালক জাং সিয়ান ফেং সি আর আইয়ের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন : অতীতে সিন চৌ এলাকায় কোনো হাইটেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল না । গত বছর থেকে ছ'টি হাইটেক কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে । ডেপুটি মেয়র জান চাং রুইয়ের নির্দেশে কৃষি বিজ্ঞান বাগানে কিছু শস্যের নতুন জাত ও নতুন প্রযুক্তি আমদানি করা হয়েছে । পরীক্ষা- ক্ষেত্রে শস্যের নতুন জাত ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর সিন চৌয়ের গ্রামাঞ্চলে তা প্রচলিত করা হয়েছে । ডেপুটি মেয়র জান চাং রুই মাঝে মাঝে পল্লিগ্রামে গিয়ে নতুন সমস্যার সমাধানে প্রকৌশলীদের সাহায্য করেন ।

    পরিচালক জাং সিয়ান ফেং আরো বলেছেন , বৈজ্ঞানিক গবেষণাখাতে অর্থবরাদ্দ অপ্রতুল হলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে জান ছাং রুই কখনো সংকোচ বোধ করেন নি । আধুনিক প্রযুক্তির সুবাদে সিনচৌ শহরের অর্থনৈতিক বিকাশের গতি দ্রুত হয়েছে । গত বছরে সিনচৌ শহরের মাথাপিছু আয় পাঁচ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে ।

    কর্মজীবনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করলেও ডেপুটি মেয়র জান ছাং রুইর মধ্যে বড় কর্তাসুলভ অহমিকার লক্ষণ নেই ।তাঁর অফিসের কর্মী লাংই বলেছেন : ডেপুটি মেয়র হওয়ার পর জান ছাং রুই আগের মতই অমায়িক ও দয়ালু , তার সরল কর্মরীতি অপরিবর্তিত ।

    সিনচৌয়ের জনগণের চোখে জান ছাং রুই তাঁদের বিশ্বস্ত সেবক।