চীনে এখন মোট ৬ হাজারটি ওষুধ উত্পাদিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে, তা বিশ্বের প্রথম। কিন্তু নতুন ওষুধ গবেষণার শক্তি তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। চীনের নিজের নতুন ওষুধ গবেষণার মান উন্নত করার জন্য সম্প্রতি চীনে ধারাবহিক উত্সাহী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনের জাতীয় খাদ্য ও ওষুধ তত্ত্বাবধান ব্যুরো প্রতি বছরে শুধু কয়েক দশকের নতুন ওষুধের আবেদন পত্র পায়। চীনে ওষুধ উত্পাদনের পরিমান বেড়েছে কিন্তু নিজের গবেষণায় নতুন ওষুধ খুব কম। চীনের বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের গ্রাম ও সমাজ উন্নয়ন বিভাগের ওষুধ বিষয়ের পরিচালক ইয়াং জা বলেছেন,
"বর্তমানে চীনে উত্পাদিত ওষুধের মধ্যে ৯৭ শতাংশ হলো বিদেশের ওষুধের অনুকরণ। প্রধানত এক রকম ওষুধ উদ্ভাবিত হওয়ার পর দশ বছরের পরে আমরা এই রকম ওষুধ অনুকরণ করি।"
কেন নতুন ওষুধের গবেষণা এত কঠিন? সাধারণত এক রকম নতুন ওষুধের গবেষণা ৮ থেকে ১০ বছর লাগে এবং প্রায় কয়েক দশক কোটি মার্কিন ডলারের খরচ হয়। গবেষণার প্রক্রিয়া এত কঠিন হলেও ওষুধ বাজারে প্রবেশ হওয়ার পর ভালো ফলাফল পাওয়া মুশকিল। ১০ ভাগের ৯ ভাগ গবেষণা পরিকল্পনা বাজারে প্রবেশ হওয়ার আগে স্থগিত হলো।
কয়েক দশক আগে চীনের ওষুধ উত্পাদন শিল্পের উন্নয়ন শুরু হয়। তা বিদেশের কিছু ঐতিহ্যিক ওষুধ উত্পাদন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় আকার, পুঁজি ও প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রের পার্থক্য আছে। তাদের উত্সাহ দেয়ার জন্য চীন সরকার ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রথমে চীন সরকার নতুন ওষুধ গবেষণায় দেয়া বরাদ্দ বাড়িয়েছে। অনেক বড় বড় আন্তর্জাতিক ওষুধ শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিজের গবেষণা কেন্দ্র আছে। কিন্তু চীনে এই কাজ প্রধানত কিছু গবেষণাগার বা একাডেমির দায়িত্ব। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের গ্রাম ও সমাজ উন্নয়ন বিভাগের উপ-পরিচালক সুন হোং বলেছেন:
"গত পাঁচ বছরে আমাদের বিভাগ থেকে ওষুধ গবেষণার জন্য প্রায় ৯০ কোটি ইউয়ানের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর মাধ্যমে অন্যান্য কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পুঁজি বিনিয়োগের উত্সাহ দেয়া হয়েছে।"
তাছাড়া, চীন সরকার খাজনা ক্ষেত্রের সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ওষুধ গবেষণা উত্সাহ দেয়।
চীনের সরকারের সাহায্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো নতুন ওষুধ গবেষণায় অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। চীনের বৃহত্তম ওষুধ উত্পাদন গোষ্ঠীর, শাংহাই ওষুধ গোষ্ঠীর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় নিজের গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। সম্প্রতি জাপানের একটি কোম্পানির সঙ্গে ওষুধ গবেষণা সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কুয়াং চৌ ওষুধ গোষ্ঠীর সাম্প্রতি তিন বছরে গবেষণা ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করেছে, তা তার আয়ের ৭ শতাংশ দখল করেছে। তাছাড়া, কিছু ছোট ও মাঝালি আকারের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওষুধ গবেষণায় চীনের সরকারের সমর্থন পেয়েছে।
ওষুধ গবেষণা ক্ষেত্রে চীনের নিজের বৈশিষ্টময় সম্পদ আছে, তা হলো চীনের ঐতিহ্যিক ওষুধ। এক পক্ষে ঐতিহ্যিক ওষুধের মধ্য থেকে কিছু ওষুধ উত্পাদনের মাল পাওয়া যায়। অন্য পক্ষে ঐতিহ্যিক ওষুধ ব্যবস্থা থেকে কিছু নতুন ভাবনা আবিষ্কার করা যায়।
চীনের নিজের গবেষণার ওষুধ আর্টিমিসিনিন হলো ঐতিহ্যিক ওষুধ থেকে আবিষ্কারিত ওষুধ। এই রকম ওষুধ কার্যকর, দ্রুতভাবে ম্যালেরিয়া জ্বর চিকিত্সা করতে পারে। তা হলো বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়া জ্বর চিকিত্সা ক্ষেত্রের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। শাংহাই ফু সিং গোষ্ঠীরের উপ-পরিচালক ছেন ছি ইয়ু বলেছেন, কিছু ওষুধ খেলে তার কার্যকর আস্তে আস্তেহারিয়ে যায়। আর্টিমিসিনিন তাদের স্থানান্তরিক করেছে। তিনি বলেছেন:
"আফ্রিকা দেশে পুরোনো ওষুধ এখন তার ম্যালিরিয়া চিকিত্সা করার ভূমিকা হারিয়ে গেছে। তা খেলে সাধারণ পাউডারের মতো কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে না। তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের আর্টিমিসিনিন সুপারিশ করে। তা আমাদের জন্য একটি সুযোগ। তা হলো আমাদের দেশ ওষুধ গবেষণার শুরু।"
|