v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-07-11 15:51:52    
৩০০ অনাথ ও তাদের মা

cri
    মধ্য চীনের আনহুই প্রদেশের ফু ইয়াং শহরে কিছু ছেলেমেয়ে আছে । তাদের বাবা ও মা এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে তারা নিসঙ্গ ও অনাথ হয়ে গেছে । ছোটবেলা থেকেই তারা জীবনের দু:খ-দুর্দশা ভোগ করছে এবং নিসঙ্গতা বোধ করছে । একদিন তাদের ডাকে মার আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে এসব ছেলেমেয়ের ধুসর আকাশে রং দেখা দিতে শুরু করে । আজকের অনুষ্ঠানে ৩০০ অনাথ ও একজন মার কাহিনী শোনাচ্ছি আমি শি চিং উ ।

    যে মেয়েটি গান করছে, তার নাম নান নান । তার বয়স ১৬ বছর । ৪ বছর আগে তার বাবা ও মা এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় সে অনাথ হয়ে গেল । আরো বেদনাদায়ক ব্যাপার হলো, তার মার কারণে নান নানও এইডস রোগে আক্রান্ত হলো ।

    যখন নান নানের অবস্থা অসহায় ছিল , তখন চাং ইং নামক একজন মহিলার সঙ্গে তার পরিচয় হল । চাং ইংয়ের বয়স ৩৭ বছর । দশ বারো বছর আগে তিনি ফু ইয়াং শহরে তৈরি পোশাক ও রেস্তোরাঁর ব্যবসা শুরু করেন । কঠোর পরিশ্রম ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধির কারণে ব্যবসার ক্ষেত্রে ফুইয়াং শহরে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন ।

    ২০০৩ সালের শরত্কালের এক সন্ধ্যায় হঠাত করেই চাং ইং নান নানকে দেখলেন । তখন নান নান রোগের তীব্র ব্যাথায় মাটিতে মাথা নিচু করে বসেছিল । নান নানের সেই করুণ অবস্থা গভীরভাবে চাং ইংকে আবেগাপ্লুত করেছে । তিনি বলেছেন ,

    তখন সবেমাত্র আমি মা হয়েছি । আমার মনে হয় , মেয়েটি খুবই ছোট , হঠাত নিজের আপনজনকে হারিয়েছে । এটা সত্যিই বেদনাদায়ক । এইডস রোগেও আক্রান্ত হয়েছে বলে সে স্কুলেও যেতে পারছে না । আমার মনে হয় , মেয়েটিকে সাহায্য করা দরকার ।

    পরের দিন চাং ইং নান নানের জন্যে একটি উলের কাপড় ও একটি তুলোর কোর্ট সহ এনে দিলেন এবং তার কাছে অনেক কেক পাঠালেন । যাওয়ার আগে তিনি নান নানের কাছে ৩০০ ইউয়ান টাকা দিয়ে গেলেন । অথচ বাড়িতে ফিরেও চাং ইং উদ্বিগ্ন ছিলেন । তাঁর মনে সবসময় নান নানের সেই চিকন শরীর ও করুণাময় মুখ ভেসে ওঠে । চাং ইং নান নানকে পেইচিংয়ে নিয়ে গিয়ে তার চিকিত্সা করার সিদ্ধান্ত নিলেন । তিনি বলেছেন ,

    তখন বসন্ত উত্সব আসতে আরো ৪ , ৫ দিন বাকী । টিকিট কাটা মুস্কিল । পেইচিং রেলস্টেশন পৌছে আমরা সরাসরি হাসপাতালে গেলাম । হাসপাতালে আমি অনেক দৌড়াদৌড়ি করলাম এবং নান নানের খাওয়ার ব্যবস্থা করলাম ।

    ২০০৩ সালের শেষ নাগাদ চাং ইং তার আশেপাশের লোকদের পরামর্শ উপেক্ষা করে বিনাদ্বিধায় লাখ লাখ ইউয়ান মূল্যের ব্যবসা পরিত্যাগ করে এইডস আক্রান্ত গরীব শিশুদের ত্রাণ সমিতি গঠন করেন । তখন থেকে তিনি মনেপ্রাণে অনাথদের ত্রাণকাজে আত্মনিয়োগ করতে শুরু করেন ।

    এই সমিতি প্রতিষ্ঠার গোড়ার দিকে যেসব অনাথ শিশু সাহায্য পেয়েছে , হোয়াং চিন হুং ও হোয়াং চিন লেই ভাইবোন তাদের অন্যতম । বোন চিন হুং বলেছে,

    বাবা ও মা মারা যাওয়ার পর অন্যরা আমাদের সঙ্গে খেলা করতো না । আমরা অত্যন্ত নিসঙ্গ অবস্থায় ছিলাম ।

    চিন লেই বলেছে, আমাদের প্রতিবেশীরা তাদের দরজাকে বন্ধ করে দিতেন । তারা আমাদের তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে দিতেন না । আমরা কাঁদতেও সাহস করতাম না । কেন না , আমরা কাঁদলে আমাদের নানী ব্যথিত হবেন ।

    তাদের অবস্থা জেনে চাং ইং পর পর পাঁচবার তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের দেখতে গেলেন । প্রতিবার তিনি বহু জিনিস নিয়ে যান । তার পাশাপাশি তিনি অন্য অনার্থদেরও সাহায্য করে থাকেন ।

    অথচ এসব অনার্থের সঙ্গে মেলামেশার সময়ে তিনি টের পেলেন , কেবল জীবনযাত্রার দিক থেকে তাদের সাহায্য করলে যথেষ্ট নয় । এসব ছেলেমেয়ের মধ্যে অনেকেই কথা বলতে চায় না । লেখাপড়াও তাদের তেমন ভালো নয় । তাদের সঙ্গে কথাবার্তার সময়ে তারা প্রায়সই কাঁদতে থাকে । তিনি মনে করেন , এসব ছেলেমেয়ের মানসিক ভার খুবই ভারী । সত্যিকারভাবে তাদের সাহায্য করার জন্যে তাদের মনের ভেতর প্রবেশ করতে হবে ।

    ২০০৪ সালের গ্রীষ্মকালে চাং ইং ৩০জন অনাথকে ভ্রমণে নিয়ে গেলেন । ভ্রমণকালীন সময়ে এ সব অনাথ ছেলেমেয়ে আবার তাদের শিশুমনে আনন্দ অনুভব করেছে । তাদের অনেকের মনও আস্তে আস্তে খুলেছে । এভাবে চাং ইং ও এসব ছেলেমেয়ের মনের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে ।

    অনাথ হোয়াং চিন লেই বলেছে, সেই ভ্রমণ খুবই চিত্তাকর্ষক । আমরা মার কাছ থেকে স্নেহ মমতা পেয়েছি । আগে আমি খুব কম কথা বলতাম। এখন আমি বেশি কথা বলতে পারি এবং অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলাধূলা করতেও পছন্দ করি ।

    এ পর্যন্ত মোট তিন শ'রও বেশি অনাথ শিশু চাং ইংয়ের কাছ থেকে সাহায্য লাভ করেছে । স্নেহসূলভসাহায্য পাওয়ায় ছেলেমেয়েরা চাং ইংয়ের প্রতি গভীরভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । তারা স্নেহের সঙ্গে তাকে মা বলে ডাকতে শুরু করে । তারা তাদের ছোট হাত দিয়ে নানা ধরণের উপহার তৈরি করে মাকে উপহার দেয় । কেউ ছবি এঁকে , আবার কেউ কাগজ কেটে এসব উপহার তৈরি করে । এসব অনাথ চাং ইংকে তাদের আপন মা মনে করে এবং তাকে একজন আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে গ্রহণ করে ।

    চাং ইংয়ের নিজের ছেলের বয়স ৪ বছর মাত্র । তিনি সবসময় বাইরে ব্যস্ত থাকেন বলে তিনি মনে করেন যে, তিনি নিজের ছেলের কাছে ঋণী । তিনি বলেছেন , অবসর পেলে আমি আমার ছেলের সঙ্গে থাকতে পারি । আমার মনে হয় , এসব ছেলেমেয়ের কোনো আপনজন নেই । তারা আমাকে তাদের মা বলে মনে করে এবং আমাকে তাদের সবচেয়ে আপনজন বলে মনে করে । তাদের অসুখ বা কোনো অসুবিধা হলে আমি নিশ্চয়ই তাদের দেখাশুনা করতে যাবো।

    গত অক্টোবর মাসে আনহুয়ে প্রদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে চাং ইং চীনের দশজন গণ কল্যানে দশজন শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তিত্বের একজন নির্বাচিত হয়েছেন । তার কাহিনী চীনের পত্রপত্রিকায় ফলাওভাবে প্রকাশিত হয়েছে । অসংখ্য লোক ৩০০ অনাথের মার কাহিনী জানতে পেরেছেন । তারা সবাই তার আচরণে মুগ্ধ হয়েছেন । পেইচিংবাসী মিস লি ছিয়ান বলেছেন ,

    আমি চাং ইংয়ের সাহস ও প্রত্যয়ে মুগ্ধ । তিনি আমাদের সমাজের জন্যে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ।